বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার

কক্সবাজার ভয়েস ডট কম

শাহীন হাসনাত:

‘উত্তরাধিকার’ হচ্ছে মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদে জীবিতদের অধিকার। এটাকে আরবিতে মিরাস বলা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তরাধিকার লাভের মূলভিত্তি হচ্ছে- জন্মগত সম্পর্ক ও নিকটাত্মীয়তা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদের অংশ আছে। তা কম হোক অথবা বেশি এ নির্ধারিত অংশ।’ -সূরা আন নিসা: ৭

ইসলাম আবির্ভাবের আগে নারীদের কোনো উত্তরাধিকার ছিল না। এমতাবস্থায় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি উত্তরাধিকারে নারীদের স্বত্ব লাভ নিশ্চিত করেন। আর কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কারা কতটুকু অংশ পাবে তা আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনাও করে দিয়েছেন। কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তিতে নারী হিসেবে- স্ত্রী, কন্যা, মাতা, বোন, বৈমাত্রেয় বোন, পৌত্রী, দাদি ও নানিরা উত্তরাধিকারী স্বত্ব লাভ করেন। অবস্থাভেদে এ অংশ ও অধিকারের হেরফের হয়। কিন্তু কারও বঞ্চিত হওয়ার কোনো উপায় নেই। তারপরও মানুষ উত্তরাধিকার সম্পদ থেকে নারীদের বঞ্চিত করে, এটা সম্পূর্ণ অন্যায় ও ইসলামবিরোধী গোনাহের কাজ। ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে নারীদের বিন্দুমাত্র অবহেলা করা হয়নি। পবিত্র কোরআনে যাদের অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে মাত্র চারজন হলো- পুরুষ, আর বাকি ৮ জন নারী। পবিত্র কোরআনে কন্যার অংশ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যা কন্যারা পাবেই, পক্ষান্তরে একই পিতা-মাতার ঘরে জন্মগ্রহণ করার পরও পবিত্র কোরআনে পুত্রের অংশ নির্দিষ্ট করে তাদের জাবিল ফুরুজের (হিস্যাভোগী) অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। পুত্রদের রাখা হয়েছে আসাবা (অবশিষ্ট অংশভোগী) হিসেবে। উপরন্তু পুত্রের অংশ পাওয়ার ব্যাপারে কন্যার অংশকে আসল ভিত্তি বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা এটাই প্রমাণ হয়, ইসলাম পুত্রের তুলনায় কন্যার অধিকারকে প্রাধান্য দিয়েছে।

ইসলামি উত্তারাধিকার আইন একটি বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক বণ্টন ব্যবস্থা। তবে পুত্রের দ্বিগুণ সম্পত্তি পাওয়ার কারণ হলো, কন্যাসন্তান যদিও পুত্রের অর্ধেক পায়। তথাপি সবকিছু মিলিয়ে হিসাব করলে দেখা যায়, কন্যার সম্পত্তির পরিমাণ পুত্রের চেয়ে কম নয়। কারণ, ইসলামের বিধান অনুযায়ী দেনমোহর বিয়ের জন্য অতীব জরুরি বিষয়। স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তার ইজ্জত ও পদমর্যাদার সম্মানজনক স্বীকৃতিস্বরূপ মোহর আদায় করতে হয়। মোহরানার অর্থ স্ত্রীর জন্য এক বাড়তি সঞ্চয়। যার এক পয়সাও সংসারের কাজে খরচ করতে হয় না। একদিকে স্ত্রীর যাবতীয় ব্যয়ভার, একই সঙ্গে সন্তানাদির ভরণ-পোষণ, শিক্ষা, চিকিৎসা এমনকি স্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনের মেহমানদারির দায়দায়িত্ব স্বামীর ওপর ন্যস্ত। এর বাইরে আর্থসামাজিক অনেক ধরনের দায়দায়িত্ব তো আছেই। সুতরাং অর্থসম্পদের যতটা প্রয়োজন পুরুষের, ততটা নারীর নয়। উত্তরাধিকার বণ্টনের ক্ষেত্রে পুরুষকে নারীর দ্বিগুণ অংশ দেওয়ার মধ্যে এসব বিষয়ই বিবেচিত হয়েছে। একজন নারী তার পিতার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে তার ভাইয়ের তুলনায় অর্ধেক পেলেও সে তার মাতা, দাদা, স্বামী ও বৈপিত্রেয় ভাই অবস্থা বিশেষে অন্যান্য আত্মীয় থেকেও মিরাস লাভ করে। যা একত্রে যোগ করলে ভাইয়ের তুলনায় কম নয় বরং বেশি হয়। প্রায়ই দেখা যায়, পিতা-মাতার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা বোনদের সম্পত্তি দখল করে রাখে। এমন লোভী এবং স্বার্থপর ভাইদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। বোনদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগদখল করার কারণে পরকালে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অনেক সময় দেখা যায়, বোন সম্পত্তি নিলে কিংবা চাইলে ওই বোনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা হয় না, এটাও অন্যায়। কারণ, ভাইবোনের সম্পর্ক হচ্ছে রক্তের সম্পর্ক। হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ভাইবোনের সম্পর্কের স্থায়িত্ব পৈতৃক সম্পত্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। যদি কোনো ব্যক্তি সম্পত্তির লোভে বোনকে আদরযতœ করে তাহলে সে কোনো সওয়াব পাবে না। বোনকে আদরযতœ করতে হবে তার সম্পর্কের জন্য। আর সম্পত্তি দিয়ে দিতে হবে, আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য। এটা তার অধিকার। তদ্রুপ, পিতার মৃত্যুর পর মাকেও তার প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিতে হবে। মায়ের দেখভালের কথা বলে তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। মাকে দেখভাল করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, এটা তার অধিকার। এ কারণেই তো হাদিসে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। সম্পত্তি দিয়ে বোন, মেয়ে বা মাকে পরিমাপ করা যাবে না। এ বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোতে আরও বিস্তারিত ও স্পষ্ট আলোচনা হওয়া আবশ্যক।

লেখক : মুফতি ও ইসলামবিষয়ক লেখক

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION