বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ১০:১৯ অপরাহ্ন
ভয়েস প্রতিবেদক:
টানা ৯ দিন ধরে কক্সবাজারে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ১ জুলাই থেকে ৯ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ৭৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া বিভাগ। কক্সবাজার উপকূলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে, ফলে সৈকতে লাল নিশান টাঙানো হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও অনেক পর্যটক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সমুদ্রে নেমে পড়ছেন।
সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর বায়ুচাপের তারতম্য বিরাজ করছে। এর ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কক্সবাজারসহ দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দর—চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রাকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
টানা বৃষ্টিপাতে কক্সবাজারের অর্ধশতাধিক গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার অনেক বাড়িঘর পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে বিপাকে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধসের ঝুঁকি রয়েছে।
অব্যাহত বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী প্রধান সড়কসহ হোটেল-মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এছাড়া, জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়াসহ নয়টি উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অনেক সড়ক ও উপসড়কে পানি উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে এবং পাহাড় ধসের শঙ্কা এখনও বিদ্যমান।
উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উখিয়ার ১০টি ও টেকনাফের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া উখিয়ার তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জলাবদ্ধতা ও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।
টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মতে, হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ৮টি, হ্নীলা ইউনিয়নে ৭টি, টেকনাফ পৌরসভায় ৫টি, টেকনাফ সদর ইউনিয়নে ৫টি, সাবরাং ইউনিয়নে ৭টি এবং বাহারছড়া ইউনিয়নে ৮টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘ভারী বর্ষণের ফলে কিছু গ্রামে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। পাশাপাশি পাহাড় ধসের সম্ভাবনা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
উখিয়ায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা, সবজি ক্ষেত, বীজতলা ও পানের বরজ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি গ্রামীণ সড়কগুলোর অবস্থাও করুণ হয়ে পড়েছে।
এছাড়া চকরিয়া, পেকুয়া ও রামু উপজেলার ৩০টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, যেখানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এসব এলাকায় ফসল ও বীজতলার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জলাবদ্ধতা ও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক রোহিঙ্গা পরিবার চরম দুর্ভোগে রয়েছে।’
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানিয়েছেন, ‘জুলাই থেকে ৯ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ৭৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সমুদ্র প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে এবং পাহাড় ধসের ঝুঁকি এখনও বিদ্যমান। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে আজ (বুধবার) বিকেল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে পারে।’
তিনি আরও জানান, সাগরে এখনো ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বলবৎ রয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সব মাছ ধরার ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন চলছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
ভয়েস/জেইউ।