বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা আসবে শিগগিরই : আইন উপদেষ্টা

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আগামী জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা আসবে, যে নির্বাচনে সকলেই ভোট দিতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়েও ভয়াবহ তথ্য রয়েছে। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনটি হবে অনেক ভালো নির্বাচন।’

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেছে। এ সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পরবর্তী সরকার এসে অবশ্যই ধরে রাখবে। বিশেষ করে আইনি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ হয়রানি থেকে মুক্তি পেয়েছে।

আইন উপদেষ্টা তার লিখিত বক্তব্যে বিগত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত এক বছরে বিভিন্ন কার্যক্রম শেষ করেছে। সেগুলো হলো আইনি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আইনি সংস্কারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩, সংশোধন অন্যতম। যা সংশোধন করে আইনটিকে ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। এই আইনে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তের অধিকার সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী আপিল, সাক্ষী নিরাপত্তা এবং ভুক্তভোগীর ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে স্বতন্ত্র জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে মেধা, সুযোগের সমতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

দেওয়ানি কার্যবিধিতে সংশোধন করে দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী সংস্কার আনা হয়েছে। মৌখিক সাক্ষ্যগ্রহণের পরিবর্তে এফিডেভিটের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ, অনলাইনে সমন জারি এবং মূল মামলার অধীনেই রায় কার্যকর করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

ফৌজদারি আইন সংশোধনের মাধ্যমে গ্রেফতার ও রিমান্ড প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা হয়েছে। সেই সাথে অভিযুক্তের অধিকারের নিশ্চয়তা, জেন্ডার সংবেদনশীল শব্দ পরিহার, তদন্ত প্রক্রিয়াকে জবাবদিহির আওতায় আনা, মিথ্যা মামলার হয়রানি রোধ করাসহ বিভিন্ন সংশোধনী আনা হয়েছে।

আইন সংশোধন করে নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের মামলার ক্ষেত্রে মামলা-পূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার এবং প্রতি জেলায় একজনের স্থলে ৩ জন বিচারককে লিগ্যাল এইড অফিসে পদায়নের বিধান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আদালতের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বাইরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিরোধের আপস নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধনীর মাধ্যমে তদন্ত ও বিচার শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তদন্ত সম্পন্নে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তার জবাবদিহির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া, সাক্ষীদের সুরক্ষা, শিশু ধর্ষণ মামলার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং পুরুষ শিশু নিপীড়নকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন যুগোপযোগী বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত বিধিমালার আলোকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকলেও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড’ স্টিকার থাকলে বা জন্মসনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে পূর্বের সাইবার নিরাপত্তা আইনের নিপীড়নমূলক ধারাগুলো এবং এসবের অধীনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন করে জেন্ডার বৈষম্যমূলক বিধান বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া অনলাইনে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন করার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের পদ-সৃজনের ক্ষমতা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করে ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫’ এবং জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সরকারের আইন ও বিচার বিভাগে পদায়নের সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিচারপ্রার্থী জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিতকরণে দেশের সকল আদালত প্রাঙ্গণে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মামলার সর্বশেষ অবস্থা, শুনানির তারিখ এবং আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি কমেছে। একটি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে দক্ষ কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ কার্যক্রম চালু করার জন্য নীতিমালা প্রস্তুত হয়েছে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের সম্পত্তির হিসাব গ্রহণ এবং সংগৃহীত হিসাবের নথিগুলো পর্যালোচনা করে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রারদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য বিবরণী তৈরি করা হয়েছে।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের প্রসিকিউশন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। বিচার কার্যক্রম দ্রুততর করার লক্ষ্যে ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীদের অনলাইনে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের পত্রের আলোকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্র্যাকটিস ডিরেকশনস (Practice Directions) জারি করেছে। বিদ্যমান আদালত ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুইটি পারিবারিক আদালতকে ই-ফ্যামেলি কোর্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আইন ও বিচার বিভাগের ৫০ শতাংশ নথি ডি-নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের সত্যায়িত (Attestation) সেবাকে শতভাগ অনলাইন প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে। বিচারপ্রার্থী জনগণের জামিনপ্রাপ্তি সহজীকরণের লক্ষ্যে অনলাইনে বেইলবন্ড জমা দেওয়ার নিমিত্ত প্রথমবারের মতো সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। শীগগিরই পরীক্ষামূলকভাবে সফটওয়্যারটি ব্যবহার শুরু হবে।

রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহা : রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার বিষয়ে জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি এবং আইন ও বিচার বিভাগের এজাহার, চার্জশিটসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনার পর ১৫ হাজারেরও বেশি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। সুচারুভাবে সকল ভুক্তভোগীকে এই সুযোগ চলমান রাখার লক্ষ্যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এছাড়া সাইবার আইনের অধীনে ৪০৮টি স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত মামলা এবং জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৭৫২টি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক লাখ রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও স্বাধীন মতের মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পেয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকারের কার্যকালে আইন মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমে লক্ষণীয় গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিকৃত নথির সংখ্যা ১ হাজার ২৮৩টি। বিগত সরকারের একই সময়ে ৮৩৪টি নথি নিষ্পত্তি হয়েছিল। গত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগসহ অন্যান্য দফতরে ৩৯১টি বিষয়ে আইনি মতামত প্রদান করেছে। যা গত সরকারের আমলে ১৮০টি ছিল। এসময়ে সনদ, এফিডেভিট, দলিলসহ ৩৬ ধরনের মোট ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪৪ ডকুমেন্ট সত্যায়ন হয়েছে যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ। আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে রেকর্ড ১২টি অংশীজন মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে।

নতুন দায়িত্ব হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, গুম সংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো বিধিমালা ও প্রবিধানগুলোকে কোডিফাই করার কাজ শুরু হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট আমলে নিয়োগকৃত সকল আইন কর্মকর্তা পালিয়ে যাওয়ার কারণে গত এক বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আইন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করতে হয়েছে। সারা দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ৪ হাজার ৮৮৯ জন সরকারি আইন কর্মকর্তা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৭৪ জন অ্যাটর্নিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক ও প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে পাঁচ জন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন।
ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION