শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৫ অপরাহ্ন
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ:
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও শিক্ষা পূরণে ইসলামের ভূমিকা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ। শরীর ও মন সুস্থ থাকার নামই স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে মহান আল্লাহ চিকিৎসার নানা বিষয়ের দ্বার উন্মুক্ত করেছেন। আর সুস্থতা প্রত্যেক মানুষের কাম্য। সুস্থতা ও অসুস্থতা মানুষের জীবনেরই অনুষঙ্গ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক কল্যাণকর এবং আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। আর যা তোমাকে উপকৃত করবে, সেটিই কামনা করো।’ (সহিহ মুসলিম)
ইবাদতের জন্য প্রয়োজন সুস্থতা, শক্তি ও সামর্থ্য। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা মহান আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। রাসুল (সা.) পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর আগে সেগুলোর মূল্যায়ন করার কথা বলেছেন। এর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা। তিনি বলেছেন, ‘পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিস আসার আগে গনিমতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করো। সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার আগে, অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে, যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্য আসার আগে এবং জীবনকে মৃত্যু আসার আগে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা) স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে। সেগুলো তুলে ধরা হলো।
দাঁতের যতœ : সুস্থতার জন্য দাঁত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার রাখা, দাঁতের ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করতে সচেষ্ট থাকা জরুরি। রাসুল (সা.) নিয়মিত দাঁতের যতœ নিতেন। দাঁত যতেœর প্রক্রিয়ায় গাছের শিকড়জাতীয় মিসওয়াক ছিল রাসুল (সা.)-এর একমাত্র মাধ্যম। তিনি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়মিত মিসওয়াক করতেন। রাসুল (সা.) রাত-দিনের যখনই ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন অজুর আগে মিসওয়াক করে নিতেন। (আবু দাউদ)
শরীরচর্চা : সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরচর্চার বিকল্প নেই। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের নির্দেশনা অনুযায়ী শারীরিক সুস্থতার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো হাঁটা ও শরীরচর্চা করা। রাসুল (সা.) ১৪০০ বছর আগে এ বিষয়ে উম্মতকে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে দ্রুত চলতে আর কোনো ব্যক্তিকে দেখিনি।’ যারা কর্মব্যস্ততায় শরীরচর্চার সুযোগ পান না, চিকিৎসকরা তাদের প্রতিদিন নিয়ম করে দ্রুত হাঁটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। শরীরচর্চার অংশ হিসেবে রাসুল (সা.) সাহাবাদের সঙ্গে কুস্তি লড়েছেন। মাঝেমধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। প্রিয়তমা স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গেও এক রাতে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সবসময় স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে দ্রুতগতিতে হাঁটতেন।
পরিমিত খাবার ও পানি পান : সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের বিকল্প নেই। বর্তমান বিশে^র ডায়াটিশিয়ানরা রোগীদের পরিমিত আহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রাসুল (সা.) পরিমিত খাবারে অভ্যস্ত ছিলেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পেটের তিন ভাগের একভাগ খাবারের জন্য, একভাগ পানির জন্য এবং একভাগ শ^াস-প্রশ^াসের জন্য খালি রাখবে।’ (জামে তিরমিজি)
সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিচ্ছন্নতা : ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ইমানের অনুষঙ্গ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অংশ।’ (সহিহ মুসলিম) অপরিচ্ছন্নতা ও নোংরা পরিবেশ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে নানা রোগজীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটে শরীরে। তাই অজু ও গোসলের পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি শরীরের অবাঞ্ছিত কয়েকটি বিষয়ের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
চিকিৎসা গ্রহণ : সুস্থতা ও অসুস্থতা দুটোই মুমিনের জন্য নেয়ামত। তবে নেকির আশায় ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ হওয়া যাবে না। রাসুল (সা.) তার সাহাবিদের চিকিৎসা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থতার সময় চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।’ (সহিহ বুখারি)
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম : ঘুম দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি আনে। মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন রাতে পর্যাপ্ত ঘুম। চিকিৎসকরা দেরিতে ঘুমের অভ্যাসকে শরীরের জন্য নানাবিধ জটিল রোগের উৎস বলে থাকেন। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন।’ (সহিহ বুখারি)
সকালে না ঘুমানো : সকালের ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ব্যক্তিজীবন গঠনেও বড় প্রতিবন্ধক। পবিত্র কোরআনে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকতে বলা হয়েছে। এ জন্য রাতের শুরুর অংশেই বিছানায় যাওয়ার বিকল্প নেই। চিকিৎসাশাস্ত্র মতেও রাত্রি জাগরণ নানাবিধ জটিল রোগের উৎস। তাই আমাদেরকে অযথা রাত্রি জাগরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ভয়েস/আআ