রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৩:৩৪ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীর সঙ্গে ইসরায়েলের একটি গোপন যুদ্ধ চলছে। ইরাকের ইরানপন্থি মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো গত দুই সপ্তাহে প্রায় ৪০টি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলার মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও রকেট হামলাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ শুরুর পর এসব হামলার ঘটনা শুরু হয়। কিন্তু গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের এক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর এসব হামলার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
লেবাননে ইরানের পৃষ্ঠপোষকতায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল্লাহ এখন ইরানের সমর্থিত একটি বৃহত্তর জোটের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করছে। গাজার যুদ্ধের এক বছর পর হামাস দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং লেবাননে ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান ও স্থল অভিযান হিজবুল্লাহকে চাপে রেখেছে। এ অবস্থায় ইরান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য মিত্রগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করছে। এসব গোষ্ঠী ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক মাইকেল নাইটস বলেন, ইরাক থেকে ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তারা হিজবুল্লাহকে সমর্থন জানাতে হামলাগুলোকে উচ্চতর স্তরে নিয়ে গেছে।
ইরানের লক্ষ্য হলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের ‘প্রতিরোধ অক্ষের’ সদস্যদের একে অপরকে সমর্থনের মাধ্যমে সংঘর্ষ চালিয়ে যাওয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে। ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী এরই মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে এবং লোহিত সাগরে জাহাজেও হামলা চালিয়েছে।
গত বছর ইসরায়েল বেশ কয়েকটি বিমান হামলা এবং একটি বড় ধরনের স্থল অভিযান চালিয়েছে সিরিয়ায়। ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো সেখানে নিজেদের সরবরাহ লাইন বিস্তৃত ও রক্ষা করার চেষ্টা করছে। এই রুট দিয়ে ইরান থেকে লেবাননে হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সরবরাহের পাঠানো হয়।
হিজবুল্লাহর সদস্যদের কাছে থাকা হাজার হাজার পেজার বিস্ফোরণের ঘটনার পর সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, এটিও ইসরায়েলের একটি ধ্বংসাত্মক অভিযান ছিল।
গত মাসে ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনী সিরিয়ার মেসিয়াফ অঞ্চলে ইরানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি অস্ত্র উৎপাদন কারখানায় অভিযান চালিয়ে গোপন নথি ও তথ্য জব্দ করে। সিরিয়ার ওপর ইসরায়েলের এই হামলা হামাসের আক্রমণের পর বেড়ে গেছে।
সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলাগুলো সিরিয়ার হোমস শহরের একটি শিল্প এলাকা, লাতাকিয়ার একটি গুদাম, হামার পার্শ্ববর্তী সামরিক এলাকা এবং পশ্চিম দামেস্কের মেজ্জাহ শহরতলীর একটি আবাসিক ভবনকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।
এপ্রিল মাসে ইরানি কুদস বাহিনীর একজন সিনিয়র কমান্ডার, তার ডেপুটি ও কয়েকজন কূটনীতিক নিহত হন ইরানের দামেস্ক কনস্যুলেটে এক ইসরায়েলি হামলায়। ইরান এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়।
এখন পর্যন্ত ইসরায়েল ইরাকে কোনও হামলা চালায়নি। তবে তারা সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত ইরাকের ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স অব ইরাক (আইআরআই) জোটের নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। গাজার সংঘাতের কয়েক সপ্তাহ পর এই জোট গঠিত হয় এবং ইসরায়েল ও মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার দায় স্বীকার করে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইরাক থেকে আসা হুমকি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি ও প্রয়োজনে যেকোনও ব্যবস্থা নেব।
ভয়েস/আআ