মঙ্গলবার, ০১ Jul ২০২৫, ০৪:২৬ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সেখানে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩৯ জনের নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে গতকাল ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাবালিয়ায় ট্যাংক হামলায় প্রাণ হারিয়েছে তাদের পাঁচ সেনাসদস্য। ওই ঘটনায় আহত হয়েছে আরও সাতজন। যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে গতকালও নিজের মন্ত্রিসভার এক সদস্যের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজা নিয়ে সঠিক কোনো পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যর্থতার জন্য নেতানিয়াহুর দিকে আক্রমণ শানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। তিনি বলেন, অক্টোবর থেকে, আমি মন্ত্রিসভায় এ বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে উত্থাপন করছি এবং কোনো সাড়া পাইনি। একই সঙ্গে গাজায় বেসামরিক ও সামরিক শাসন করার কোনো পরিকল্পনা ইসরায়েলের নেই বলেও নেতানিয়াহুকে জনসমক্ষে ঘোষণা করার জন্য অনুরোধ করেছেন গ্যালান্ট।
আলজাজিরা জানাচ্ছে, জাবালিয়ায় ট্যাংক হামলায় যেসব ইসরায়েলি সেনা হতাহত হয়েছে, তারা সবাই প্যারাট্রুপার্স ব্রিগেডের ২০২ নম্বর ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিল। তাদের ওপর ভুল করে ট্যাংক হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্যারাট্রুপারদের সঙ্গে জাবালিয়ায় হামলা চালাতে গিয়েছিল ট্যাংক বহর। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটি ভবনকে লক্ষ্য করে ট্যাংক থেকে দুটি গোলা ছোড়া হয়। ট্যাংক সেনারা ভেবেছিল ভবনের ভেতর ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা আছে। কিন্তু আসলে ছিল ইসরায়েলি সেনারাই।
আলজাজিরা বলছে, ট্যাংক বহরের সেনারা সেখানে ট্যাংক নিয়ে ভোরের দিকে গিয়েছিল। আর প্যারাট্রুপাররা এর দুই ঘণ্টা পর সেখানে পৌঁছেছিল। সেখানে গিয়ে প্যারাট্রুপাররা ওই ভবনে অবস্থান নিয়েছিল। এরপর সন্ধ্যার দিকে ওই এলাকায় প্যারাট্রুপারদের আরেকটি দল যায়। ওই সময় তারা ট্যাংক সেনাদের জানিয়েছিল, তারা ভবনটিতে প্রবেশ করছে। এর কিছুক্ষণ পর ট্যাংকবহরের সেনারা ভবনটির একটি জানালা থেকে বন্দুকের নল দেখতে পায়। তারা ভেবেছিল এতে হামাসের যোদ্ধারা রয়েছে। ওই ভাবনা থেকে ভবনটিতে দুটি গোলা ছোড়া হয়। এতেই এত বড় হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা আরও তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের আরেক কর্মকর্তা। মূলত গাজা নিয়ে মতবিরোধের জেরে প্রকাশ্যেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদত্যাগ করা ওই কর্মকর্তার নাম লিলি গ্রিনবার্গ কল। তিনি মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের চিফ অব স্টাফের বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। লিলি গ্রিনবার্গ তার পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, তিনি তার বিবেক ও বিচারবুদ্ধিকে সঙ্গে নিয়ে এ প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করা চালিয়ে যেতে পারেন না।
আলজাজিরা বলছে, লিলি গ্রিনবার্গ কল নিজেও একজন ইহুদি এবং গত বছর অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেসব মন্তব্য করেছেন, তারও নিন্দা করেছেন তিনি। এমনকি ইসরায়েলের অস্তিত্ব ছাড়া ‘বিশ্বে একজন ইহুদিও নিরাপদ থাকবে না’ বলে বাইডেন যে মন্তব্য করেছিলেন, তারও নিন্দা করেছেন সদ্য পদত্যাগ করা এ মার্কিন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘তিনি (বাইডেন) ইহুদিদের আমেরিকান যুদ্ধযন্ত্রের মুখ বানাচ্ছেন এবং এটি খুব গভীরভাবে ভুল পদক্ষেপ।’
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতির প্রতিবাদে মার্কিন কর্মকর্তাদের পদত্যাগের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। গত বছর ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে সাবেক একজন মার্কিন সেনা কর্মকর্তাসহ বাইডেন প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং নিয়োগপ্রাপ্তরা যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতির বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে পদত্যাগ করেছেন।
এসব ঘটনার মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজার অতি ঘনবসতিপূর্ণ রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে চাপ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকার করা এক আবেদনের ওপর দুদিনের শুনানি শুরু করেছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত। গত শুক্রবার এ আবেদন করা হয়েছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিকতম আগ্রাসন নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার পর চতুর্থবারের মতো আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) জরুরি পদক্ষেপ চেয়ে আবেদন করল দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির অভিযোগ, গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে সামরিক পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে, সেটি গণহত্যার শামিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ আবেদনে বলা হয়েছে, হেগভিত্তিক এ আদালতের এর আগে দেওয়া প্রাথমিক নির্দেশ ‘গাজার মানুষের অবশিষ্ট একমাত্র আশ্রয়স্থলটিতে ইসরায়েলের নৃশংস সামরিক হামলা’ প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাফায় ইসরায়েলি অভিযান মানবিক সহায়তা ও মৌলিক পরিষেবা, ফিলিস্তিনি চিকিৎসাব্যবস্থা টিকে থাকা ও ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে চরম ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। আবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা কনভেশন ক্রমাগত লঙ্ঘন করার অভিযোগও করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে ইসরায়েলের গণহত্যার ওপর আইসিজেতে শুনানি চলাকালে দেশটি এ অভিযোগ দৃঢ়ভাবে নাকচ করে দেয়। দেশটির দাবি, গাজার বেসামরিক লোকজনদের রক্ষায় তারা সম্ভব সবকিছু করছে এবং একমাত্র হামাস যোদ্ধাদের নিশানা করছে। আর গণহত্যার অভিযোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা যে বিচার চেয়েছে, তার নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল।
ভয়েস/আআ