শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ভূমিদস্যু নুরুল হুদার নেতৃত্বে রাতের অন্ধকারে কৃষি জমির মাটি লুট

গভীর গর্ত করে ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। ছবি- কক্সবাজার ভয়েস

এম এ সাত্তার:

পরিবেশ আইন অমান্য করে কয়েক মাস ধরে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় রাতের আঁধারে কৃষিজমির উর্বর মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটায়। এতে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই চলাচল শুরু করে মাটিভর্তি ড্রাম ট্রাক আর ট্রাক/ডাম্পার। রাতভর চলে এসব গাড়ি। মাটিবাহী ট্রাকের প্রভাব পড়ছে সড়কগুলোতেও। মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন এতই বেড়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার অন্তর্ভুক্ত ভূমি কার্যালয়ের আওতাধীন এলাকার কৃষিজমিগুলো রাতের বেলায় কাটা হচ্ছে মাটি। বছর দশেক ধরে চলছে এই প্রকারের মাটিকাটা। ইদানিং তা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুস শুকুর বলেন, ঝিলংজা রাবার ড্যামের উত্তরে বাঁকখালী নদীর পাড়ের এলাকা ও তৎসংলগ্ন বড় বিলের কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ধ্বংস করা হচ্ছে কয়েক একর কৃষিজমি। এছাড়া পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে প্রতিরাতেই শতশত গাড়ি মাটি কেটে নিয়ে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে ফসলি জমির উপরিভাগের ১০ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। মূলতঃ সে কারণেই ফসলি জমির মাটি কাটা বেআইনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ছনখোলা বড় বিলের আবু বক্কর নামক মৎস্য খামারের দক্ষিণ পাশে কৃষি জমি, তার সোজা পশ্চিম দিকে নদীর চর। মাদার গাছতলা নামক এলাকার পূর্ব-দক্ষিণ পাশে পিচ রাস্তা ঘেঁষে ফসলি জমি থেকে মাটি লুট করছে। মাটি ব্যবসায়ীরা ভেকু (এক্সকাভেটর) দিয়ে কোথাও ২০ থেকে ৩০ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি নিয়ে গেছে। এসব গর্তে পাশের কৃষিজমির মাটিও ভেঙে পড়ছে। কোন জমির মালিক টাকার লোভে মাটি বিক্রি করলেও অধিকাংশ কৃষক বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করছে বলে জানান স্থানীয় এক কৃষক। এরকম গুরুতর অভিযোগ রয়েছে মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, মাটি খেকোদের নজর থেকে বাদ যাচ্ছে না খাসজমি, খাল ও নদ-নদীর তীর। এসব মাটির শেষ ঠিকানা হচ্ছে ইটভাটা ও বাড়ি ভিটা ভরাট কাজে। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় এরই মধ্যে কয়েকশত একর কৃষিজমি অনাবাদি জমি ও জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ এ জমিগুলোতে ২/৩ ফসলি চাষ করা হতো। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়া জমি গুলোতে বর্তমানে ফসল উৎপাদ শুন্যে পর্যায়ে চলে গেছে। গেল বর্ষা মৌসুমে মাটি কেটে নেওয়া এক চাষির ৪কানি (এক কানিতে ৪০ শতক) জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে ১৫-২০ আড়ি বা ১০০-১২০ কেজি ধান। ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার ফলে মারাত্মক খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

পেকুয়া উপজেলার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ওই এলাকায় কয়েক বিঘা জমির ওপর ধান চাষ ও বিভিন্ন সবজি লাগিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। রাতের আঁধারে ভূমিদস্যু ও মাটি ব্যবসায়ীরা মিলে কৃষিজমি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পাশের কৃষিজমির মাটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মাটিকাটা বন্ধ না করলে একসময় ওই এলাকা থেকে কৃষিজমি হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়টি শিকার করে পিএমখালী ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার মাটি ব্যবসায়ী নুরুল হুদা বলেন, ‘যারা মাটি বিক্রি করছেন, তারা জেনেশুনেই বিক্রি করছেন। আর আমি কিনে নিয়ে আশপাশের ইটভাটামালিকদের কাছে বিক্রি করছি। ফসলি জমির মাটি ইটভাটার জন্য খুবই উপযোগী মাটি।’

আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এক শ্রেণীর মাটি ব্যবসায়ী ও ইটভাটার মালিক। অথচ আইনে বলা আছে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’তে মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে কৃষিজমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ সোলাইমান হায়দার কল রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তায় জানিয়েছেন সে মিটিংয়ে আছেন। উপ পরিচালক জমির উদ্দিনের মুঠোফোনে রিং ঢুকেনি। যে কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কক্সবাজার সদর ভূমি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, খোঁজ নিয়ে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হবে।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION