সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
দ্বীনের দাওয়াতে আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান জরুরি উখিয়ায় বিশেষ অভিযানে অ’স্ত্র-গুলিসহ রোহিঙ্গা যুবক আটক লাইট হাউজ এলাকায় ফুফাতো ভাইয়ের হাতে মামাতো ভাই নিহত বাংলাদেশের ইতিহাসে জুলাই সনদ স্বাক্ষর একটি স্মরণীয় ঘটনা, দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ ঢাকায় গোলটেবিলে বক্তারা: কক্সবাজার হবে দক্ষিণ এশিয়ার নতুন অর্থনৈতিক ফ্রন্টলাইন প্রশাসনের নিরবতা: কক্সবাজারে মাদক কেনাবেচায় ‘রাখঢাক’ নেই চট্টগ্রাম ইপিজেডে ১৭ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে  বহুল প্রত্যাশিত ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষর আজ, সংসদ এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জেলায় সর্বোচ্চ পাস রামু ক্যান্টনমেন্ট কলেজে, সবচেয়ে পিছিয়ে ঈদগাহ কলেজ টেকনাফে পাহাড়ে দুই গ্রুপের গোলাগুলি, আতঙ্কে গ্রামবাসী

দ্বীনের দাওয়াতে আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান জরুরি

ইকবাল হোসেন ইমন:
‘দাওয়াহ’ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিভাষা। এর অর্থ ডাকা বা আমন্ত্রণ জানানো। পরিভাষায় দাওয়াহ হলো মহান আল্লাহর পথের দিকে তথা ইসলামি জীবনব্যবস্থার দিকে মানুষকে আহ্বান করা। আর এর আরেক অর্থ দ্বীন প্রচার। যাদের মধ্যে দাওয়াতি কাজ করা হবে তাদের দিক বিবেচনায় এটি সাধারণত দুই প্রকার। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষকে দাওয়াত এবং ব্যাপকভাবে সর্বসাধারণের মাঝে দাওয়াত। ইসলামে এই উভয় প্রকার দাওয়াতের হুকুম স্থান, কাল ও পাত্রভেদে সব মুসলিমের ওপর ফরজ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে।’ (সুরা আলে ইমরান ১১০) আল্লাহ আরও বলেন, ‘আপনি মানুষকে আপনার রবের পথে আহ্বান করুন হেকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে।’ (সুরা নাহল ১২৫) দাওয়াত প্রদানের ক্ষেত্রে যুগের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা বাঞ্ছনীয়। যুগে যুগে প্রেরিত সব নবী রাসুলকে আল্লাহ তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকে তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি, যাতে তাদের পরিষ্কারভাবে বোঝাতে পারে।’ (সুরা ইব্রাহিম ৪)

এ জন্য দাওয়াতের ক্ষেত্রে বিদ্যমান যুগের ভাষা বুঝে, সেই যুগের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই দাওয়াত দিতে হবে। তাহলেই তা অধিক ফলপ্রসূ ও যুক্তিযুক্ত হবে। সব যুগের নবী-রাসুল তাদের যুগের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই মানুষকে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা দেখিয়েছেন। যেমন শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগ ছিল সাহিত্যের উৎকর্ষের যুগ। আরব জাতি তখন ভাষাজ্ঞান ও জাত্যভিমানে গর্ব করত। আল্লাহতায়ালা তখন অতি উচ্চাঙ্গের ভাষাশৈলী দিয়ে কোরআন অবতীর্ণ করেন। যার ফলে শুধু আরবরাই নয়, গোটা বিশ্বই বিস্মিত হয়ে যায়। এ ছাড়াও তখন ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কাবাসীরা বিপজ্জনক বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা জনসাধারণকে জানানোর জন্য পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করত। মহানবী (সা.) তাদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের এই পদ্ধতিটি গ্রহণ করেছিলেন।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইসলামের শুরুর যুগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা সাফা পর্বতে আরোহণ করলেন এবং কুরাইশদের বিভিন্ন গোত্রকে আহ্বান জানালেন। তারা জমায়েত হলো। যে নিজে আসতে পারল না, সে তার প্রতিনিধি পাঠাল, যাতে দেখতে পায়, ব্যাপার কী। সেখানে আবু লাহাব ও কুরাইশরাও আসল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বলো তো, আমি যদি তোমাদের বলি যে, শত্রু বাহিনীর সৈন্যরা উপত্যকায় চলে এসেছে, তারা তোমাদের ওপর হঠাৎ আক্রমণ করতে প্রস্তুত। তবে তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে? তারা বলল, হ্যাঁ, আমরা আপনাকে সর্বদা সত্য পেয়েছি। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে ক১িঠন শাস্তির ভয় প্রদর্শন করছি। তখন আবু লাহাব তাকে বলল, সারাদিন তোমার ওপর ধ্বংস নামুক। এ জন্যই কি তুমি আমাদের জমায়েত করেছ? তখন অবতীর্ণ হয়, ‘ধ্বংস হোক আবু লাহাবের হাত দুটি এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও।’ (সহিহ বুখারি ৪৭৭০) এরূপ মুসা (আ.)-এর যুগে ছিল জাদুবিদ্যার ব্যাপক প্রচলন। আল্লাহতায়ালা মুসা (আ.)-কে যুগের প্রেক্ষাপটে জাদুবিদ্যার ন্যায় মুজিজা প্রদান করলেন। তার যথাযথ কার্যক্রমে ফেরাউনের জাদু পরাস্ত হয়েছিল এবং সব জাদুকর ইমান এনেছিল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর জাদুকররা সিজদাবনত হলো।’ (সুরা তাহা ৭০)

অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ সুলাইমান (আ.)-কে অসংখ্য যোগাযোগ শক্তি দান করেছিলেন। তিনি পাখিদের ভাষাও বুঝতেন। দাউদ (আ.)-এর সময়ে বনি ইসরাইলে সংগীতের ব্যাপক চর্চা ছিল। তাই দাউদ (আ.) অত্যন্ত সুললিত কণ্ঠে আল্লাহর বাণী আবৃত্তি করতেন। ঈসা (আ.)-এর যুগে বস্তুবাদ, গ্রিক দর্শন ও চিকিৎসাবিদ্যার চরম উৎকর্ষ সাধিত হওয়ায় মহান আল্লাহ ঈসা (আ.)-কে চিকিৎসাবিজ্ঞানের মুজিজা দান করেছিলেন।

বর্তমান যুগ আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। মিডিয়া, গণমাধ্যম, ইন্টারনেট ইত্যাদি ছাড়া বিশ^ অচল। বর্তমান বিশ^ এগুলো ছাড়া কল্পনা করা যায় না। সব মানুষ আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা প্রভাবিত কিংবা সবাই এর ব্যবহার করছেন। এমতাবস্থায় ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে দাঈদের জন্য সময়োপযোগী এই প্রযুক্তির জ্ঞান রাখা এবং এর যথাযথ ব্যবহার আবশ্যক। দাঈদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান ইসলাম প্রচারে কতটা সহায়ক সেটার কিছু উদাহরণ উল্লেখ করা হলো।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স : বর্তমানে অফিস, কলকারখানা, গবেষণাগার, শিক্ষাক্ষেত্রসহ সর্বত্রই এআই তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার অধিক হারে হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি গবেষণার কাজেও এআইকে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোরআন-হাদিসের রেফারেন্স খুঁজে বের করা, প্রাথমিক ব্যাখ্যা করা, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের গবেষণাপত্র বের করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে করা যায়। এই বিষয়গুলো দাঈদেরকে ইসলাম প্রচার ও জ্ঞানার্জনে সহযোগিতা করবে।

তা ছাড়া এআই ব্যবহার করে নকল ছবি বা ভিডিও বানিয়ে কারও সম্মানহীন বা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো আজকাল অহরহ হচ্ছে। এসব বিষয়ে দ্বীনের দাঈদের জ্ঞান না থাকলে তারা নিজেরাও বিভ্রান্ত হতে পারে।

ওয়েবসাইট : ওয়েবসাইট ইন্টারনেটের এমন এক জায়গা, যেখানে তথ্য, ছবি, লেখা, ভিডিও ইত্যাদি একসঙ্গে সাজানো থাকে এবং যে কেউ তা ব্রাউজার দিয়ে দেখতে পারে। এর ইসলামিক লেখা, গবেষণা, বইপত্র যেমন ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তেমনি একজন দাঈকে সারা বিশ্বের স্কলারদের থেকে ছড়িয়ে দেওয়া জ্ঞান অর্জনে সহযোগিতা করে। একসময় শুধু একটি হাদিস শোনার জন্যও মুহাদ্দিসরা অনেক দেশ সফর করেছেন। এখন পুরো বিশ্ব একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। এর সহযোগিতা গ্রহণ করা একজন দাঈর জন্য অবশ্য বাঞ্ছনীয়।

মোবাইল অ্যাপস : পবিত্র কোরআন, হাদিসগ্রন্থাবলি এবং ইসলামিক সব ধরনের বই প্রত্যেক মানুষের হাতে হাতে থাকতে পারে অ্যাপসের মাধ্যমে। একটি নির্দিষ্ট বিষয় খোঁজার জন্য বড় বইয়ের পাতার পর পাতা উল্টানোর প্রয়োজনীয়তা এখন কম। একজন দাঈর জন্য এই উপকার গ্রহণ করে, এর যথাযথ ব্যবহার করে মানুষের মাঝে ইসলাম ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করা জরুরি।

সোশ্যাল মিডিয়া : এগুলো ফেসবুক, ইউটিউবের মতো প্লাটফর্ম। যেগুলো মুহূর্তেই লাখো মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর অতি সহজ প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে ভালো দখল থাকলে জ্ঞান অর্জন এবং ইসলাম প্রচার উভয়ই সহজ হবে।

প্রযুক্তির ভালো ও খারাপ উভয় দিক রয়েছে। এটা একটি ছুরির মতো, যার খারাপ ব্যবহারে প্রযুক্তি বা ছুরি কোনোটিই দায়ী নয়, বরং মানুষ এটার জন্য দায়ী। সব ক্ষেত্রে সামর্থ্য থাকতেও প্রযুক্তির কল্যাণ গ্রহণ না করাটা বোকামির শামিল। সব আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার দাঈকে যুগোপযোগী করবে এবং তিনি সময়োপযোগী পদ্ধতিতেই মানুষের মাঝে ইসলাম প্রচার করতে পারবেন।

লেখক : শিক্ষার্থী, আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

সূত্র: দেশরূপান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION