বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৪১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

‘লকডাউন’ রুখে দেওয়ার ঘোষণা পুলিশের, কী করবে আওয়ামী লীগ?

বিবিসি বাংলা:
বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করছেন, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন তারা এ কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দিবেন।

এর আগে গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে নাশকতার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ বলছে, এসব ঘটনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিবিসি বাংলার কাছে পাল্টা অভিযোগ করে বলছেন, “সরকার তাদের মদদপুষ্ট সাম্প্রদায়িক শক্তিকে এগুলো করাচ্ছে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ চাপানোর জন্য।”

দুই হাজার চব্বিশ সালের অগাস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় কবে হবে সেটি ১৩ই নভেম্বর বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করবে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল গত ২৩শে অক্টোবর এটি জানিয়েছিলো। এরপর থেকে ঢাকাসহ কিছু জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুনের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।

বিদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ও দলটির মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলছেন, “ক্যাঙ্গারু কোর্ট বানিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ভুয়া রায় দেয়ার চেষ্টার বিরুদ্ধেই” তারা লকডাউন কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছেন।”

ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, গত এগার দিনে পনেরটি জায়গায় ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, আর গত দুই দিনে ৯টি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে।

“১৩ই নভেম্বর নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। ঢাকার মানুষ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আমরা সবাই মিলে এটি রুখে দিবো। ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে,” এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ অবশ্য বলছেন, আওয়ামী লীগ তাদের নেত্রীর মামলার রায়ের বিষয়টিকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।

“এতে তাদের খুব একটা সুবিধা হবে না। তবে রাজনৈতিক মীমাংসা না হলে বারবার এ ধরনের পরিস্থিতি হতেই থাকবে, যা মোকাবেলার সামর্থ্য পুলিশের নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সময়ে ঝটিকা মিছিল আর সামাজিক মাধ্যমে সরব থেকে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়ে আসছিলো আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা।

বিশেষ করে চলতি বছরের মে মাসে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারির পর মূলত দলটির সভানেত্রীর ভার্চুয়াল বক্তৃতা আর বাংলাদেশে ঝটিকা মিছিলই মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছিলো। এর আগে গত নভেম্বরে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছিলো সরকার।

কিন্তু এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের কথা জানানোর পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো ঢাকা কেন্দ্রিক কর্মসূচিও ঘোষণা করলো দলটি।

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য এক ভিডিও বার্তায় সম্প্রতি ১০ থেকে ১৩ই নভেম্বর পর্যন্ত বিক্ষোভ এবং ১৩ই নভেম্বর ঢাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করলে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় সরকার ও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এর প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশও করেছে। জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ নামক একটি মঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। সর্বশেষ গত দুদিনে বেশ কিছু বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।

রোববারই সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় ১৩ নভেম্বর ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকেই জানানো হয় যে , কয়েকটি জেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছে।

বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ১৩ই নভেম্বর ঢাকা লকডাউন নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা নেই বলে মনে করেন তারা।

এরপরেও সোমবার ঢাকায় বাসে আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এমনকি মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ের সামনেও একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

এদিনই এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ১৩ই নভেম্বর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে সতর্ক আছে সরকার, কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না।

এরপর সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি জানান জনমনে আতঙ্ক ও আশঙ্কার কারণে সবাইকে আশ্বস্ত করতেই তিনি সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন।

তিনি বলেন, “কিছুদিন ধরে কার্যত নিষিদ্ধ একটি দল অপপ্রচারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে। গত কয়েকদিনে ককটেল নিক্ষেপ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।”

“কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল ও তাদের সহযোগীরা আত্মগোপনে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অপচেষ্টা করছে। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। তবে ১৩ তারিখ নিয়ে আশঙ্কার কারণ নেই। ১৩ তারিখ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিবো,” সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন মি. আলী।

যদিও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এবং দলটির একজন মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত সহিংসতা কিংবা নাশকতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিবিসি বাংলাকে মি. আরাফাত বলেছেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সুযোগ নিয়ে সরকারের প্রশ্রয় পাওয়া সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো এ ধরনের নাশকতা করতে পারে। আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করবে।”

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন দলটির সভানেত্রী নিজে তৃণমূল নেতাদের সাথে কথা বলছেন। দলের অন্য সিনিয়র নেতারাও এ নিয়ে কাজ করছেন।

তবে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর আত্মগোপন কিংবা দেশের বাইরে অবস্থানের পর এ ধরনের কর্মসূচি সফল করার মতো অবস্থা এখন আওয়ামী লীগের আছে কি না সে প্রশ্নও আছে।

যদিও দলটির মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে তা সফল করার আহবান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ কর্মসূচি সফল করবে। ঢাকাকে পুরো বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন দেয়া হবে।”

কিন্তু এই কর্মসূচি ঘোষণার পর ঢাকাসহ বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাগুলোর জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে সরকার। সরকারের অভিযোগ, আওয়ামী লীগই এই নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে।

নাশকতার দায় আওয়ামী লীগ নিচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মি. আরাফাত বলেন, আওয়ামী লীগ এই রাজনীতি করে না।

বাহাউদ্দিন নাসিম বলছেন, “জনপ্রিয় দল হিসেবে আমরা জনমতকে শ্রদ্ধা করি। কথিত আদালতের নামে শেখ হাসিনাকে সাজা দেয়ার নাটক সৃষ্টি করেছে সরকার। লকডাউন কর্মসূচির মাধ্যমে সেই জনমতেরই প্রতিফলন ঘটবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

যদিও পুলিশ ও সরকারের দিক থেকে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের তৎপরতা তারা কঠোরভাবেই দমন করবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দুদিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে যা হচ্ছে তাতে মানুষের আতঙ্কিত হওয়াই স্বাভাবিক বলে তিনি মনে করেন।

“রায় হলে আওয়ামী লীগ ব্যাকফুটে যাবে। তাই তারা এটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে আতঙ্ক তৈরি করতে চাইলে সেটি ঠেকানো কঠিন। ২০১৩-১৪ সালেও এমন দেখা গেছে। ৫ই অগাস্টের পর রাজনৈতিক মীমাংসার দিকে যাওয়া দুই তরফেরই রিকনসিলিয়েশন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা চলবে। পুলিশ দিয়ে সমাধান হবে না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

ভয়েস/আআ/সূত্র:বিবিসি বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION