শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ০৬:০০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

দুনিয়া আসল ঠিকানা নয়

মো. আবদুর রহমান:
মানুষের জীবন নদীর মতো বয়ে চলে, আবার হঠাৎ কখনো তার স্রোত হয়ে ওঠে উদ্দাম, কখনো বা স্থবির। এই জীবনের গন্তব্য কোথায়, শেষ কোথায়, তা অনেকেই ভাবেন না, ভাবলেও ভুলে থাকেন। অথচ জীবন যেমন রহস্যময়, তেমনি তার পরিণতিও নিশ্চিত। এই নিশ্চিত পরিণতি হলো মৃত্যু এবং তার পরবর্তী অনন্ত জীবন আখেরাত। সুতরাং দুনিয়া আসল ঠিকানা নয়।

আমরা দুনিয়ার মোহে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছি যে, আখেরাতের চিন্তা যেন অলীক মনে হয়। অথচ এই দুনিয়া আমাদের প্রতারণা করছে, ছলনা করছে, ধোঁকা দিচ্ছে। কবরে গিয়েই অনুধাবন হবে, আমরা কত বড় প্রতারণার শিকার হয়েছি।

তাই এখনই সময় আত্মজিজ্ঞাসার, সময় পুনর্জাগরণের। এখনই প্রস্তুতির প্রয়োজন সেই অনন্ত জীবনের জন্য, যেখানে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কোনো পালা পরিবর্তন নেই, নেই ফিরে আসার সুযোগ। দুনিয়ার মোহ কাটিয়ে আখেরাতকে জীবন-দিশা বানানোই প্রকৃত মুমিনের কাজ। কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এ দুনিয়ার জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। নিশ্চয়ই আখেরাতের জীবনই তো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত।’ (সুরা আনকাবুত ৬৪) আমরা দুনিয়াকে আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাসিতার একমাত্র ক্ষেত্র বানিয়ে নিয়েছি। অথচ মুমিনের জন্য এই দুনিয়া আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনের গন্তব্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্র মাত্র। এখানে আমরা মুসাফিরের মতো রয়েছি, এই দুনিয়া আমাদের আসল ঠিকানা নয়। তাই দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হওয়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.) আদেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি অবলম্বন করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন। আর মানুষের কাছে যা আছে, তুমি তার প্রতি অনাসক্ত হও, তাহলে মানুষও তোমাকে ভালোবাসবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ) রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয় দুনিয়া মধুময়, সবুজের সমারোহে ভরপুর। আল্লাহতায়ালা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধিস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি দেখবেন তোমরা কীরূপ আমল করো। অতএব দুনিয়ার মোহ পরিহার করো এবং নারীদের ছলনা হতে পরিত্রাণ চাও। কেননা বনি ইসরাইলের সর্বপ্রথম বিপর্যয় নারী কর্র্তৃক প্রকাশিত হয়েছিল।’ (সহিহ মুসলিম)

মানুষ দুনিয়াকে বহু মূল্যবান সম্পদ মনে করে। অথচ দুনিয়া ও তার সম্পদ-প্রাচুর্য হলো অতি তুচ্ছ ও মূল্যহীন বস্তুর মতো। এক হাদিসে বর্ণিত আছে, জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুল (সা.) একটি কান কাটা মৃত বকরির বাচ্চার কাছ দিয়ে অতিক্রমকালে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে, এটিকে এক দিরহামের বিনিময়ে নিতে পছন্দ করবে? তারা বললেন, আমরা তো এটিকে কোনো কিছুর বিনিময়েই নিতে পছন্দ করব না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহর কসম! এটি তোমাদের কাছে যতটা তুচ্ছ, আল্লাহতায়ালার কাছে দুনিয়া এবং তার সম্পদ এর চেয়েও বেশি তুচ্ছ।’ (মিশকাত) ওসমান ইবনে উবাইদুল্লাহ (রহ.) বলেন, কয়েকজন সাহাবি বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এই দুনিয়া যদি আল্লাহতায়ালার কাছে মশার একটি পাখার সমানও মূল্য রাখত তবে তিনি কোনো কাফেরকে কিছুই দিতেন না।’ (সুনানে তিরমিজি)

উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন দুনিয়াকে উপস্থিত করা হবে, তখন দুনিয়ার যা কিছু আল্লাহর জন্য ছিল তা পৃথক করা হবে, তারপর অবশিষ্ট দুনিয়াকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (ইবনে আবি শাইবাহ) আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘কারও ব্যাপারে যদি শপথ করে বলতে পার যে, সে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুনিয়াবিমুখ, তাহলে আমিও শপথ করে বলতে পারি, সে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম লোক।’ ইব্রাহিম তাইমি (রহ.) বলেছেন, ‘তোমাদের ও পূর্ববর্তীদের মধ্যে কতই না পার্থক্য! দুনিয়া তাদের হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছে। কিন্তু তারা দুনিয়া থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। অথচ তোমাদের থেকে দুনিয়া পিছু হটে যায়, আর তোমরা এর পেছনে পেছনে ছোটো। (হিলইয়াতুল আওলিয়া ৪/২১২)

দুনিয়া স্থায়ী আবাস নয়। এখানের সব কিছু ক্ষণিকের। কিছুকাল দুনিয়া উপভোগ করার পর এক সময় সব শেষ হয়ে যায়। দুনিয়া হলো প্রতারণার বাজার। দুনিয়ার ধোঁকায় যে পড়েছে, তার পরকল বরবাদ হয়েছে। দুনিয়া তার সবকিছু কেঁড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে কবরে আছড়ে ফেলেছে। খালি হাতে কবরে গিয়ে বুঝেছে, সে দুনিয়াতে কত বড় প্রতারণার স্বীকার হয়েছিল। দুনিয়ার কোনো সুখ-শান্তি, আনন্দ কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। পক্ষান্তরে আখেরাতের জীবন চিরস্থায়ী ও অনন্ত-অসীম। আখেরাতের আনন্দ ও নেয়ামত সবকিছুই চিরস্থায়ী। সুতরাং প্রকৃত জীবন শুধু আখেরাতেরই জীবন। এজন্য প্রকৃত বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে দুনিয়াতেই পরকালের পাথেয় ও পুঁজি সংগ্রহ করে। শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তিকে স্বীয় আয়ত্তাধীনে রেখেছে এবং মৃত্যুর পরের জন্য (অর্থাৎ পরকালের মুক্তির জন্য) নেকির পুঁজি সংগ্রহ করেছে, সে ব্যক্তিই প্রকৃত বীরপুরুষ ও বুদ্ধিমান। আর যে ব্যক্তি স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে আল্লাহর প্রতি ক্ষমার আশা পোষণ করে, মূলত সেই মূর্খ ও কাপুরুষ।’ (সুনানে তিরমিজি) রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালোবাসে এবং দুনিয়ার দ্বারা আনন্দিত হয়, তার অন্তর থেকে আখেরাতের ভয় দূর হয়ে যায়।’

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION