শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী:
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে, উগ্রপন্থিদের সঙ্গে মধ্যপন্থিরাও ছিল; যারা সামরিক পদ্ধতিতে শেষ রক্ষা হবে না বলে মনে করত এবং রাজনৈতিক সমাধানের কথা ভাবত। তবে আইয়ুব খান তো ঘোষণাই দিয়ে রেখেছিলেন যে, ছয় দফা দেওয়ার পরে মুজিবের সঙ্গে অস্ত্রের ভাষাতেই তিনি কথা বলবেন। তার চেলা মোনায়েম খাঁও, ওই পথেরই পথিক হতে চেয়েছিলেন। আপাত বিবেচনায় ছয় দফাতে অবশ্য ভয়ংকর কিছু ছিল না। দফাগুলোর ভিত্তিতে ছিল লাহোর প্রস্তাবের আদি রূপরেখা, যেখানে মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি হিসেবে একাধিক রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল। বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক একদিন লাহোরে গিয়ে ওই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন, যার ওপর ভর করে অসংশোধনীয় রূপে এককেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে, যে-রাষ্ট্র আদি প্রস্তাবের একেবারে প্রাথমিক শর্তটিই নাকচ করে দিতে চেয়েছিল। ২৬ বছর পর বাংলারই অপর এক নেতা ওই লাহোরে গিয়েই ছয় দফা কর্মসূচি উত্থাপন করে আদি প্রস্তাবটিকে পুনরুজ্জীবিত করার দাবি জানিয়েছিলেন। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা প্রমাদ গুনেছিল। কারণ ছয় দফাতে তারা এককেন্দ্রিক পাকিস্তানের ধ্বংসের বীজ দেখতে পেয়েছিল। পাকিস্তান যে ভাঙবে, সেটা অনিবার্যই ছিল। কিন্তু আপসরফা করে একটি ফেডারেল কাঠামো দাঁড় করিয়ে, আরও কিছুদিন হয়তো তাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতিটা কম ঘটত। কিন্তু নব্য-ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসকরা অতটা ছাড় দিতে প্রস্তুত ছিল না। তাদের পাকিস্তান এককেন্দ্রিক এবং সে-পাকিস্তানে পূর্ব শোষিত হবে পশ্চিমের দ্বারা। ছয় দফা সেই ব্যবস্থায় আঘাত করেছে। পাকিস্তানের শাসকরা মুজিবকে তাই এক নম্বর শত্রু বিবেচনা করে, কেবল কারাবন্দি করেই নিশ্চিন্ত হয়নি।
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলাতে জড়িয়ে প্রাণনাশ ঘটানো যায় কি না, দেখতে চেয়েছিল। সেই পদক্ষেপে অবশ্য সম্পূর্ণ উল্টো ফল ফলেছে, সারা বাংলা জুড়ে স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতার দাবিই উঠেছে। আইয়ুব বলেছিলেন যে, আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের কোনো উপায়ই নেই। কারণ ওটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদ যে এক সময়ের ‘লড়কে লেঙ্গে’ পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের চেয়েও অনেক বেশি প্রবল হয়ে উঠতে পারে এবং বলপ্রয়োগে দমন করতে গেলে তার প্রবলতা যে বাড়বে বৈ কমবে না, এই জ্ঞান রাষ্ট্রশাসকদের ছিল না। ফলে শেষ পর্যন্ত তাদের নতিস্বীকার করতে হলো। নতি নয়, পরাজয়ই। আগরতলা মামলা প্রত্যাহৃত হলো, শেখ মুজিবসহ মামলার সব অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেলেন এবং শেখ মুজিব বাঙালি জাতীয়তাবাদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বেরিয়ে এলেন। আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক ডেকেছিলেন, মুক্ত না হলে তিনি যোগ দেবেন না মুজিব এই শর্ত দিলেন। আইয়ুব খান সেই শর্ত মেনে নিতে এবং গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ শেখ মুজিবের সঙ্গে করমর্দনে বাধ্য হলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের কাছে এটি আইয়ুবের প্রথম পরাজয়। দ্বিতীয় ও শেষ পরাজয়টি ঘটল, যখন তিনি বাধ্য হলেন পদত্যাগে। পুনরায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন না, অর্থাৎ নির্বাচনে দাঁড়াবেন না এ রকমের ঘোষণায় কাজ হয়নি। তাকে প্রেসিডেন্টের পদই ছাড়তে হয়েছে। ওই পরাজয়ের মূল কারণ পূর্ববঙ্গের আন্দোলন। বাঙালিরা পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের চূড়ান্ত ফয়সালা করতে চাচ্ছিল; যেটা আইয়ুবের বুনিয়াদি গণতন্ত্র ও পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত সংখ্যাসাম্য নীতির কাঠামোর ভেতরে করাটা সম্ভব ছিল না। অমীমাংসিত জাতি সমস্যা অদমনীয় হয়ে উঠেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানে অ-পাঞ্জাবিরা এক ইউনিট ভাঙার দাবি তুলেছিল; এবং আইয়ুব রাজি না হলেও, তার উত্তরসূরি ইয়াহিয়া খান ওই দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ইতিহাসের আরও একটি কৌতুক ঘটল; সেটা এই যে, যে-পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করবার জন্য আইয়ুব খান চেষ্টা করছিলেন, সেই জাতীয়তাবাদ তাকে সাহায্য করল না। বরঞ্চ জুলফিকার আলি ভুট্টো সেটিকে আরও উগ্র পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে আইয়ুব যে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের যথোপযুক্ত রক্ষক নন সেটা প্রমাণ করার জন্য তৎপর হলেন এবং কিছু পরিমাণে সাফল্যও পেয়ে গেলেন। ভুট্টো জাতীয়তাবাদের সঙ্গে সমাজতন্ত্রকেও মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, ফ্যাসিবাদীরা যেমনটা করতে পছন্দ করে, এবং সে জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে তিনি দ্রুত জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন। আইয়ুবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ১৯৬৫-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তিনি অনেকটা উসকানিদাতার ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধে সুবিধাজনক ফল না পাওয়াতে, পশ্চিম পাকিস্তানে যে হতাশার মনোভাব দেখা দিয়েছিল, সেটিকে কাজে লাগাতে তিনি তৎপর হয়ে ওঠেন। দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছিল, স্বৈরশাসনের বাড়াবাড়িতে ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল, ধূর্ত ও বক্তৃতাবাগীশ ভুট্টো তাদের অসন্তোষকে উসকে দিয়েছেন এবং নিজেকে জাহির করেছেন মুক্তির প্রতিশ্রুতিদাতা হিসেবে। ওদিকে মুজিবের ছয় দফার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে, পাঞ্জাবি আমলা ও সেনাসদস্যের মধ্যে তিনি নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করছিলেন। আইয়ুবকে হটিয়ে দিয়ে তার জায়গায় বীর হিসেবে জায়গা করে নেওয়াটা ছিল ভুট্টোর রাজনীতির অন্যতম অভিপ্রায়। মূল লক্ষ্যটা অবশ্য ছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া। এর জন্য যে কোনো পদক্ষেপ নিতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। প্রয়োজনে পাকিস্তানকে ভাঙতেও অসম্মত ছিলেন না। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের উচ্চকণ্ঠ এই প্রচারক। সত্তরের নির্বাচনের পর তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতাকে পূর্ব-পশ্চিমে ভাগ করে দেওয়ার দাবিও তুলেছিলেন। কোনো মতেই তিনি বিরোধী দলের নেতা হিসেবে আসন গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন না বাঙালি শেখ মুজিবের শাসনকে মেনে নিয়ে তো নয়ই। পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করার ব্যাপারে তার ভূমিকার সঙ্গে, ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের হিন্দু মহাসভাপন্থিদের ‘জাতীয়তাবাদী’ তৎপরতার অনেকটা মিল দেখা যায়। ভুট্টোর তৎপরতা পূর্ববঙ্গে তো বটেই, পশ্চিম পাকিস্তানেও এক ইউনিটবিরোধী রাজনৈতিক মহলে শেখ মুজিবের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বলতা দিতে সহায়ক হয়ে উঠেছিল। এক পর্যায়ে আইয়ুব ভুট্টোকে আটক করেন, পরে আবার ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে আইয়ুবের নতি স্বীকার ঘটে ভুট্টোর কাছে নয়, শেখ মুজিবের কাছেই। তিনি তাকে কেবল মুক্তি দেননি, গোলটেবিলে ডেকে তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। আরও যা করেছেন তা ছিল রীতিমতো অমর্যাদাকর। সেটি হলো, শেখ মুজিবের সঙ্গে গোপন বৈঠক। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জি ডব্লু চৌধুরী ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের পরামর্শদাতা। তিনি জানাচ্ছেন যে, আইয়ুব টের পাচ্ছিলেন- সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, কেউ কেউ উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠেছেন এবং আইয়ুবের কর্মক্ষমতাতেও তাদের আগের আস্থাতে চিড় ধরেছে। সেটাকে আইয়ুব অবশ্য বড় রকমের বিপদ মনে করেননি। অশনি সংকেত শুনতে পাচ্ছিলেন পূর্ববঙ্গের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে, যার মুখপাত্র তখন শেখ মুজিব। আইয়ুব তাই মুজিবের সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। আয়োজনটা করে দিয়েছিলেন, দুপক্ষের শুভানুধ্যায়ী রাজনীতিক ও আমলারা। গোলটেবিল অধিবেশনের আড়ালে এবং প্রেসিডেন্টের ভবনেই ঘটে। ঠিক হয় যে, এক ধরনের সংসদীয় ব্যবস্থা চালু হবে, যাতে আইয়ুব প্রেসিডেন্ট থাকবেন, প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ মুজিব। কিন্তু এই সমঝোতা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। কেননা সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা এ রকম কোনো কিছুতে সন্তুষ্ট হবেন, এমন সম্ভাবনা ছিল না।
সমঝোতার জন্য শেখ মুজিবের গোপন আলোচনা চলছে শুনে এবং বিপদ ভেবে ভুট্টো প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েই তার বিরোধিতা করেছিলেন। আলোচনার খবরটা ফাঁস হয়েছিল সেনাবাহিনীর ভেতর থেকেই। বঞ্চনার-দরুন-অসন্তুষ্ট জেনারেলদের দুয়েকজনের সঙ্গে ভুট্টোর ইয়ার-দোস্তি ছিল। জেনারেলদের অসন্তোষ দমন করা হয়তো অসম্ভব ছিল না, ভুট্টোকে গুরুত্ব না দিলেও চলত, কিন্তু শেখ মুজিবকে অবজ্ঞা করবার কোনো উপায়ই দেখা যায়নি। তার সঙ্গে সমঝোতা যখন সম্ভব হলো না, আইয়ুব তখন পুনরায় সামরিক শাসন জারি করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু ভরসা করতে পারেননি। কারণ জেনারেলরা ঠিক করেছিলেন, নতুন করে সামরিক শাসন জারি করা হলে পুরো কর্তৃত্ব তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। বুদ্ধিমান আইয়ুব বার্তা পেয়ে গেলেন যে, এরপর ক্ষমতায় থাকার চেষ্টাটা হবে অপমানজনক ভাবে প্রস্থানের জন্য অপেক্ষা করা। এক সময় যেমন প্রস্থানের তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন তার তুলনাতেও আপাত-ধুরন্ধর, কিন্তু সেনাবাহিনীতে ভিত্তিবিহীন, ইস্কান্দার মির্জার জন্য। আইয়ুব মানে মানে সরে পড়লেন। ইয়াহিয়া খানও বিলক্ষণ বুঝেছিলেন যে, শাসনক্ষমতায় থাকতে হলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে, অর্থাৎ তখনকার পরিস্থিতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে, সমঝোতায় আসতে হবে। গোলটেবিল বৈঠকের আড়ালে এবং ক্ষমতা পাওয়ার আগের মুহূর্তে, তিনিও মুজিবের সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। ইয়াহিয়া তখন বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন বোঝা যায়। ক্ষমতায় যাবেন এবং যাতে টিকে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মোকাবিলা করবার ব্যাপারে আইয়ুবের ‘ভুল’গুলো করবেন না বলে ঠিক করেছিলেন।
গোপন বৈঠকে মুজিবকে তিনি ধারণা দিয়েছিলেন যে, অস্ত্রের ভাষায় কথা বলার হুমকি দিয়ে আইয়ুব মোনায়েমরা ভুল করেছিলেন এবং আইয়ুবের বুনিয়াদি গণতন্ত্রী ব্যবস্থার বদলে তিনি সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন দেবেন। পরে অবশ্য ইয়াহিয়া আরও ছাড় দেন। এক ইউনিট ভেঙে দেন, সংখ্যাসাম্য বিলুপ্ত করা হয়। ফলে প্রস্তাবিত গণপরিষদে পূর্ববঙ্গের সংখ্যাধিক্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ ঘটে। ইয়াহিয়া আশা করেছিলেন যে- নির্বাচন দিলে পূর্ববঙ্গের ভোট ভাগাভাগি হবে, কিন্তু শেখ মুজিব যে একচ্ছত্র হয়ে উঠবেন এমনটা ধারণা করেননি। গোয়েন্দারাও তাকে ওই রকমের আশাব্যঞ্জক খবরই দিচ্ছিল। বলাবাহুল্য তেমনটা ঘটেনি। পূর্ববঙ্গে প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৭৪.৯ ভাগ পেয়েছে আওয়ামী লীগ। অপরপক্ষে পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টো যে একচ্ছত্র ভোট পেয়েছেন তা নয়; পাঞ্জাবে পেয়েছেন শতকরা ৪১.৬, সিন্ধু প্রদেশে ৪৪.৯। খুব সামান্য ভোট পেয়েছেন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে, আর বেলুচিস্তানে যা পেয়েছেন তা একেবারেই নগণ্য।নির্বাচনের পর ইয়াহিয়া খান প্রথমে বলেই ফেলেছিলেন যে, মুজিবই হবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তখন অবশ্য তার আশা ছিল, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকবেন। নির্বাচনের আগে এবং পরে একান্ত ব্যক্তিগত বৈঠকে শেখ মুজিব তাকে ওই রকমের একটা ভরসা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ওই আশাতে বাদ সাধেন ভুট্টো তো বটেই, সেনাবাহিনীর অন্য জেনারেলরাও। পরিণতিতে ঘটে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ। ইতিহাসের এক বিশেষ মুহূর্তে পূর্ববঙ্গের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ তাদের নিজেদের জন্য একজন নেতা খুঁজছিল। এবং সে-নেতাকে তারা পেয়ে গিয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে; আচার-আচরণ, কথাবার্তা, ভাষার ব্যবহার সবদিক দিয়েই তিনি কেবল যে মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি ছিলেন তা নয়, মেহনতি মানুষও তাকে প্রিয়জন মনে করতেন, তিনিও তাদেরকে আপনজন হিসেবে দেখতেন। তার প্রিয় উক্তি ছিল, ‘দেশের মানুষকে আমি ভালোবাসি এবং দেশের মানুষ আমাকে ভালোবাসে।’ তবে মধ্যবিত্তই তাকে পেয়ে বিশেষভাবে খুশি হয়েছে, এবং তার ওপর ভরসা করেছে। তাকে সমর্থন জানিয়েছে। পাকিস্তানি শাসকদের জন্য তার ছয় দফা হয়ে দাঁড়িয়েছিল একটি টাইম বোমা; তাদের শঙ্কা ছিল যে ওটি বিস্ফোরণের অপেক্ষায় আছে এবং সেটির বিস্ফোরণও ঘটেছিল বৈকি, সত্তরের নির্বাচনে। ওই বিস্ফোরণের পরে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে অর্বাচীন সশস্ত্র জেনারেলরা গণহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। পরিণতিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। যার রূপকার ছিলেন শেখ মুজিব।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভয়েস/আআ/সূত্র: দেশ রূপান্তর