বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০২:২০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

বিহারের পথ দখল করে স্কুল ভবন নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা: রামু ট্রাজেডির আশংকা

চৌফলদন্ডী উত্তর রাখাইনপাড়া বৌদ্ধ বিহার, ছবি: কক্সবাজার ভয়েস ডট কম।

আবদুল আজিজ:
কক্সবাজারের চৌফলদন্ডীতে শত বছরের বৌদ্ধ বিহারের পথ দখল করে ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে চলছে উত্তেজনা। এতে করে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা। এনিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার কথা জানিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী উত্তর রাখাইনপাড়া এলাকায় সাড়ে তিন শত বছরেরও বেশি সময় ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতি নিদর্শন হিসাবে দাড়িয়ে আছে ‘সদ্ধম্মসিরি’ নামের বৌদ্ধ বিহার। এর পাশে রয়েছে মেধা বিকাশের আরেক নিদর্শন উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্প্রতি, বিদ্যালয়টি ভবণ সম্প্রসারণে সরকারিভাবে আলাদা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করে প্রশাসন। এই ভবনটি নির্মাণের জমির একটি অংশ পড়েছে বিহারের একমাত্র চলাচলের রাস্তার উপর। ভবনটি নির্মিত হলে বিহারের যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়বে। তাই, ভবন নির্মাণের নকশা পরিবর্তন করে বিহারের পথ অক্ষুন্ন রেখে স্কুল ভবনটি নির্মাণের পক্ষে স্থানীয়রা।

একদিকে বৌদ্ধ বিহার, অন্যদিকে স্কুল। এই দুটি প্রতিষ্ঠান চায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা। কিন্তু, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র স্কুলের নামে জমি ভোগ দখল করার জন্য বৌদ্ধ বিহারের সামনে ভবন নির্মাণের পায়তারা শুরু করে। এনিয়ে স্থানীয় মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় উস্কানী নিয়ে সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতে করে রামুর মত আরেকটি ট্রাজেডি সৃষ্টি করতে চায় ওই প্রভাবশালী চক্র। তাই, এসব বিয়টি নিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পৃথক দুটি স্মারকলিপি দিয়েছেন বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি এবং ওই এলাকার রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন।

জানাগেছে, গত সাড়ে ৩শত বছরের ঐতিহ্যবাহি বৌদ্ধ বিহারের পাশে গত ১৯৭৬ সালে চৌফলদন্ডি উত্তর রাখাইন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন ওই সময়ের বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ প্রয়াত উঃঞাত্রা মহাথের। বিদ্যালয়টি শুরুতে মন্দির ভিত্তিক স্কুল ছিল। পরবর্তীতে দিনদিন শিক্ষার্থী বৃদ্ধি হওয়ায় ওই বিহারাধ্যক্ষের প্রচেষ্টায় ১৯৮৩ সনে এলজিআরডি কর্তৃক একটি দুইকক্ষ বিশিষ্ট আধাপাকা স্কুল গৃহ নির্মাণে বরাদ্দ দিলে বিহারাধ্যক্ষ প্রতিবেশীদের সহযোগীতা নিয়ে বৌদ্ধ বিহারের সামনে খোলা জায়গার উপর স্কুল গৃহটি নির্মাণ করেন। তখন থেকে ওই স্কুলগৃহটি উত্তর রাখাইন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে চলমান রয়েছে। এলাকাবাসী সহযোগিতায় বিহারাধ্যক্ষ উঃঞাত্রা মহাথের তার নিজস্ব পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে ৪ জন শিক্ষক বেতন-ভাতা ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী কয়েক বছর ধরে বহন করে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে যান। তারপর বিদ্যালয়টি সরকারি অনুমোদন লাভের জন্য তিনি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্বুদ্ধ করলে স্থানীয় আব্দু শুক্কুর নামের ব্যক্তি বিদ্যালয়টি অনুমোদন লাভের জন্য ১৯৮৭ সনে মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর ০.৬০ শতক জমি দান করে দলিল সম্পাদিত করেন। এরপর বিদ্যালয়টি ২০১৩ সাল থেকে জাতীয়করণকৃত উত্তর রাখাইন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে রূপ পায়। কিন্তু, সম্প্রতি বিদ্যালয়টির আরও একটি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করে স্থানীয় প্রশাসন। এতে শুরু হয় বিপত্তি। কারণ, স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রটি পাশের বৌদ্ধ বিহারের চলাচলের একমাত্র পথ বন্ধ করে স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য চেষ্টা করলে বিহার পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তা বাঁধা দেয়। ফলে শুরু হয় দন্ধ। একারণে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে ওই এলাকার ইউপি সদস্য শাহ জাহান ও তার লোকজন।

জানতে চাইলে উত্তর রাখাইনপাড়া ‘সদ্ধম্মসিরি’ বৌদ্ধ বিহারের ভান্তে ভদন্ত শাসন রক্ষিতা কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘আমরা চাই বিহার এবং স্কুলের কোনো ক্ষতি না হয়ে ভবন নির্মাণ করা হোক। কিন্তু বিহারের সামনে স্কুল নির্মাণ করলে বিহারের জন্য অসুবিধার সৃষ্টি হবে। এটি আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।’

উত্তর রাখাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মংক্যছা কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘নতুন ভবণ বিহারের সামনে হলে স্থানীয়দের অসুবিধার কথা ম্যানেজিং কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেছি। তারা এটি দেখেছেন। এখন তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছি।’

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাকারিয়া কক্সবাজার ভয়েসকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্কুলের জমি নিয়ে একটি জটিলতা রয়েছে। পরে উপজেলা প্রকৌশলী, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিব। তবে, ভবনটির নকশা পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই।’

এদিকে, গত রবিবার বিদ্যালয় ভবন নিমার্ণকে কেন্দ্র করে রাখাইন সম্প্রদায়ের জানমালের নিরাপত্তা, প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার রক্ষা ও অবৈধ দদখলদারের হাত থেকে স্কুলের জমি উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাতে আরও একটি স্মারকলিপি দিয়েছে বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, উক্ত বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্য শাহ জাহান মেম্বার (বর্তমান ৪নং ওয়ার্ড, চৌফলদন্ডী ইউপি) রাখাইন সম্প্রদায়ের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন। এবং একের পর এক রাখাইন সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছেন। এমনকি প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দেওয়াসহ উত্তর রাখাইন পাড়াবাসির পরিণতি রামু ট্র্যাজেডির মতো হবে বলেও প্রকাশ্যে দিবালোকে হুংকার দিতে থাকে ওই জনপ্রতিনিধি। প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছেন, যেকোনো মূল্যে রাখাইন সম্প্রদায়ের পবিত্র তীর্থস্থান উত্তর রাখাইন পাড়া বৌদ্ধ বিহারকে আড়াল করে বা বিহারের জমির ওপর স্কুল ভবন নির্মান করা হবে। একজন জনপ্রতিনিধির প্রকাশ্যে এ ধরনের হুংকারে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। কারণ, হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই মেম্বারের পিতা মৃত আব্দুর শুক্কুরের বিদ্যালয় ভবনটি নিমার্ণের দানকৃত জন্য ৬০ শতক জমি ভোগ দখল করার জন্য এমনটি করছেন।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শাহ জাহান বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, শত বছরের পুরনো বিহারটিও থাকবে, স্কুলটিও হবে। আমি চায় দুটি প্রতিষ্ঠান ঠিকে থাকুক। স্কুলটিতে রাখাইন সম্প্রদায়ের সন্তানরা আরও বেশী। আমি কাউকে হুমকি দিয়েছি এর কোন প্রমাণ নেই। সদর ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সে একটি দিক নির্দেশনা দিবেন। সেদিকে চেয়ে আছি। এখানে কাউকে হুমকি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এলাকায় সম্প্রীতি বজায় থাকুক সেটি আমি চায়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION