বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
রামুতে র‌্যাবের অভিযানে মাটির নিচে মিলল ৫ অস্ত্র-গুলি বাংলাদেশের ধর্মীয় রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সকল ধর্ম, বর্ণ গোত্র’র সৌহার্দপূর্ণ নাগরিক এবং সামাজিক সম্প্রীতির অভিযাত্রা হোক সবার অঙ্গীকার চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলা মামলায় ১২ জন রিমান্ডে বিজয় দিবসে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার ব্যাংক হিসাব তলব ‘জয় বাংলা’ আর জাতীয় স্লোগান নয় নাফনদীতে নৌযান চলাচলে সতর্ক করে মাইকিং ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় স্থগিত আরাকান আর্মির দখলে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ২৭০ কিমি সীমান্ত হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন পেলেন শমী কায়সার

সমাজ সংস্কারে নারীর ভূমিকা

মুফতি মতিউর রহমান:
ইসলামে পুরুষের জন্য যে বিধান প্রযোজ্য নারীর জন্যও সে বিধান প্রযোজ্য। আল্লাহতায়ালা পুরুষের ওপর যা ফরজ করেছেন তা নারীর ওপরও করেছেন। তবে যদি কোনো বিধানের ব্যাপারে এমন জানা যায় যে, তা শুধু পুরুষের জন্য, তাহলে ভিন্ন কথা। যেমন আয়েশা (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মহিলাদের ওপর কি জিহাদ ফরজ? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বললেন, হ্যাঁ, তাদের জন্য এমন জিহাদ ফরজ, যাতে কোনো লড়াই নেই। তা হলো হজ ও ওমরাহ।’ (সহিহ মুসলিম ৪৪০) এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ করা শুধু পুরুষদের জন্য ফরজ, মহিলাদের জন্য নয়। আর যে সমস্ত বিধানে এমন ভিন্ন মত পাওয়া যায় না সেগুলোর ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েই সমান। সেসবের মধ্যে একটি হলো সমাজ সংস্কারের বিষয়টি। নিশ্চয়ই সমাজ সংস্কারে পুরুষদের মতো নারীদেরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কারণ সমাজ সংস্কার সাধারণত দুভাবে হয়ে থাকে। এক. বাহ্যিক সংস্কার। তা বাজার, মসজিদ অন্যান্য প্রকাশ্য স্থানসমূহে হয়ে থাকে। এতে পুরুষদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য। কেননা তারাই জনসম্মুখে আসতে পারে। দুই. অভ্যন্তরীণ সংস্কার। অর্থাৎ ভেতরগত সংস্কার। বাড়ির অধিকাংশ দায়দায়িত্ব নারীর প্রতি ন্যস্ত করা হয়েছে বিধায় এ ধরনের সংস্কার গৃহাভ্যন্তরেই হয়ে থাকে। এ ছাড়া সমাজ সংস্কারে নারীর ভূমিকার গুরুত্ব দুটি কারণে হয়ে থাকে।

প্রথম কারণ : সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও নারীদের সংখ্যা পুরুষদের মতোই; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যাই বেশি। তবে দেশ-কাল ভেদে এতে কমবেশি হয়ে থাকে। কোনো দেশে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি, আবার কোনো দেশে এর ব্যতিক্রম হয়।

দ্বিতীয় কারণ : মাতৃক্রোড়েই সন্তানরা লালিত-পালিত হয়। শিশুকাল থেকেই তারা যা শিক্ষা পায় সেটাই পরবর্তী জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এ দুটি কারণের প্রতি লক্ষ করলে সমাজ সংস্কারে নারীর ভূমিকার গুরুত্ব ব্যাপকভাবে ফুটে ওঠে। সমাজ সংস্কারে নারীদের আত্মনিয়োগের জন্য তার কিছু যোগ্যতা বা উপাদান থাকতে হবে, যাতে সে সংস্কারের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে।

প্রথম উপাদান : পুণ্যবতী হওয়া। নারীকে নিজে পুণ্যবতী হতে হবে, যাতে সে নারী সমাজে উত্তম আদর্শ বা মডেল হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে নারী পূণ্যবতী হবে? প্রত্যেক নারীর জানা উচিত যে, জ্ঞান অর্জন ব্যতীত সে কখনো পূণ্যবতী হতে পারবে না। জ্ঞান বলতে এখানে ইসলামি শরিয়তের জ্ঞান উদ্দেশ্য, যা সে সম্ভব হলে বইপত্র পড়ে অথবা আলেমদের থেকে অর্জন করবে। চাই সে আলেমরা পুরুষ হোক বা নারী। বর্তমান যুগে আলেমদের মুখ থেকে নারীর জ্ঞান অর্জন করা অনেক সহজ। আর এটা সম্ভব নির্ভরযোগ্য আলেমদের রেকর্ডকৃত ক্যাসেট, অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে। কারণ সমাজকে কল্যাণ ও সততার প্রতি দিকনির্দেশনা প্রদানে এই রেকর্ডকৃত বয়ানগুলোর একটা বড় ভূমিকা রয়েছে, যদি সেগুলোকে এ জন্য ব্যবহার করা হয়। মোট কথা, সততা অর্জনের জন্য নারীর জ্ঞান অর্জন আবশ্যক। কারণ জ্ঞান ব্যতীত কোনো সততা অর্জিত হয় না। আলেমদের থেকে অথবা বইপত্র পড়ে জ্ঞান অর্জন করা যায়।

দ্বিতীয় উপাদান : প্রজ্ঞাবান হওয়া। দাওয়াত প্রদান এবং শ্রোতাদের নিকট ইলেম পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে হেকমত বা প্রজ্ঞার অধিকারী হতে হবে। হেকমত বলা হয় কোনো বস্তুকে তার যথাস্থানে রাখা। বান্দাকে হেকমত প্রদান করা মহান আল্লাহর অন্যতম নেয়ামত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি যাকে ইচ্ছা তাকেই হেকমত দান করি। আর যাকে হেকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত কল্যাণ দেওয়া হয়।’ (সুরা বাকারা ২৬৯)

তৃতীয় উপাদান : সন্তানদের সুন্দরভাবে লালন-পালন করা। মায়েরা তাদের সন্তানদের উত্তম প্রতিপালনকারী হবেন। কারণ তাদের সন্তানরাই ভবিষ্যতের নারী-পুরুষ। তারা লালিত-পালিত হওয়ার সময় প্রথমে তাদের মায়ের মুখোমুখি হয়। কাজেই মা যদি উত্তম চরিত্রবান, ইবাদতগুজার ও পুণ্যবতী হোন এবং সন্তানরা যদি এমন মায়ের কাছে লালিত-পালিত হয় তাহলে সমাজ সংস্কারে সেই সন্তানদের দারুণ প্রভাব থাকবে। সুতরাং নারীরা তাদের সন্তানদের প্রতি যতœবান হওয়া, তাদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা এবং তাদের সংশোধন করতে ব্যর্থ হলে তাদের বাবা অথবা বাবার অবর্তমানে তাদের অভিভাবক ভাই, চাচা, দাদা প্রমুখের সহযোগিতা নেওয়া উচিত। বাস্তবতার কাছে নারীর নতি স্বীকার করা এবং এ কথা বলা ঠিক নয় যে, মানুষ এভাবে চলছে, কাজেই আমি এটা পরিবর্তন করতে পারব না। কারণ তারা যদি এভাবে বাস্তবতার কাছে নতি স্বীকার করে বিরত থাকে তাহলে কখনোই সংস্কার সাধন হবে না।

চতুর্থ উপাদান : দাওয়াতি তৎপরতা। নারীরা তাদের বোনদের সংশোধন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এটা হতে পারে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ^বিদ্যালয় বা উচ্চতর শিক্ষার অন্যান্য স্তরে তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে। অনুরূপভাবে নিজেদের মধ্যে পরস্পর দেখা-সাক্ষাতের সময় কল্যাণকর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। আমাদের অনেক দ্বীনি বোন এই কাজটি আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। তারা তাদের বোনদের ইসলামি আদর্শে আদর্শবান করার জন্য ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরছেন। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। নারী সমাজ পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ অথবা স্কুল, মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিলিত হওয়ার সময় যখন তারা দাওয়াতি কাজে তৎপর হবে তখন সমাজ সংস্কারে তাদের বিরাট প্রভাব ও ভূমিকা থাকবে।

উল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রেখে নারী সমাজ যদি এগিয়ে চলে, তাহলে আগামী প্রজন্ম একটি সুস্থ সংস্কৃতির মুখ দেখতে পারবে। দেশ ও সমাজের সর্বস্তরে শান্তি বিরাজ করবে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION