শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন
ইকরামুল ইসলাম:
মর্যাদা ও গুরুত্বের বিবেচনায় রমজান বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। মুসলমানরা সারা বছর এ মাসের অপেক্ষায় থাকেন। এ মাসের আগমনে তাদের ইমান, আমল ও ইবাদতে ভিন্ন এক আমেজ প্রকাশ পায়। কথাবার্তা ও চলাফেরায় সংযমের আবহ তৈরি হয়। বস্তুত রমজান মাসের সিয়াম সাধনার বিষয়টি ব্যক্তির বাহ্যিক অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি আত্মোন্নয়ন ও আত্মসংশোধনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণী উল্লেখ করা হলো।
তাকওয়া অর্জন হয় : তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন একজন মুমিনের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কেননা তাকওয়ার ভিত্তিতেই বান্দা মহান আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান হিসেবে বিবেচিত হন। আর রমজান মাসের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে তাকওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অতি সহজে অর্জন হয়। তাকওয়া একদিকে বান্দাকে আল্লাহর অতি কাছাকাছি পৌঁছে দেয়, অন্যদিকে রিজিকের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রেখে এক প্রশান্তির জীবন দান করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করে দেবেন এবং তাকে এমন স্থান থেকে রিজিক দান করবেন, যা তার ধারণার বাইরে।’ (সুরা তালাক ২-৩)
পূর্বের গুনাহ মাফ হয় : পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালন, তারাবির নামাজ ও অন্যান্য আমলের মাধ্যমে বান্দা তার অতীত জীবনের পাপমোচনের মাধ্যমে নিজেকে পূতপবিত্র করার সুবর্ণ সুযোগ পায়। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আর যে ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি ২০১৪)
কোরআন চর্চায় আত্মনিয়োগ : পবিত্র কোরআনের সঙ্গে রমজানের সম্পর্ক গভীর। এ মাসের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ হলো পবিত্র কোরআনের অবতরণ। রমজান আগমনের সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের মাঝে কোরআন চর্চার জোয়ার আসে। রমজানের রাতে তারাবি, তাহাজ্জুদ এবং দিনের বেলার তেলাওয়াতে মুমিনের হৃদয় প্রভুপ্রেমে জেগে ওঠে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন বন্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার প্রতিপালক, দিনে আমি তাকে পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আর কোরআন বলবে, আমি রাতে তাকে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রাসুল (সা.) বলেন, সেদিন উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
জাহান্নাম থেকে মুক্তির বার্তা : রমজান আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর প্রতি বেশ কিছু ঘোষণা আসে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে, তখন দুষ্ট জিন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, হে কল্যাণের প্রত্যাশী, অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের অনুসন্ধানী, থেমে যাও। আর এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহতায়ালা অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দেন। আর এমনটা রমজানের প্রতি রাতে হয়ে থাকে।’ (তিরমিজি)
সওয়াব অর্জনের অবারিত সুযোগ : রমজানে মুমিন বান্দা তাকওয়া অর্জন ও অতীত গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের পাশাপাশি অল্প আমলে অধিক সওয়াব অর্জন ও মর্যাদা লাভের অবারিত সুযোগ পায়। রমজান আগমনের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক আমলের সওয়াব ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমল ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা আমার জন্য রাখা হয় এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। কেননা রোজাদার নিজের প্রবৃত্তির তাড়না ও খাবার গ্রহণ কেবল আমার জন্য পরিহার করে। রোজাদারের জন্য দুটি খুশির মুহূর্ত রয়েছে। একটি ইফতারের মুহূর্ত আর অন্যটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের মুহূর্ত।’ (সহিহ বুখারি ১৯০৪)
যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানি (রা.) বর্ণিত অপর হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করে এবং এ কারণে রোজাদারের সওয়াব থেকে একটুও কমানো হয় না।’ (তিরমিজি ৮০৭)
এমনিভাবে রমজানের রোজা পালনের বিষয়টি মুমিনের জীবনের নানাবিধ কল্যাণ ও সুফল বয়ে আনে। তবে রোজার প্রভাবকে ধরে রাখতে রোজাকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও হেফাজত করতে হবে। চোখ-কান ও জবানের হেফাজত, মিথ্যা-গিবত ও অনর্থক কথা পরিহার এবং কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজাকে পবিত্র রাখা রাখতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (রোজা থেকে) মিথ্যা কথা ও কাজ পরিহার করল না, তার পানাহার পরিহারে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি ১৯০৩)
ভয়েস/আআ