মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ইসলামে সকালের ঘুমের ক্ষতিকর প্রভাব

মো. আফসারুল আলম মামুন:
দিনের হাজারও কোলাহল ও কর্মক্লান্তির বিপরীতে রয়েছে রাতের স্তব্ধ নীরবতা। আর এই স্তব্ধ নীরবতার মধ্যেই আল্লাহতায়ালা বান্দার জন্য রেখেছেন বড় এক নেয়ামত- ঘুম। যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। শরীরের প্রয়োজন ছাড়া আরও নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে ঘুমে। ঘুম প্রশান্তি আনে। তবে পৃথিবীর সবকিছু যেভাবে নিয়ম মেনে অতিবাহিত হয়, তেমনি ঘুমের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম আর সময়। দিনের ঘুম শরীর আর মনের জন্য খুবই ক্ষতিকর, বিশেষ করে ফজর ও আসরের নামাজের পর ঘুম খুবই ক্ষতিকর। এর ফলে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধে, বিভিন্ন রোগের উপসর্গ সৃষ্টি হয়।

সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তার এক ছেলেকে সকালে ঘুমাতে দেখে বলেন, ‘উঠো, তুমি এমন সময় ঘুমাচ্ছ যখন রিজিক বণ্টন হচ্ছে! দিনের ঘুমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। উত্তম অভ্যাস, নির্বুদ্বিতা ও বোকামি। উত্তম অভ্যাস, দ্বিপ্রহরের ঘুম। যা হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস ছিল। নির্বুদ্ধিতা, দিনের প্রথম প্রহরের ঘুম, যা দুনিয়া ও আখেরাতের কাজ থেকে বিরত রাখে। বোকামি, আসরের নামাজ পরবর্তী ঘুম। আসরের পর ঘুমানোর কারণে বিবেকের বিলুপ্তি ঘটে।

এখানে প্রথম প্রহরের ঘুম বলতে বুঝানো হয়, ফজরের পরের সময়টুকুতে ঘুমিয়ে কাটানো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে একমাত্র ফজরের সময় সবচেয়ে কমসংখ্যক মুসল্লি মসজিদে উপস্থিত হন। যার অন্যতম কারণ রাতে দেরি করে ঘুমানো এবং সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা। কিছু মানুষ অহেতুক সময় নষ্ট করে রাতে দেরি করে ঘুমান। কোনো কাজ না থাকার পরও দেখা যায়, অযথা রাত জাগরণ করছেন। বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার পরও দেখা যায় অহেতুক মোবাইল স্ক্রল করতে করতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ইসলামের নির্দেশ হলো, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের চেষ্টা করা। নবী মুহাম্মদ (সা.) একাধিক হাদিসে এশার পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনিও এশার নামাজের পর অহেতুক কথা বলাকে অপছন্দ করতেন। বোখারি শরিফের ৫১৪ নম্বর হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজের আগে ঘুমানো এবং নামাজের পর অহেতুক কথাবার্তা বলাকে অপছন্দ করতেন।

স্বাস্থ্য বিষয়ক একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, রাত জাগার ফলে বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব ঘটে। যার মধ্যে রয়েছে মানসিক সমস্যার আশঙ্কা, চেহারায় মলিনতা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেনের শক্তি কমে যাওয়া, সিদ্ধান্ত নেওয়ার শক্তি হারিয়ে ফেলা, হার্টের সমস্যা, দেহঘড়িতে নানাবিধ সমস্যাসহ নানা বিষয় পরিলক্ষিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্লিপ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় রাত জাগার কুফল সম্পর্কে বেশ কিছু আশ্চর্যজনক তথ্য পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, মানুষের জিনের ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে রাত জাগার ফলে পরিবর্তন দেখা যায়। অনিয়ন্ত্রিত রাত জাগার ফলে প্রায় ৯৭ শতাংশ দেহঘড়ির নিয়ন্ত্রণ রক্ষাকারী জিন, তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য রাত বানিয়েছেন। যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পারো এবং দিনকে করেছেন আলোকোজ্জ্বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি বড় অনুগ্রহশীল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’ -সুরা গাফির : ৬১

কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আর তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে আবরণ ও নিদ্রাকে আরামপ্রদ এবং দিনকে করেছেন জাগ্রত থাকার সময়।’ -সুরা ফুরকান : ৪৭

সুরা আন নমলের ৮৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি দেখে না যে, আমরা রাতকে সৃষ্টি করেছি, যেন তারা তাতে বিশ্রাম নিতে পারে এবং দিনকে করেছি আলোকিত? নিশ্চয় এতে নিদর্শনাবলি রয়েছে সেই কওমের জন্য যারা ইমান এনেছে।’

সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে শরীর ও মন প্রফুল্ল হয়। আর একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি কখনো এই নেয়ামত উপভোগ করতে পারে না। এ ছাড়া সকালের বাতাসে মুনাফিকদের শ্বাস থাকে না। যার কারণে মুসলিম কখনো ফজরের পর বিছানায় গা লাগাতে পারে না। ছাত্রজীবনে পড়ার অন্যতম সময় হলো- ফজরের পর। যে ছাত্র নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করে পড়তে বসে, তার পড়াশোনার মধ্যে বরকত থাকে। ভালো ফলাফলের অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে ফজরের পরের সময়টুকুর সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার করা। রিজিক, স্বাস্থ্য ও সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা। আল্লাহর কাছে সময়ের বরকতের জন্য দোয়া করা।সূত্র: দেশ রূপান্তর।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION