শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

পরোপকারে উদ্বুদ্ধ করেছেন নবীজি

মো. আবদুর রহমান:
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে কেউ একা বাস করতে পারে না। সমাজের প্রত্যেক মানুষ একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল। সমাজে বসবাসরত প্রত্যেক মানুষ পরস্পরের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে। সুখ-দুঃখ পরস্পর ভাগ করে নেয়। মানবিকতার দাবিতে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে হয়। এভাবে একে অন্যের প্রয়োজনে বা উপকারে আসার নামই পরোপকার। রাসুল (সা.) ছিলেন সবচেয়ে বড় পরোপকারী এবং তিনি সবাইকে পরোপকারে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পরোপকার মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজে নিষেধ করো। আর আল্লাহকে বিশ্বাস করো।’ (সুরা আলে ইমরান ১১০)

আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি অনুযায়ী একজন মুসলমান কেবল অপর মুসলমানকে নয়, বরং সমাজের অন্য মানুষের বিপদেও পাশে এসে দাঁড়াবে, এটিই ইসলামের মহান শিক্ষা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (সহিহ বুখারি) তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার একশটি প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’

পরোপকার মানুষকে মর্যাদার আসনে সমাসীন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব মনীষী স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন, তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন পরোপকারী। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন পরোপকারের মূর্ত প্রতীক। তিনি নিজে সবসময় মানুষের উপকার করতেন। অন্যকেও উপদেশ দিতেন মানুষের উপকার করতে। মানুষের উপকার করে তিনি আনন্দিত হতেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর কাছে কোনো কিছু চাওয়া হলে তিনি কখনো না বলতেন না।’ (সহিহ মুসলিম) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজান মাসে তিনি আরও অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। আর রমজানের প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে দেখা করতেন এবং তারা একে অপরকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল (সা.) প্রবাহমান বায়ু অপেক্ষাও অধিক দানশীল ছিলেন।’

পরোপকারের জন্য রাসুল (সা.)-এর সাহাবিরা একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতেন। যায়েদ ইবনে আসলাম (রা.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘ওমর (রা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, রাসুল (সা.) (তাবুক যুদ্ধের সময়) আমাদের দান-সদকা করার নির্দেশ দেন। সৌভাগ্যক্রমে ওই সময় আমার সম্পদও ছিল। আমি (মনে মনে) বললাম, যদি আমি কোনো দিন আবু বকর (রা.)-কে অতিক্রম করে যেতে পারি, তাহলে আজই সেই সুযোগ। ওমর (রা.) বলেন, আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নিয়ে এলাম। রাসুল (সা.) বললেন, তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য তুমি কী রেখে এসেছ? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ। আর আবু বকর (রা.) তার পুরো সম্পদ নিয়ে এলেন। রাসুল (সা.) বললেন, হে আবু বকর! তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য কী রেখে এসেছ? তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলকেই রেখে এসেছি। আমি (মনে মনে) বললাম, আমি কখনো আবু বকর (রা.)-কে অতিক্রম করতে পারব না।’ (তিরমিজি)

সমাজের গরিব, দুস্থ, অভাবী ও অসহায় মানুষকে উপকার করার প্রতি ইসলাম অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। সুযোগ হলে সাধ্যমতো তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা করা, খাবার খাওয়ানো এবং খোঁজখবর নেওয়া উচিত। পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মহান আল্লাহ গরিব, অসহায় ও মিসকিনদের খাবার দান করার কথা বলেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তাকে দুটি পথ প্রদর্শন করেছি। অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি কি জানেন, সেই ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে দাসমুক্ত করা কিংবা দুর্যোগ ও সংকটের দিনে এতিম, আত্মীয়স্বজন ও ধুলো-ধূসরিত মিসকিনদের অন্নদান করা।’ (সুরা বালাদ ১০-১৬) অভুক্ত ব্যক্তিকে আহার্য দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষের কল্যাণ সংশ্লিষ্ট যত কাজ আছে, সেগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম হচ্ছে দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাবার দান করা।’ (সহিহ বুখারি) বস্তুত মানুষের সেবা করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই গরিব, দুস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিত।

মানবপ্রেম ও মানুষের সেবা করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি অনেক ফজিলতের কাজ। মানুষের সেবা করার একটি ফজিলত হলো, এর দ্বারা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ শুধু তার আমল দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসনাদে আহমদ) নেক আমলের পাশাপাশি আল্লাহর রহমত থাকলেই মুক্তি পাওয়া যাবে। আল্লাহর রহমত লাভের সবচেয়ে সহজ পথ হলো, তার সৃষ্টির প্রতি সহযোগিতা ও উপকারের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION