শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
যথারীতি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে ঝড়টি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার ১২ ঘণ্টার পর তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিল। পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানকরা গভীর নিম্নচাপটি উত্তর উত্তর—পশ্চিম দিক থেকে ডান দিকে বাঁক নিয়ে সোজা অগ্রসর হচ্ছে। এর প্রভাবে উপকূলে হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেয়া হয়েছে ‘দানা’। কাতারের দেয়া ‘দানা’ নামের অর্থ বিগ পার্ল বা বড় মুক্তা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪ নম্বর বিশেষ বুলেটেনর তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৬২০ কিলোমিটার পশ্চিম- দক্ষিণপশ্চিমে, মোংল থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকা উত্তাল থাকায় মাছ ধরার সকল নৌকা ও ট্রলার সমূহকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
মোহাম্মদপুরে ২ মাসে ৯ খুন, নেপথ্যে ছিনতাই-মাদক-দখলমোহাম্মদপুরে ২ মাসে ৯ খুন, নেপথ্যে ছিনতাই-মাদক-দখল
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ঝড়টি একটু ডান দিকে বাঁক নিয়েছে। আগে আমরা উড়িশ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ মধ্যবতীর্ এলাকার উপর দিয়ে যাবে বলে ধারণা করেছিলাম। এখন ডান দিকে বাঁক নেয়ায় তা পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে উপকূলে আঘাত করতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে ঝড়টি কোন দিকে যাবে? কিংবা আদৌ তা ঝড়ে রূপ নেবে কিনা জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সাদেকুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে তাই এটি বৃহস্পতিবার বিকেলের পর বা রাতে গিয়ে হয়তো উপকূলে আঘাত করতে পারে।
যদি উপকূলে আঘাত করে তাহলে কোন উপকূলের উপর দিয়ে ঝড়টি অতিক্রম করতে পারে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন,‘ ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন হলো উপরিভাগের বাতাসের গতিবেগ। ঘূর্ণিঝড়ের দিক মূলত নিয়ন্ত্রণ করে সেই বাতাস। এখন পর্যন্ত উপরের বাতাস বাংলাদেশ উপকূলের অনুকূলে, অর্থাৎ আমাদের দেশে আসার কোনো সুযোগ নেই। ঝড়টি উড়িশ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।
দেশে অঢেল সম্পদের পাশাপাশি বিদেশেও রয়েছে বাড়িদেশে অঢেল সম্পদের পাশাপাশি বিদেশেও রয়েছে বাড়ি
কিন্তু ঝড়টি আমাদের দেশে আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে দমকা বাতাস ও বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সাদেকুল আলম। তিনি বলেন, প্রায় ১০০ কিলোমিটার ব্যাসের এই ঝড়টির প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই দুই দিন বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের সতর্ক বার্তায় জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের উড়িশ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের মধ্যবতীর্ এলাকা দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। এসময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৮ থেকে ১১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, ঝড়টি নিম্নচাপে রূপ নেয়ার পরপরই যদি ডান দিকে টার্ন নিয়ে নেয় তাহলে এটি পুরোপুরি দেশের দক্ষিণ—পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা (খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা প্রভৃতি এলাকা) দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। তবে এই শঙ্কা খুব কম। তবে ডান দিকে টার্ন নেয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সম্প্রতি বিদায় নিয়েছে মৌসুমী বায়ু। এর প্রভাবে স্থলভাগ থেকে বাতাসের গতিবেগ সাগরের দিকে ধাক্কা দেয়ার একটি শক্তি কাজ করছে। এই শক্তির কারণে উত্তর গোলার্ধে (বাংলাদেশ এই গোলার্ধে) বাতাস ঘঁড়ির কাটার দিকে ঘুরে বলে ঝড়টি দক্ষিণে ধাক্কা খাবে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে আঘাত করতে পারে।
উল্লেখ্য,বঙ্গোপসাগরে প্রাক বর্ষা মৌসুম ( এপ্রিল—মে) ও প্রি বর্ষা মৌসুম (সেপ্টেম্বর—নভেম্বর) এসময়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।। ১৮৯১ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে ৯৪টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এসবের মধ্যে ১৯টি ঝড় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করা ঝড়গুলোর মধ্যে বেশিরভাগ দেশের দক্ষিণ—পশ্চিম উপকূলের উপর দিয়ে গিয়েছে। গত বছরই বছরের এসময়ে তিনটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। গত বছরের অক্টোবরে ‘হামুন’, নভেম্বরে ‘মিধিলি’র পর ডিসেম্বরে ‘মিগজাউম’ নামের তিনটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল। চলতি মাসের আবহাওয়া দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসেও এক থেকে তিনটি লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এদের মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে বলা হয়েছিল। ইতোমধ্যে একটি নিম্নচাপ উপকূল অতিক্রম করেছে।
ভয়েস/আআ