মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১২ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কোরআন-সুন্নাহ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ:
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পূর্বে উম্মতকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অসিয়ত করে গেছেন। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম অসিয়ত করেছেন কোরআন ও সুন্নাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে। যতদিন উম্মত এই দুটো বস্তুকে আঁকড়ে ধরে রাখবে, ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না বলেও নিশ্চিত করেছেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে দুটো বস্তু রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা এগুলো আঁকড়ে ধরে রাখবে, ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। এক. আল্লাহর কিতাব। দুই. তার রাসুলের সুন্নাহ।’ (মুয়াত্তা মালেক)

অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে লোক সকল, আমি একজন মানুষ। অতিসত্বর আল্লাহতায়ালার প্রেরিত ফেরেশতা আসবে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেবে। তোমাদের কাছে আমি দুটো ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি। তার একটি হলো আল্লাহর কিতাব। এতে সঠিক পথের দিশা এবং আলোকবর্তিকা আছে। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাব অনুসরণ করবে এবং শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবে।’ (সহিহ্ মুসলিম)

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এই অসিয়ত কোরআনের অনেকগুলো আয়াতের সমার্থক। মহান আল্লাহর কিতাবের পাশাপাশি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা। এটা ইমান, আকিদা ও সুপথ প্রাপ্তির পূর্বশর্ত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করো।’ (সুরা আনফাল ২০) এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা মনে করে শুধু কোরআন অনুসরণ করলেই পরকালে সফল হওয়া যাবে। তাদের এই ধারণা সঠিক নয়। কেননা কোরআন যথাযথভাবে বোঝার জন্য হাদিসের কোনো বিকল্প নেই। রাসুল (সা.) হচ্ছেন আমাদের জন্য নমুনা। তিনি কোরআন কীভাবে অনুসরণ করেছেন, তা বর্ণিত আছে হাদিসে। এরপর দেখতে হবে সাহাবায়ে কেরাম তা কীভাবে পালন করছেন। আমাদেরও সেভাবে পালন করতে হবে। তাহলে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারব।

কোরআনের পরিচয় ও মর্যাদা : ইসলামি শরিয়তের যাবতীয় বিধানাবলির প্রথম উৎসস্থল হলো কোরআনুল কারিম। নিজের পরিচয় এমন সুস্পষ্ট ও সুন্দরভাবে স্বয়ং কোরআন তুলে ধরেছে, যা পৃথিবীর অন্য কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি যদি এই কোরআন অবতীর্ণ করতাম কোনো পাহাড়ের ওপর, তবে তুমি দেখতে তা আল্লাহর ভয়ে বিনীত ও বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি, যেন তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সুরা হাশর ২১) সুরা বনি ইসরায়েলে বলা হয়েছে, ‘আমি অবতরণ করেছি এমন কোরআন, যা রোগের জন্য সুচিকিৎসা এবং ইমানদারদের জন্য রহমত। কিন্তু তা অত্যাচারীদের ক্ষতিই শুধু বৃদ্ধি করে।’ (সুরা বনি ইসরায়েল ৮২) অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ অবতরণ করেছেন উত্তম বাণী তথা এমন উত্তম কিতাব, যা বারবার আবৃত্তি করা হয়। যারা স্বীয় প্রতিপালককে ভয় করে, এতে তাদের লোম চামড়ার ওপর কাঁটা দিয়ে ওঠে। এরপর তাদের দেহ ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথনির্দেশ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথপ্রদর্শন করেন। আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেন, তার কোনো পথপ্রদর্শক নেই।’ (সুরা জুমার ২৩)

সুন্নাহর পরিচয় ও মর্যাদা : ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎসস্থল হলো হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ। এটি কোরআনের সংক্ষিপ্ত, মৌলিক ও বিশদ ব্যাখ্যার উপযোগী বিধানাবলি মানুষের সামনে সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জীবনভর যা বলেছেন বা করেছেন, তার সবই আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি নিজ খেয়ালখুশি মতো কিছু বলেন না। এটা কেবল তার কাছে পাঠানো অহি।’ (সুরা নাজম ৩-৪) সুতরাং সুন্নাহ হলো কোরআন স্বীকৃত বিষয়। এজন্য সুন্নাহ অস্বীকার করা কোরআন অস্বীকার করার সমান।

আল্লাহতায়ালা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে সুস্পষ্ট আদেশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক।’ (সুরা হাশর ৭) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সুতরাং যারা তার (রাসুল) আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের ভয় করা উচিত, না জানি তাদের ওপর কোনো বিপদ আপতিত হয় অথবা যন্ত্রণাদায়ক কোনো শাস্তিতাদের আক্রান্ত করে।’

(সুরা নুর ৬৩)

সাহাবায়ে কেরাম পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহকে নিজেদের পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাদের এ কাজে নিদারুণ খুশি হয়েছেন। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে ইয়েমেনের গভর্নর হিসেবে পাঠানোর সময় জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কীসের ভিত্তিতে ফায়সালা করবে হে মুয়াজ? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহর কিতাবের মাধ্যমে। রাসুল (সা.) বললেন, যদি সে বিষয়টি আল্লাহর কিতাবে না পাও? তিনি উত্তরে বললেন, তাহলে আল্লাহর রাসুলের সুন্নাহ দ্বারা ফায়সালা করব। রাসুল (সা.) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, যদি বিষয়টি এতেও না পাও? তিনি উত্তর দিলেন, তাহলে আমি আমার রায় এবং ফিকহের মাধ্যমে ফায়সালা করব। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর প্রশংসা বাক্য পাঠ করেন।’ (ফাতহুল কাদির ৩/৩২১)

কোরআন ও হাদিসে মানুষের ধর্মীয় জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান রয়েছে। যারা পথভ্রষ্ট না হয়ে সুপথের ওপর অবিচল থাকতে চায়, তাদের জন্য কোরআন ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরার বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ সবাইকে কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION