বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
এম এ সাত্তার:
কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী উদযাপন করা হয়েছে হাশেমিয়ানদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা লগ্ন থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয় প্রিয় হাশেমিয়া ক্যাম্পাস।
সকাল ১০টায় আনন্দ র্যালির মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব। র্যালি শেষে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সকাল সাড়ে ১০টায় বিদ্যালয় মাঠে এক আলোচনা সভার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সার, সহকারী জজ শরীফুল হক সহ আরো অনেকে।
হাশেমিয়ানদের রিইউনিয়নের সভাপতি মওলানা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডক্টর আ ফ ম খালিদ হোসেন, ধর্ম উপদেষ্টা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বিশেষ অতিথিবৃন্দ মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক কক্সবাজার, মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, পুলিশ সুপার কক্সবাজার।
উদ্বোধনী বক্তব্য ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, মুসলিম সমাজের মধ্যে রয়েছে দ্বিধাবিভক্ত। এসময়ে আমাদের প্রয়োজন এক-ঐক্য। আমরা মুসলিমসহ বাংলাদেশি সবাই ঐক্যবদ্ধ। জাতি-গোষ্ঠীর ঐক্য। মুসলমানেরা যতদিন ঐক্যবদ্ধ ছিলেন ততদিন তারা পৃথিবীতে রাজত্ব করেছেন। আমাদের মধ্যে বিভেদ, সংঘাত সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে আমাদের শক্তি হ্রাস হতে থাকে। তিনি সকল মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে পরস্পরের ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্য দিনের মতো সকাল ৮টায় মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা এসে পৌঁছলেও, কালকের চিত্র ছিল ভিন্ন। ক্লাস করতে নয়। তারা এসেছে সেই স্মৃতিময় ক্যাম্পাসে। যেখানে একে অপরের সাথে কৌশল বিনিময়, শারীরিক ও পরিবার পরিজনের খবরাখবর, আড্ডা আর ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত ছিলেন সবাই। শিক্ষাজীবনের পাঠ চুকিয়ে কেউ এখন জজ- ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ কবি- সাহিত্যিক, কেউ লেখক, কেউ গবেষক, কেউ এডভোকেট, কেউ রাজনৈতিক নেতা কর্মী, কেউ ইমাম- খতিব, কেউ ব্যবসায়ী কেউ আবার শিক্ষক।
হাশেমিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক শিক্ষার্থী জজ শরীফুল হক বলেন, মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শেষ করে যাওয়ার পর আর বন্ধুদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ হয়নি। আমি আজ আবিভুত হয়েছি। কল্পনাও করিনি আমার বন্ধুদের সঙ্গে আবার দেখা হবে। হাশেমিয়ানদের রি-ইউনিয়নে এসে আমাদের অনেকের সঙ্গে আবার দেখা হয়েছে। মনে হচ্ছে আমি যেন সেই পুরোনো দিনের ক্যাম্পাস জীবনেই ফিরে গিয়েছি।’
কক্সবাজার আদালতের এপিপি এডভোকেট শাহজাহান চৌধুরী বলেন, প্রিয় প্রতিষ্ঠান হাশেমিয়া থেকে বের হওয়ার পর ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, যোগাযোগ খুব একটা হয়ে ওঠে না। এ ধরনের আয়োজন হওয়াতে শিক্ষা জীবনের বন্ধুদের সঙ্গে আবারও মিলিত হয়েছি। এটি অবশ্যই একটি আনন্দের ব্যাপার। আয়োজনটির ফলে সাবেক বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুন্দর একটি বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস।’
অনুষ্ঠানে মাওলানা কলিম উল্লাহকে (মরণোত্তর), হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক, মুহাদ্দিস মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইনকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। এছাড়া সারাদিনই সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরেছিল মাদ্রাসা মাঠ । হৈ চৈ, সংগীত ও ছাত্রদের মিলনে মুখরিত ছিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গন। সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় হাশেমিয়ানদের রি-ইউনিয়ন।
ভয়েস/আআ