শুক্রবার, ১১ Jul ২০২৫, ১২:৫৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রামু বৌদ্ধ বিহারে হামলার এক যুগ আজ

আবদুল আজিজ:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইসলাম ধর্মের অবমাননার অভিযোগে কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ার বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার এক যুগ পূর্ণ হয়েছে। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতের অন্ধকারে রামু, উখিয়া ও টেকনাফে বৌদ্ধ পল্লীতে এ হামলা এবং অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এ সময় ১৩টি বৌদ্ধ বিহার ও ৩০টি বসতবাড়ি ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়। কিন্তু, দীর্ঘ এক যুগ পার হলেও জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় শণাক্ত করতে পারেনি। ১৮ মামলার একটিরও বিচারকাজ শেষ হয়নি। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন সাক্ষ্য দিতে না আসা এবং মামলার তদন্তে ত্রুটি থাকার কারণে বিচারকাজে দেরি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

রামুর বাসিন্দা সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী সুনীল বড়ুয়া বলেন, ‘এখন নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। নতুন করে বিচারের আশায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে, আইনশৃংখলা পরিস্থিতি এখন যে অবস্থায় রয়েছে এ নিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ নতুন করে ভীতি ও আতংকে রয়েছে। তবে ওই ঘটনায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি মামলার বাদী হননি। মামলাও করেছে পুলিশ, তদন্তও করেছে পুলিশ। এতে তারা ইচ্ছেমতো আসামি করেছে এবং অভিযোগপত্র থেকে বাদও দিয়েছে। ফলে মামলার তদন্তে ত্রুটি থেকে গেছে।’

রামুর রিয়া মনি বড়–য়া বলেন, ‘২০১২ সালের ঘটনায় সময় যখন বৌদ্ধ মন্দিরে হামলায় হয়, তখন আমি ছোট ছিলাম। তবে, সেই ভয়াল দিনটির কথা আমার স্বরণ আছে। আমি এখনও ভয়ে আতকে উঠি। আমি চাই, দীর্ঘদিন পর হলেও বর্তমান নতুন এই সরকার বৌদ্ধ বিহার হামলার বিচার কার্য সম্পাদন করবে।’

রামুর ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ সমিতা বড়–য়া বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল এই রামু। কিন্তু ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এক রাতেই পুড়ে গেছে আমাদের হাজার বছরের গর্বের ধন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। এ ঘটনার পরপর সরকার ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহার ও বসতঘর পুনর্র্নিমাণ করে দিয়েছে।’

রামুর রুবেল বড়–য়া বলেন, ‘নিজের চোখের সামনে নিজেদের ঘরবাড়িতে হামলা ও লুটপাট হতে দেখেছি। সেদিন পাশের অনেক মুসলিম সম্প্রদায়ের পরিবার আবার আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। কোনো কিছুরই বিচার এই গত ১২ বছরে হলো না। এই সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার হলে দেশে অন্য হামলার ঘটনা হয়তো ঘটত না। আজও রাতে ওই দিনের কথা মনে হলে আঁতকে উঠি।’

রামুর কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ ও পরিচালক শীলপ্রিয় মহাথেরো বলেন, ‘২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বৌদ্ধ বিহারে যে ঘটনা ঘটেছে আমরা এই ঘটনা যাতে পুনরাবৃদ্ধি যাতে না ঘটে সেজন্য বর্তমান অন্তবর্তি সরকারের কাছে জোরদাবি জানাচ্ছি। কারণ, পার্বত্য অঞ্চলে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন রয়েছে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই। কারণ আমরা বিশ^াস করি মুসলিম-বৌদ্ধ আমরা ভাই ভাই। কোন কিছুর ভুলে কারণে যাতে আমাদের সম্প্রীতির নষ্ট না হয় সেজন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

অন্তবর্তী সরকার গঠনের পর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো: রেজাউর রহমান আদালতে অনুপস্থিত রয়েছে। তবে সাবেক পিপি ফরিদুল আলম বলেন, ১৮টি মামলার মধ্যে দুটি সাক্ষ্য পর্যায়ে রয়েছে। তিনটি পুনঃতদন্তের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসছেন না। এতে মামলার বিচারিক কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইসলাম ধর্ম অবমাননার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়ানোকে কেন্দ্র করে রামু উপজেলার ১৯টি প্রাচীন বৌদ্ধমন্দির ও প্রায় ৩০টি বসতঘরে একসঙ্গে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়। পাশাপাশি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় মন্দির ও বৌদ্ধদের ঘরবাড়ি। ওই সাম্প্রদায়িক হামলার ১২ বছরে রামুতে বৌদ্ধ-মুসলিম সম্প্রদায়ে সম্প্রীতি ফিরলেও মুছে যায়নি মনের ক্ষত। ওই দিনের হামলার ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা করা হয়েছিল। এতে এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরপর আপসের ভিত্তিতে একটি মামলা প্রত্যাহার করা হলেও ১৮টি মামলায় ৯৯৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে আটকে গেছে মামলার বিচারকাজ।

বৌদ্ধমন্দির ও ঘরবাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের বেশ কিছু ছবি-ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সংশ্লিতা থাকলেও অভিযোগপত্রে অনেকের নাম বাদ পড়েছে। রামু বৌদ্ধমন্দিরে হামলার ঘটনায় করা মামলার মূল অভিযুক্তদের বেশির ভাগ মানুষ জামিনে, কেউ কেউ ধরাছোঁয়ার বাইরে বেরিয়ে গেছেন। এই সাম্প্রদায়িক হামলার মূল অভিযুক্ত রামু ফকিরা বাজারের ফারুক কম্পিউটারের ফারুক ও আলিফ মুক্তাদিলও জামিনে রয়েছেন। তবে দীর্ঘ ১২ বছরে আগে যে বৌদ্ধ তরুণ উত্তম বড়ুয়ার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে কোরআন অবমাননার ছবি ছড়ানোর গুজব রটেছিল, আজ অবধি নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। গত ১২ বছর ধরে উত্তম বড়ুয়ার কোনো খোঁজ পায়নি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বরের বিভীষিকাময় কালো রাতকে স্মরণ করতে স্থানীয় বিভিন্ন বৌদ্ধ সংগঠন আয়োজন করে সংঘদান ও শান্তি শোভাযাত্রার। প্রতিবছর এই দিনে বিচারের দাবিতে স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন জড়ো হন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION