সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’, বাংলাদেশে কি প্রভাব পড়বে? পরকীয়ার ক্ষতি ও ভয়াবহতা বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেবে: সালাহউদ্দিন আহমদ আবহাওয়া : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত মিথ্যা মামলায় নিজামী, মীর কাসেম ও সালাউদ্দিন কাদেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে:মির্জা ফখরুল এনসিপি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত হলেই সই করবে: আখতার দুই অস্ট্রেলিয়ান নারী ক্রিকেটার ভারতে শ্লীলতাহানির শিকার  মহেশখালীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৪ মামলায় অর্থদণ্ড মহেশখালী উপজেলার জামায়াত নেতা মোঃ নুরুল ইসলাম সহ তিন জনের মৃত্যুতে ডক্টর আযাদের শোক সাংবাদিক সরওয়ার আজম মানিকের মা আর নেই, মহেশখালী প্রেস ক্লাব’র শোক প্রকাশ

পরকীয়ার ক্ষতি ও ভয়াবহতা

মুফতি উবায়দুল হক খান:
মানবসমাজের পবিত্রতম বন্ধন বিয়ে। বর্তমান যুগে এই পবিত্র বন্ধনের ওপর আঘাত এসেছে পরকীয়া নামক ভয়ংকর ব্যাধির মাধ্যমে। পরকীয়া শুধু নৈতিক অবক্ষয় নয়, এটি একটি সামাজিক মহামারী। কোরআন ও হাদিসে এর ভয়াবহ পরিণতির বিষয়ে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। কারণ এটি মানুষকে পাপ, ধ্বংস ও লাঞ্ছনার গভীর গহ্বরে নিক্ষেপ করে।

সংজ্ঞা ও প্রকৃতি : পরকীয়া অর্থ, বিবাহিত অবস্থায় স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা। ইসলামি পরিভাষায় একে ব্যভিচার বলা হয়। ব্যভিচার এমন এক অপরাধ, যা আল্লাহতায়ালা সরাসরি হারাম ঘোষণা করেছেন এবং দুনিয়া ও আখরাতে এর শাস্তি কঠিন। আধুনিক সমাজে এই পাপটিকে নানা রঙে সাজিয়ে ‘সম্পর্ক’, ‘ভালোবাসা’ বা ‘মুক্ত জীবন’ নামে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা চলছে, কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এটি স্পষ্ট ব্যভিচার।

কোরআনের দৃষ্টিতে ভয়াবহতা : মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটেও যেও না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং একেবারে নিকৃষ্ট পথ।’ (সুরা ইসরা (৩২) এ আয়াতটি শুধু ব্যভিচারকে নিষিদ্ধই করেনি বরং এর ‘নিকটে যাওয়া’ অর্থাৎ এমন কোনো কাজ বা সম্পর্ক যা ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তাও নিষিদ্ধ করেছে। ইসলামি সমাজে দৃষ্টি সংযম, পর্দা, নৈতিকতা, বিয়ের বিধান, এই সবই ব্যভিচার প্রতিরোধের জন্য।

অপর এক স্থানে মহান আল্লাহ ব্যভিচারকারীদের পরিণতি সম্পর্কে বলেন, ‘যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্য স্থির করে না, কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না, যে কেউ এসব করবে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কেয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং সে তাতে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায় থাকবে।’ (সুরা ফুরকান ৬৮-৬৯) এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয়, পরকীয়া বা ব্যভিচার শুধু সামাজিক অপরাধ নয়, এটি আল্লাহর কাছে এমন একটি অপরাধ, যার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তি নির্ধারিত।

হাদিসের দৃষ্টিতে ভয়াবহতা : রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যভিচারকে সবচেয়ে গুরুতর পাপের মধ্যে গণ্য করেছেন। এক ব্যক্তি নবীজির কাছে এসে জানতে চায়, ইমানের পর সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি? নবীজি (সা.) বলেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। প্রশ্নকারী জানতে চায়, এরপর কোনটি? নবীজি (সা.) বলেন, ভরণপোষণ দেওয়ার ভয়ে সন্তানকে হত্যা করা। সে জানতে চায়, এরপর কোনটি? নবীজি (সা.) বলেন, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করা। (সহিহ মুসলিম)

অপর হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে, সে ব্যভিচারের সময় মুমিন থাকে না।’ (সহিহ বুখারি) অর্থাৎ পরকীয়া এমন এক ঘৃণ্য কাজ, যা মানুষকে সাময়িকভাবে ইমানের বৃত্তের বাইরে ঠেলে দেয়।

সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষতি : পরকীয়া পরিবার ভাঙনের প্রধান কারণ। একবার পরকীয়ার আগুন লাগলে তা শুধু দুজন মানুষকেই নয়, সন্তান, আত্মীয়স্বজন, এমনকি সমাজকেও জ্বালিয়ে দেয়। সন্তান হারায় পিতা-মাতার প্রতি বিশ্বাস, পরিবার হারায় সম্মান, সমাজ হারায় নৈতিক ভারসাম্য। এর ফলে জন্ম নেয় মানসিক অসুস্থতা, অপরাধ, হত্যা, আত্মহত্যা ও অবিশ্বাসের সংস্কৃতি।

ইসলাম পরিবারকে সমাজের মূল একক হিসেবে দেখেছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম।’ (তিরমিজি) যে স্বামী বা স্ত্রী পরকীয়ায় লিপ্ত হয়, সে এই হাদিসে পরিপন্থি কাজ করে। সে পরিবার ধ্বংসকারী ও সমাজদ্রোহী।

দুনিয়ার শাস্তি : ইসলাম পরকীয়ার শাস্তি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করেছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ব্যভিচারী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ উভয়ের প্রত্যেককে একশত বেত্রাঘাত করো।’ (সুরা নুর ২) এটি অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি। আর যদি বিবাহিত অবস্থায় কেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তাহলে এর শাস্তি ‘রজম’ তথা প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড, যা শরিয়তের কঠোরতম শাস্তির একটি। এ শাস্তির উদ্দেশ্য শুধুই শাস্তি নয়, বরং সমাজ থেকে এই পাপ দূর করা। যেসব দেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে এই শাস্তি কার্যকর করা হয়।

আখেরাতের শাস্তি : হাদিসে এসেছে, ‘ব্যভিচারকারী কেয়ামতের দিন আগুনের জুতায় চলবে, আগুনের পোশাক পরবে, আগুনের বিছানায় শুবে।’ (বায়হাকি)

এ ছাড়াও কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা ব্যভিচারকারীর মুখ কালো করে দেবেন, চোখ নত করে দেবেন এবং লজ্জায় সে মাথা তুলতে পারবে না। এই ভয়াবহ পরিণতি শুধু একজন ব্যভিচারীর নয়, বরং তাদেরও যারা এমন কাজকে প্রচার করে বা সমর্থন করে।

ইসলামের নির্দেশনা : ইসলাম মানুষের প্রকৃত স্বভাবকে সম্মান করে তাকে পবিত্র জীবনের পথ দেখিয়েছে। পরকীয়া থেকে বাঁচার জন্য কোরআন ও হাদিসে কয়েকটি উপদেশ এসেছে। এক. দৃষ্টি সংযম করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে।’ (সুরা নুর ৩০) দুই. নারী-পুরুষের পর্দা রক্ষা করা। অনর্থক মেলামেশা ও একান্ত আলাপ থেকে বিরত থাকা। তিন. বিয়েকে সহজ করা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিয়ে করতে সক্ষম, সে যেন বিয়ে করে, কারণ বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত করে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে।’ (সহিহ বুখারি) চার. আল্লাহভীতি অর্জন করা। যে মানুষ আল্লাহকে ভয় করে, সে কখনো গোপনে পাপ করতে পারে না। পাঁচ. সুস্থ পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও আস্থা রাখলে পরকীয়ার সুযোগ থাকে না।

আধুনিক সমাজে এর রূপ : আজ পরকীয়া শুধু বাস্তব জীবনে নয়, বরং ভার্চুয়াল জগতেও ভয়ানক রূপ নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে ওঠা অবৈধ সম্পর্ক অনেক সংসার ভেঙে দিচ্ছে। ইসলাম এ ধরনের ‘গোপন সম্পর্ক’, ‘চ্যাটে প্রেম’, ‘ভার্চুয়াল ব্যভিচার’, সবকিছুকেই হারাম ঘোষণা করেছে। কারণ পাপের শুরু হয় হৃদয় থেকে আর এই যোগাযোগই হৃদয়ের দূষণ ঘটায়।

পাপ থেকে বিরত থাকা : পরকীয়া শুধু একটি ব্যক্তিগত ভুল নয়, এটি আল্লাহর বিধান অমান্য, সমাজের শৃঙ্খলা বিনষ্ট এবং পরিবার ধ্বংসের কারণ। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি এমন অপরাধ যার ভয়াবহতা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই বহন করতে হয়। তাই আমাদের উচিত নিজেদের পরিবারকে এবং সমাজকে এই ভয়াবহ পাপ থেকে রক্ষা করা।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর।’ (সুরা তাহরিম ৬)

পরকীয়া থেকে দূরে থাকা শুধু পাপ বর্জন নয়, এটি মানবতার রক্ষা, পরিবারের স্থিতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ। যে ব্যক্তি পরকীয়ার লোভ থেকে নিজেকে রক্ষা করে, মহান আল্লাহ তার ইমানকে শক্তিশালী করেন, দুনিয়ায় শান্তি দেন এবং আখেরাতে জান্নাত দান করেন।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিআতুস সুফফাহ আল ইসলামিয়া, গাজীপুর

ভয়েস/আআ/সূত্র: দেশ রূপান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION