শুক্রবার, ২৭ Jun ২০২৫, ০৯:৪০ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
১২ দিনের তীব্র সংঘাতের পর থেমেছে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ। কিন্তু এই বিরতি যতটা না স্বস্তির, তার চেয়েও বেশি প্রশ্নের। যুদ্ধের পর ইরান কী করবে—সে প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্ব কূটনীতির কেন্দ্রে।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) প্রাথমিক বিশ্লেষণ বলছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, বরং কিছু সময়ের জন্য বিলম্বিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্মিলিত বিমান হামলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, তবে তা ইরানের পরমাণু সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়—এমন ধারণাই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সারা দেশে একযোগে শুরু হলো এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাসারা দেশে একযোগে শুরু হলো এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা
বিশ্লেষকদের শঙ্কা, এই হামলা ইরানকে হয়তো আরও আগ্রাসী করে তুলতে পারে। ইরান ইতিমধ্যে জানিয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থামাবে না। যে বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন, তাদের জায়গায় নতুনদের নিয়োগ এবং স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠলেই, নতুন উদ্যমে কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার পথ বেছে নিতে পারে দেশটি। অর্থাৎ আঘাতের বদলে আরও সুরক্ষা চেয়ে, ইরান হয়তো এখন আরও বেশি ‘প্রতিরক্ষা সক্ষমতা’ গড়ে তুলবে—এমনটা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ইরানের অভ্যন্তরে এই প্রশ্নটিই এখন প্রবল হয়ে উঠছে। উত্তর কোরিয়ার উদাহরণ সামনে রেখে অনেকে মনে করছেন, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই হয়তো ভবিষ্যতের হামলা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে বছরের পর বছর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ থাকলেও, দেশটি যখন সফলভাবে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তখন আর কেউ হামলা চালাতে সাহস করেনি—এই বাস্তবতা ইরানকে প্রভাবিত করতেই পারে।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানি সংসদ আইএইএ-এর সঙ্গে সহযোগিতা সীমিত করতে একটি বিল পাস করেছে, আর কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তা ‘এনপিটি’ চুক্তি থেকেও সরে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন।
রাবিতে হলের ছাদ থেকে পড়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টারাবিতে হলের ছাদ থেকে পড়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন—ইরানের ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করা প্রায় ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম কোথায়? সেটি কি ধ্বংস হয়েছে, না কি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল? এই মাত্রা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির এক ধাপ নিচে, অর্থাৎ ভবিষ্যতে দ্রুত বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জনে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলে আন্তর্জাতিক মহলে আবারও আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এখনই সময় ‘ইরানিদের সঙ্গে বসার এবং একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির’।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ‘সবার জয়’ হয়েছে: ট্রাম্পইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ‘সবার জয়’ হয়েছে: ট্রাম্প
তবে আলোচনা সহজ হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান শর্ত—ইরান যেন তাদের ভূখণ্ডে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করে। কিন্তু ইরান দীর্ঘদিন ধরেই এই দাবিকে তাদের সার্বভৌম অধিকারে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখিয়ে প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।
ইরান এখন সাময়িকভাবে কৌশলগতভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকলেও, ইতিহাস বলছে, আঘাতপ্রাপ্ত শক্তি অনেক সময় আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে চলমান যুদ্ধবিরতি কি একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির শুরু, নাকি নতুন সংঘাতের বিরতির মুহূর্ত—তা নির্ধারিত হবে আগামী কয়েক সপ্তাহের কূটনৈতিক কার্যক্রমের ওপর।
পারমাণবিক অস্ত্র, আঞ্চলিক আধিপত্য ও আন্তর্জাতিক চাপ—এই তিন প্রভাবের টানাপোড়েনে ইরান ও বিশ্ব এখন এক অনিশ্চয়তা আর উত্তেজনার মধ্যে দাঁড়িয়ে। আলোচনা শুরু হলেও, সমাধান আসবে কিনা—সে উত্তর এখনো অজানা।
ভয়েস/আআ