সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫০ অপরাহ্ন
স্বাস্থ্য ডেস্ক:
ক্রম পরিবর্তনশীল বিশ্বে নিজেকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখাটা এখন বড় এক চ্যালেঞ্জ। বৈজ্ঞানিক নানা আবিষ্কারের ফলে জীবন যাপন হয়ে গেছে খুব সহজ। হয়ে গেছে খুব আরামদায়ক। ফলে নিষ্ক্রিয়তা বাড়ছে। হাঁটা, দৌড়ানো ইত্যাদি কায়িক শ্রমের কাজ কমছে। সঙ্গে বাড়ছে অসংক্রামক ব্যাধিও। অথচ সুস্থতার জন্যে চাই ব্যস্ততা!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মোট মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। প্রায় ২৫ শতাংশ স্তন ও কোলন ক্যান্সার, ২৭ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৩০ শতাংশ হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণও এটি।
তাই কাজের ধরন যদি হয় ডেস্কে বসে তাহলে প্রতি আধঘণ্টা পর পর ছোট্ট বিরতি নিন। উঠে দাঁড়ান, একটু হাঁটুন। প্রতিদিন সকালে পত্রিকাটা দাঁড়িয়ে পড়ুন, কিচেনের কাটাকুটিগুলোও করুন দাঁড়িয়ে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। সন্তানের সঙ্গে খেলাধুলাও হতে পারে দৈহিকভাবে সচল থাকার একটি দারুণ উপায়!
বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব ছোটবেলায় এমনকি পাঁচ বছর বয়সের আগে থেকেই যেসব শিশু খেলাধুলা-দৌড়ঝাঁপের মধ্য দিয়ে অধিকতর সক্রিয় থাকতে অভ্যস্ত তাদের সুষম মনোদৈহিক বিকাশ এবং পরবর্তী জীবনে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। আবার যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন ও কর্মচঞ্চল থাকেন তাদের মধ্যে বিষণ্নতার প্রকোপ কম; মেন্টাল ফিটনেসও তাদের তুলনামূলক বেশি।
শরীরের সুস্থতা কিন্তু মনেও সুখ এনে দেয়! একটা গল্প আছে এমন – দুর্ঘটনায় এক পিতা তার ছেলেকে হারান। ছেলের মৃত্যুশোকে কাজকর্ম প্রায় বন্ধ। শরীরে দেখা দিচ্ছে নানান রোগের আলামত! একদিন তার ছোট্ট মেয়েটা আবদার করলো- বাবা! আমাকে একটা নৌকা বানিয়ে দেবে? কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় করে তিনি কাঠের একটি নৌকা বানালেন। নৌকাটি মেয়ের হাতে তুলে দিয়ে তার মনে হলো, ওটা বানানোর এই কয়েক ঘণ্টা তিনি পুত্রশোকের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত ছিলেন। কারণ ছেলের মৃত্যুর পর এই প্রথম তিনি এতটাক্ষণ ছেলেকে নিয়ে ভাবার সময় পাননি। এরপর তিনি কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন এবং একসময় পুত্রশোক কাটিয়ে সুস্থ-কর্মক্ষম হয়ে উঠলেন।
আনন্দময় কর্মব্যস্ততা শরীর-মন দুয়ের জন্যেই স্বস্তিদায়ী ও স্বাস্থ্যকর! গবেষক এবং নিউরো-সায়েন্টিস্টরাও এই বিষয়ে একমত। কানাডার ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিস্ট প্রফেসর ইয়ানিক গ্রিপ, ৬৫ বছর বয়সে অবসরে গেছেন এমন ১০০১ জন সুইডিশ নাগরিককে দুবছর পর্যবেক্ষণ করেন।
প্রফেসর গ্রিপের মতে, প্রবীণদের কর্মসম্পৃক্ততা, বিশেষত সেবাধর্মী কাজে ব্যস্ততা, তাদের সুস্থতার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে তারা উদ্যমী থাকেন, মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডেও সক্ষম থাকেন।
শরীরকে সচল রাখতে দৌড়, হাঁটা, ব্যায়াম ইত্যাদি জরুরি। আর মনকে সচল রাখতে মেডিটেশন, অটোসাজেশন এবং আত্মউন্নয়নমূলক নানা কাজে জড়িত থাকাও জরুরি। ফরাসি সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো একবার লিখেছিলেন, “একজন মানুষ নিষ্ক্রিয় হয় না। কারণ সে চিন্তায় নিমগ্ন থাকে। একটি দৃশ্যমান শ্রম আছে এবং একটি অদৃশ্য শ্রম আছে।”
দেহ ও মন –এ দুইয়ের সচলতা ও পরিশ্রমই পারে দুইকে সুস্থ সবল রাখতে। তাই দৈনন্দিন জীবনের নানা নানা জটিলতার মাঝেও দেহ-মন সচল রাখতে নিতে হবে সক্রিয় উদ্যোগ। সময় বের করে হাঁটতে হবে, দৌড়াতে হবে।
মেডিটেশন করতে হবে। পাশাপাশি, সামাজিক ও আত্মিক কাজেও নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে। যত ব্যস্ত তত সুস্থ, যত আরাম তত ব্যারাম – এই সহজ সূত্রটি অনুসরণ করতে পারলে নগর জীবনের মাঝেও আমরা পারবো নিজেদের ফিটনেস ধরে রাখতে।
লেখক: কো-অর্ডিনেটর, কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাব