বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মাত্র ২৪ ঘন্টায়!

হারুন উর রশীদ স্বপন:
করোনার ১৫ টন চাল চুরির ঘটনায় কক্সবাজরের পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাতকে প্রত্যাহার করার ২৪ ঘন্টার মাথায় তা আবার রদ করা হয়েছে। তাকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছিল। আর পেকুয়ায় নতুন ইউএনও হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা সিদ্দিকাকে। তবে এখন সবই স্থগিত হয়ে গেছে।

প্রত্যাহারের আদেশ হয়েছে ৩০ এপ্রিল। আর তা বাতিলের আদেশ হয়েছে ১ মে। দু’টি আদেশই দিয়েছেন একই ব্যক্তি। তিনি হলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা। তিনি নিশ্চয়ই ২৪ ঘন্টা আগে ‘অন্যায় আদেশ’ দিয়েছিলেন! নয়তো এত দ্রুত তিনি নিজেই আবার তা প্রত্যাহার করবেন কেন?

প্রশাসনের কর্তারা তাদের ‘ভুল’ যদি এত দ্রুত বুঝতে পারেন তাহলে দেশের উন্নতি এবং অগ্রগতি আরো ত্বরান্বিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

ঘটনা কি ঘটেছিল:
পেকুয়ার টইটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী ৩১ মার্চ করোনায় ত্রাণের জন্য ১৫ টন চাল বরাদ্দ নেন। কিন্তু ৬ এপ্রিল ওই চাল তুলে তিনি আর বিতরণ করেননি। ২১ দিন পর ২৭ এপ্রিল রাতে স্থানীয় একটি স্কুল ঘর থেকে ওই চাল উদ্ধার হয়। অত:পর ২৮ এপ্রিল রাতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। পরদিন ২৯ এপ্রিল চেয়াম্যানকে সাসপেন্ড করা হয়। তবে পুলিশ মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার করেনি। বলছে সে পলাতক। কিন্তু চাল উদ্ধারের পর তিনি সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন। আর দাবী করেছেন আইন মেনে বরাদ্দপত্র নিয়েই তিনি চাল তুলেছেন।

এই ঘটনার তাৎক্ষনিক প্রশাসনিক তদন্তও হয়েছে। ২৯ এপ্রিল সরেজমিন তদন্ত করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসার। তারপর ৩০ এপ্রিল ইউএনও সাঈকা সাহাদাতকেও প্রত্যাহার করা হয়। যদিও সেই প্রত্যাহারের আদেশ ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আবার রদ করা হলো।

এখানে কতগুলো গুরুতর বিষয় রয়েছে-
১.নিয়ম অনুযায়ী ইউএনও’র অনুমোদন ও স্বাক্ষর ছাড়া এই চাল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বরাদ্দ পাননি। মামলা হওয়ার আগে চাল উদ্ধারের পর চেয়ারম্যান তার বরাদ্দে ইউএনও’র অনুমোদন থাকার কথা দাবীও করেছেন। যদি চেয়ারম্যানের কথা অসত্য হয় তাহলে তিনি ইউএনও’র সই জাল করেছেন।

২.তদন্ত কমিটির তদন্তের ভিত্তিতেই চেয়ারম্যানকে সাসপেন্ড এবং ইউএনওকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল ধরে নেয়া যায়। কারণ এসব বিভাগীয় ব্যবস্থা প্রাথমিক তদন্ত ছাড়া হওয়ার নজীর নেই। প্রশাসনিক বিধিমালা অনুযায়ী সেটা করার সুযোগও নেই। তাহলে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কি সঠিক ছিলো না? তারা অসত্য তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে?

৩. উত্তোলন করা ১৫ টন চাল ২১ দিনেও বিতরণ করা হলোনা। চালের হদিসও পাওয়া যাচ্ছিল না। আর মামলা হলো চাল উদ্ধারের পরে। এই ২১ দিন চালের কোনো হিসাব কি ইউএনও নিয়েছেন? তিনি এসময় চুপ ছিলেন কেন?

৪. ইউএনওকে প্রত্যাহারের আদেশ বাতিল হলো কিসের ভিত্তিতে? তাকে প্রত্যাহারের আদেশে কোনো অনিয়ম ছিলো? যদি অনিয়ম থেকে থাকে তা জানা গেলো কিভাবে? এটা নিয়ে কোনো তদন্ত হয়েছে?

আমি কিছু ঘটনা আর তার প্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্ন করে গেলাম। জবাব মিলবে না হয়তো। কিন্তু প্রশ্নের মধ্যেই কখনো কখনো জবাব থাকে। কেউ খুঁজে দেখতে পারেন।

আবারো বলি, বাংলাদেশে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এত দ্রুত যে ‘প্রতিকার’ পেলেন ইউএনও সাঈকা সাহাদাত, সবক্ষেত্রে যদি এত দ্রুত কাজ হয়, তাহলে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নতি আর ঠেকায় কে?
এগিয়ে যাক বাংলাদেশ!

লেখক: সাংবাদিক

মেইল-swapansg@yahoo.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION