মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

যে কারণে পৃথিবী মানুষের আবাসস্থল

আবদুল আউওয়াল:
বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের যুগে আমরা বসবাস করছি। পৃথবীতে বসেই মহাকাশের নিত্যনতুন তথ্য সংগ্রহ করছি। বিভিন্ন দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে প্রতিনিয়ত উঠে আসছে মহাকাশের নানা চমকপ্রদ ঘটনাপ্রবাহের কথা। মঙ্গলগ্রহে মানুষের বসতি গড়া যায় কি না, চাঁদের দেশে বাড়ি নির্মাণ সম্ভব কি না, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ইতিমধ্যে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থাসহ কয়েকটি দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছে। মানুষ অবশ্য সেক্ষেত্রে কতটা সফল হবে তা ভবিষ্যৎ বলে দেব। তবে আমাদের জানার বিষয় হলো, পৃথিবীর বাইরে মানুষের বসবাস করার কোনো স্থান আছে কি না? কোরআনে এ বিষয়ে কী রয়েছে?

পবিত্র কোরআনের সুরা বনি ইসরাইলের ৭০ নম্বর আয়াতে ইরাশাদ হয়েছে, ‘আদম সন্তানকে আল্লাহ সম্মানিত করেছেন এবং অধিকাংশ সৃষ্টির ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন।’ সুরা তিনের ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।’ আর এত বৈশিষ্ট্যময় করে মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্য প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য।’ (সুরা জারিয়াত ৫৬)

তাই বিবেকের দাবি হলো, মানুষের বসবাসের জন্য এমন একটি উপযুক্ত, আদর্শ ও শ্রেষ্ঠ স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া যেখানে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করতে পারবে। যেখানকার আবহাওয়া, পরিবেশ ও ভূ-প্রকৃতি তাদের জন্য আরামদায়ক হবে। যেখানে তারা পুষ্টিগুণে ভরপুর খাবার খাবে। বিশুদ্ধ পানি পাবে। ফসল ফলানোর উপযোগী ভূমি পাবে। শ্বাসকার্য সম্পাদের জন্য অক্সিজেন মিশ্রিত নির্মল বায়ু পাবে। ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য উপযুক্ত জায়গা পাবে। চলাফেরার জন্য আরামদায়ক যানবাহন পাবে ইত্যাদি। কিন্তু এর বিপরীত হলে মানুষের জীবনধারণ কষ্টকর হবে। ক্ষেত্রবিশেষে অসম্ভব হয়ে উঠবে। তখন যে উদ্দেশে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেটি মারাত্মকভাবে বিঘিœত হবে। তাই মানুষের জন্য তাদের বসবাস উপযোগী একটি স্থান আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেটি হলো পৃথিবী। এখানে মানুষের জীবনধারণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সব পর্যাপ্ত পরিমাণে তিনি রেখে দিয়েছেন। পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী, গাছপালা, ফসলের মাঠসহ নানা নয়নাভিরাম বস্তু দিয়ে শৈল্পিকরূপে স্তরে স্তরে পৃথিবীকে সাজিয়েছেন।

মানুষ যেহেতু ভবিষ্যতে মাটির পৃথিবীতে বসবাস করবে সেজন্য মানুষকে মাটির উপাদান থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যাতে পৃথিবীর আবহাওয়ার সঙ্গে তার দেহের একটা সম্পর্ক থাকে। মাটির সঙ্গে যাতে তার মিশে যাওয়ার যোগ্যতা থাকে। তার জন্ম, মৃত্যু, কবর, পুনরুত্থান, হাশর-নাশর, পরকালীন বিচারকার্য সবকিছুই যেহেতু মাটির সঙ্গে সম্পর্কিত তাহলে মাটির পৃথিবী ছেড়ে কোথায় সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে! ইরশাদ হয়েছে, ‘মাটি থেকেই আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, মাটিতেই আমি তোমাদের ফিরিয়ে নেব এবং মাটি থেকেই তোমাদের পুনরায় বের করে আনব।’ (সুরা তাহা ৫৫)

সুতরাং পৃথিবী ছাড়া অন্য গ্রহে মানুষের জীবনধারণ যে সম্ভব নয় তা স্পষ্ট বোঝা যায়। মহাকাশ ভ্রমণ বা পৃথিবীর বাইরে কিছুদিন অবস্থান করা গেলেও স্থায়ীভাবে বসবাস কিছুতেই সম্ভব নয়। রাসুল (সা.)-এর মেরাজের রাতে মহাকাশ ভ্রমণ করে স্বাচ্ছন্দ্যে পৃথিবীতে ফিরে আসার ঘটনা ছিল অলৌকিক বিষয়। সেটি আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় হয়েছিল। আর ইসা (আ.)-এর আকাশে জীবিত থাকার বিষয়টিও আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু কেয়ামতের আগে তিনিও পৃথিবীতে নেমে আসবেন। কারণ তার মরণকার্য এখনো বাকি। তার কবর হবে পৃথিবীতে। তার পুনর্জাগরণ, হাশর-নাশর হবে পৃথিবীতে। তাই এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, মানুষের জন্ম, বেড়ে ওঠা, মৃত্যু এসব পৃথিবীতেই সম্ভব। তাদের বসবাসের জন্য পৃথিবীই একমাত্র আদর্শগ্রহ। আর অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র সেগুলো মানুষের বসবাসের জন্য নয়; তাদের কল্যাণে সৃষ্টি করা হয়েছে। সেসব কল্যাণের অনেক ধরন হতে পারে। যেমন সুরা মুলকের ৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি পৃথিবীর নিকটতম আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জিত করেছি। সেগুলোকে শয়তানের জন্য ক্ষেপণাস্ত্রস্বরূপ (আকাশের নিরাপত্তার জন্য) তৈরি করেছি।’ কারণ জিন-শয়তানরা আকাশে কান লাগিয়ে ফেরেশতাদের কথোপকথন শুনে এসে পৃথিবীতে ফেতনা সৃষ্টি করে। অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ হলেন সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা এর দ্বারা স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা আনআম ৯৭) এ ছাড়াও চাঁদ ও সূর্যের উপকারিতার কথা কোরআনে আলাদাভাবে বর্ণনা করা আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ওই সত্তা, যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চাঁদকে আলোকময় বানিয়েছেন। আর চাঁদের জন্য মঞ্জিলসমূহ নির্ধারিত করেছেন। যাতে তোমরা বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব জানতে পারো।’ (সুরা ইউনুস ৫) উক্ত আলোচনা দ্বারা চাঁদের বিষয়টি স্পষ্ট যে, এটাকে আল্লাহ আলোকময় করেছেন রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। আঁধারে পথ দেখার জন্য। এর জন্য মঞ্জিল নির্ধারণ করেছেন সময় নির্ণয়ের জন্য। কারণ চাঁদের ওপর নির্ভর করেই অনেক ইবাদত-বন্দেগি করতে হয়। রোজা, হজ, জাকাত, সদকাতুল ফিতর, দুই ঈদ, কোরবানি ইত্যাদি ইবাদত চাঁদের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, চাঁদ মানুষের বসবাসের জন্য নয়, অন্যান্য কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION