শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

গীবত করা মারাত্মক গুনাহ

মো. আবদুর রহমান:
গিবত আরবি শব্দ। এর অর্থ পরনিন্দা করা, কুৎসা রটানো, বদনাম করা, পেছনে সমালোচনা করা, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষত্রুটি অন্যের কাছে প্রকাশ করা ইত্যাদি। গিবত শুধু মুখের ভাষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি বাচনিক কিংবা লেখনীর মাধ্যমে অথবা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো উপায়েও হতে পারে। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে গিবত খুবই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ এবং এটি কবিরা গুনাহ। অথচ এ মন্দ অভ্যাস বর্তমানে অধিকাংশ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কী জানো গিবত কাকে বলে? সাহাবিরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, গিবত হলো তোমার কোনো ভাই সম্পর্কে তার অনুপস্থিতিতে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে এটিও কী গিবত হবে? উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন, তুমি যা বলো তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাহলেই সেটি গিবত হবে। আর তুমি যা বলো, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে সেটি হবে মিথ্যা অপবাদ।’ (সহিহ মুসলিম ২৫৮৯)

মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার শামিল : পবিত্র কোরআনে গিবতকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অধিকসংখ্যক অনুমান থেকে বিরত থাকো। কেননা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুমান পাপের কারণ হয়ে থাকে। আর তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অন্যের পশ্চাতে গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কী তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করে? বস্তুত তোমরা তো তা ঘৃণাই করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজুরাত ১২)

গিবত ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক : হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, গিবত ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটি কীভাবে হয়? তিনি বললেন, কোনো ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে আল্লাহ তা কবুল করলে সে ক্ষমা লাভ করতে পারে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি গিবত করলে, যার গিবত করা হয়েছে সে ক্ষমা না করলে আল্লাহও তাকে ক্ষমা করবেন না।’ (বায়হাকি : ৫/৩০৬)

মৃত ব্যক্তির গিবত করা হারাম : জীবিত ব্যক্তির গিবত করা যেমন হারাম, তেমনি মৃত ব্যক্তির গিবত ও তার দোষ চর্চা করাও হারাম। হজরত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মৃত্যুবরণ করে তখন তাকে তার অবস্থার ওপরই ছেড়ে দাও। কোনো অবস্থাতেই নিজেকে তার গিবত ও দোষচর্চায় লিপ্ত করো না। মৃতদের গালমন্দ করো না। কেননা এখন তারা তাদের কর্মফল ভোগ করছে।’

গিবতকারীর শাস্তি : গিবতের কারণে গিবতকারীকে কবরে শাস্তি দেওয়া হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং বললেন, এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তবে তাদের তেমন কোনো বড় অপরাধের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু পরকালের বিবেচনায় তা বড় অপরাধ। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে গিবত করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে পেশাব করে উত্তমরূপে পবিত্র না হওয়ার কারণে।’ (সহিহ বোখারি ১৩৫৮) এ হাদিসে বোঝানো হয়েছে, এ দুটি অপরাধ ক্ষুদ্র এ হিসেবে যে, এটা থেকে বেঁচে থাকা খুব কঠিন বিষয় ছিল না। কিন্তু এর শাস্তি অনেক বড়, যা কবরেই শুরু হয়ে গেছে।

প্রকৃতপক্ষে গিবত নিজের জন্য শুধু ক্ষতি ও ধ্বংসই ডেকে আনে। আর যার গিবত করা হয় তার জন্য ডেকে আনে কল্যাণ ও পরকালীন মঙ্গল। গিবতকারীর মুখের উচ্চারিত কথা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লেখার জন্য তার কাছে সর্বদা প্রহরী প্রস্তুত রয়েছে।’ (সুরা কাফ ১৮)

সুতরাং আমাদের আদর্শ মানুষ হতে হলে গিবতের মতো মন্দ কথা বলা ও শোনা থেকে সর্বাবস্থায় মুক্ত থাকতে হবে। কারণ কোনো অবস্থাতেই গিবত করা বৈধ নয়। কেউ যদি গিবত করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর যার গিবত করা হয়েছে, তার কাছ থেকেও ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে তার গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করতে হবে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘গিবতের কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হলো এই যে, তুমি যার গিবত করেছো তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। তুমি এভাবে দোয়া করবে যে, হে আল্লাহ! আপনি আমার ও তার গুনাহ মাফ করে দিন।’ (বায়হাকি) আসুন আমরা গিবতের মতো সামাজিক অপরাধ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখি এবং এর ভয়াবহ পরিণতি থেকে সমাজকে রক্ষা করি।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION