মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শেকড়হীন মায়েদের মানসিক হালচাল

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

কক্সবাজারে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে আইওএম-এর হেলথ সেন্টারের বাইরে আচার বিক্রি করেন জাফর। আট সন্তানের বাবা তিনি। সব চেয়ে ছোট সন্তানটির বয়স এক বছর। এই ক্যাম্পে আসার পর তিনটি বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন তার স্ত্রী। জাফরের পাঁচ বছরের সন্তানটি আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় তাদের ঘরের দিকে। সেখানেই আলাপ হয় জাফরের স্ত্রীর সঙ্গে। তাদের বড় ছেলে বিয়ে করেছে সম্প্রতি। সেই বউও অন্তঃসত্ত্বা। বউ-শাশুড়ির সঙ্গে আলাপে যুক্ত হন পাশের বাসার অন্তঃসত্ত্বা আরেক নারী, এবার তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হবে। প্রথম সন্তানকে পেটে নিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছিলেন তিনি।

সরকার ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হিসাব বলছে, গত বছরের (২০২২) ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫৩ জন। এরমধ্যে ৫২ শতাংশ নারী। পরিবারগুলোর গড় সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ৫ জন। এই নারীদের শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচেষ্টা থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি আলাদা করে কেন দরকার, তা তাদের বা পরিবারের কারোর জানা নেই।
২০২২ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দুইবার উখিয়ার ক্যাম্প-৯, ক্যাম্প ৮-ই, ক্যাম্প ৮-ডব্লিউতে তিনটি ফোকাস গ্রুপের আলোচনায় বেরিয়ে আসে, সেখানকার নারীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত কোনও ধারণা নেই। তবে তাদের প্রত্যেকে নানা ধরনের হতাশার মধ্যে দিনযাপন করেন। কারও কারও ক্ষেত্রে সেই হতাশা এতটাই গভীর যে আত্মহননের বিষয়েও ভাবেন তারা। কেউ কেউ সেই চেষ্টা করে বেঁচে গেছেন। ক্যাম্পের মানুষ অসমর্থিত সূত্রের বরাতে বলছেন, অনেকে আত্মহত্যা করলেও সেটি আত্মহত্যা হিসেবে দেখানো হয়নি। কেন জীবন নিয়ে কোনও আগ্রহ কাজ করে না, তার প্রাথমিক পাঁচটি কারণ বেরিয়ে আসে আলাপ থেকে। কারণগুলো হচ্ছে— মিয়ানমারে চোখের সামনে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি দেখা, নিজের আবাস ও চেনা পরিচয় ছেড়ে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া, ক্যাম্পের ওই ছোট ঘরে একের পর এক বাচ্চা জন্ম দেওয়া, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার নিরাপত্তাহীনতা, দেশে ফেরার কোনও সম্ভাবনা দেখতে না পাওয়া।

উল্লিখিত তিনটি ক্যাম্পে বর্তমানে কতজন অন্তঃসত্ত্বা রয়েছেন, তার সঠিক সংখ্যা কেউ জানাতে চাননি। কথা বলা তিনটি গ্রুপের ১৫ জন নারীর মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে বর্তমানে তাদের স্বামী থাকছেন না। আবার স্বামী ফিরবেন কিনা তাও বলতে পারছেন না। ক্যাম্প-৮-এর বাসিন্দা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী বলেন, স্বামী গত দুই মাস থেকে ঘরে আসে না। শুনেছি, পাশের ক্যাম্পে আরেকটা বিয়ে করেছে। এর আগে করোনার সময়ে প্রথম সন্তান যখন পেটে, তখনও চলে গিয়েছিল। ১১ মাস পরে ফিরে আসে। আমি এখন নিজের জীবনের কোনও মানে খুঁজে পাই না।

এই নারীদের প্রায় প্রত্যেকের তিনটির বেশি শিশু সন্তান রয়েছে। এদের ৭৩ শতাংশই স্বামীর হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার। এই নারীদের শতভাগ যেমন ফিরতে চান মিয়ানমারে, ঠিক শতভাগই মনে করেন যে তাদের আর ফেরা হবে না। এদের মধ্যে কেউই কখনও মানসিক চিকিৎসা সহায়তা নেননি, বা কোন সময় এই সহায়তা নিতে হয়, সে বিষয়ে কিছু জানেন না। ক্যাম্প জীবনকে অমানবিক মনে করেন ৮০ শতাংশ নারী। জীবন নিয়ে নানা হতাশা ব্যক্ত করেন ৮৬ শতাংশ নারী।

স্বামী থাকলে মারে নাইলে ছেড়ে যায়

‘আমার সন্তান চাই না। কিন্তু আমার স্বামী আমার ক্ষত বুঝতে চায়নি। স্বামীর বয়স ২১। এই ক্যাম্পে এসে আমার বিয়ে হয়েছে। আমার বয়স এখন ১৮। ২০১৭ সালে পালিয়ে আসার কয়দিন আগে আমি ধর্ষণের শিকার হই। আরও অনেকে আছে, যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তারা সবাই মুখ খোলে না। আমি সেই বিষণ্ন সময় ভুলতে পারিনি আজও। এরই মধ্যে সন্তান বহনের মতো কঠিন কাজে আমার কোনও মনোযোগ নেই। এমনও দিন যায় আমার সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মনও থাকে না। কিন্তু মা তো। ওই খারাপ লাগা বিশ্রী অনুভূতির মধ্যেই সংসারের কাজ করি। কিন্তু ক্যাম্পে আসার পরে ভিন্ন পরিস্থিতি দেখলাম। ওপারে থাকতে সংসারে কোনও ঝামেলা ছিল না। এখানে হাতে টাকা না থাকলে স্বামী মারে। সন্তান পেটে দিয়ে ছেড়ে চলে যায়।’ এই মর্মন্তুদ বর্ণনাটি ক্যাম্পে থাকা এক রোহিঙ্গা তরুণীর।

ফোকাস গ্রুপের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখানকার নারীদের বেশিরভাগই তাদের সঙ্গীর দ্বারা সহিংসতার শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। এ ধরনের নারীদের বিষয়ে মেডিক্যাল হিউম্যানিটারিয়ার অর্গানাইজেশন মেডিসিন ও সানফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) কীভাবে এগিয়ে যায় এবং তাতে রোগীদের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়—জানতে চাইলে এমএসএফ’র ইনটারিম মেন্টাল হেল্থ অ্যাক্টিভিটি ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব ধরনের যৌন সহিংসতার শিকার, এমনকি পারিবারিক নির্যাতনের শিকার ভিকটিমদেরও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকি। যেহেতু একই জায়গা থেকেই মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়, সে কারণে ভিকটিমকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়াতে হয় না। সুরক্ষা দিতে সক্ষম এমন একজনকে ভিকটিমের যোগসূত্র হিসেবে হাজির করা হয়।’ তিনি মনে করেন, নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার মাধ্যমে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতাও বাড়ে। তারা সহিংসতার চিত্রটা বুঝতে শুরু করে এবং নিজেদের জন্য, তাদের সন্তানদের জন্য একটি নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করতে শেখে।

সংকটের ধরনগুলো কী রকম?

‘ফরটিফাই রাইটস’ এর একটি ওয়েবিনারে উন্মোচিত ‘গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সংকট’ শীর্ষক সমীক্ষা অনুসারে, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ৮৮ দশমিক ৭ ভাগ হতাশার লক্ষণ, ৮৪ ভাগ মানসিক যন্ত্রণার লক্ষণ এবং ৬১ দশমিক ২ ভাগ পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের অভিজ্ঞ লক্ষণগুলো অনুভব করেছেন।’ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের ৯৪ দশমিক ৭ ভাগ রোহিঙ্গা শরণার্থী ভবিষ্যতে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রায় ৮৬ দশমিক ২ ভাগ রোহিঙ্গা (মিয়ানমার) নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক পরিবারের সদস্য বা বন্ধুকে হত্যার অভিজ্ঞতা পেয়েছে, ৭০ দশমিক ৬ ভাগ পরিবার পালিয়ে যাওয়ার সময় বা লুকিয়ে থাকার সময় পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের মৃত্যুর অভিজ্ঞতা পেয়েছে এবং ২৯ দশমিক ৫ ভাগ পরিবারের নিকটবর্তী সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে যারা কাজ করতে অসুবিধা অনুভব করেন, তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৩ ভাগ এই অসুবিধাগুলোকে তাদের (রোহিঙ্গা) অসুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দায়ী করেছেন।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে ১৫ জন নারীর সঙ্গে তিন ভাগে কথা হয়—তাদের বিষয়েও এই একই রকমের বা কাছাকাছি সংখ্যক এই অনুভূতি ব্যক্ত করেন। ১৫ জন নারীর মধ্যে ৮০ শতাংশ মনে করেন, ক্যাম্প জীবন অমানবিক। তাদের মধ্যে শতভাগ মনে করেন— আর মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া হবে না। আবার শতভাগই ফিরে যেতেও চান। জীবনের প্রতি হতাশা ব্যক্ত করেছেন ৮৬ শতাংশ মানুষ।

কিশোরী মায়েদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা দরকার বলে মনে করেন কিনা, প্রশ্নে এমএসএফ-এর ইনটারিম মেন্টাল হেলথ অ্যাক্টিভিটি ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কিশোরী মায়েদের নতুন শ্বশুরবাড়ি, নতুন সম্পর্ক এবং মা হিসেবে নতুন দায়িত্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কাজটা করতে হয়। তারা মানসিক, শারীরিক বা সামাজিকভাবে সেই দায়িত্ব নেওয়া ও পালন করার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত হতে পারে না। অপরিপক্ব জ্ঞান, সমস্যা সমাধানের দক্ষতার অভাব এবং দুর্বল সামাজিক ও মানসিক সহায়তা ব্যবস্থার কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিশোরী মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পৃথকভাবে চিন্তা করতে হবে।’

কেন এরকম পরিস্থিতি হলো, চাপ হয় কেন?

নানা সময়ে গবেষণায় রোহিঙ্গা সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে এবং এর আগে মিয়ানমারে তাদের বিভিন্ন ধরনের উচ্চমাত্রার চাপের কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে থাকা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ যে দুই কারণে চাপ হয় তা হলো— পর্যাপ্ত আয়ের অভাব (৯৪.৯ শতাংশ) এবং খাদ্যের অপর্যাপ্ততা (৭৮.৮ শতাংশ)।

খাদ্যের অপর্যাপ্ততা বলতে ফোকাস গ্রুপের মায়েদের প্রশ্ন— ত্রাণে যা দেয় তা দিয়ে জীবন চলে? শাকসবজি, মাছ, মাংস এসব আমাদের কিনতে হয় আলাদা করে। সেই পয়সা যে পাবো, সেই কাজ কোথায়— চিকিৎসা বা তাদের সন্তানদের চাহিদা পূরণ করতে? তাদের কোন কোন কারণে চাপ হয় জানতে চাইলে ৬০ শতাংশ বলেন, স্বাধীন চলাচলে বাধার কথা। থাকার জায়গার অপর্যাপ্ততা নিয়ে বলেন ৮৬ শতাংশ মা, জীবন মান কমে যাওয়ায় স্বামীর নির্যাতনের শিকার হতে হয় বলে জানান ৯২ শতাংশ মা।

নিরাপত্তা বাহিনী (মিয়ানমার) কীভাবে তার মেয়েকে লাঞ্ছিত করেছে তাও বর্ণনা করেছেন ৪০ বছর বয়সী আরেক রোহিঙ্গা নারী। তিনি বলেন, ‘তারা আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।’ এই ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন জানিয়েছেন— মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার আগে ‘নির্যাতন’, ‘হত্যা’, ‘অন্যান্য ধরনের যৌন নির্যাতন’ এবং ‘যৌন অপমান’ তারা দেখেছেন। ১৪ জনই মনে করেন, বন্দুকযুদ্ধ ও আগুন তাদেরকে বেশি ভোগায়। এখনও কোথাও আগুন লাগলে তারা ভীষণ বিধ্বস্ত বোধ করেন।

অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ

এই ১৫ জন মায়ের মধ্যে ৮ জনের কিশোর বয়সী সন্তান রয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে এই কিশোরদের করার (কাজ) মতো কিছু নেই। ক্যাম্পে যা ত্রাণ পায়, সেই দিয়ে জীবনযাপন, আর চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া, ইন্টারনেটে নানা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখা ছাড়া এদের বেশিরভাগের অন্য কিছু করার থাকে না। যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, তাদের বাস্তবতা ভিন্ন। সামান্য টাকা অর্জনের জন্য তারা নিয়মিত সহিংসতায় জড়িয়ে যায় এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করে।

কেমন স্বপ্ন ছিল এই সন্তানদের নিয়ে, বলতে গিয়ে এক মা জানান, আমার ওখানে ঘর ছিল, নিয়মিত জীবন ছিল। আমার সন্তান খেতবাড়ি করে হলেও স্বাভাবিক জীবন চালাবে, যেখানে খুশি যেতে পারবে, তার নিজের একটি দেশ থাকবে। যেকোনও মা সন্তান জন্মের সময় আর কী চায়? কিন্তু এই সন্তান এখন অশিক্ষিত থেকে যাচ্ছে। তার জীবনে করার আর কিছু নেই। এটা দেখতে ভালো লাগে না। আবার কখন খারাপ সঙ্গদোষে প্রাণটা হারায় সেই ভয়তো আছেই।

নিজের দুর্দশার কথা বলছেন এক রোহিঙ্গা নারী
একজন রোহিঙ্গা নারী বলেন, আমি আমার অনেক প্রতিবেশীকে দেখেছি,মিয়ানমারে যারা তাদের ঘর থেকে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় জবাই করা হয়েছিল। তারা অনেক লোককে ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দেয় এবং ঘরবাড়ি ও লোকজন জ্বালিয়ে দেয়। একজন বাবা এবং দুই ছেলেকে একটি বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছিল। তারা (মিয়ানমার আর্মি) দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর তারা ঘর পুড়িয়ে দেয়। অনেক শিশুকে তারা আগুনে ফেলে দেয়।

এই ভয়াবহ ট্রমার মধ্যে থাকা মানুষদের কীভাবে সুস্থ জীবনে ফেরানো যায়, সেটা জানতে চাইলে এমএসএফ -এর চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়ে বলেন সংগঠনটির ইনটারিম মেন্টাল হেলথ অ্যাক্টিভিটি ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যখন তারা একটি রেফারেল কার্ড নিয়ে এমএসএফ –এর স্বাস্থ্য সুবিধা নিতে আসেন, তখন নার্সরা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে পাঠান। তারপর এমএসএফ-এর কাউন্সিলর বা মনোবিজ্ঞানীরা তাদের গোপনীয় কাউন্সেলিং রুমে তাদের নিয়ে আসেন এবং তাদের জীবন, মানসিক পরিস্থিতি, সামাজিক অবস্থান মূল্যায়ন করেন। তাদের ঝুঁকির কারণগুলোও খোঁজেন। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য থেকে যদি মনে হয় যে, সেই ব্যক্তি হালকা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন, কাউন্সিলর তাদের সঙ্গে স্বতন্ত্র কাউন্সেলিং সেশন চালিয়ে যান। কিন্তু যদি ভোগান্তি মাঝারি বা গুরুতর পর্যায়ে হয়, তাহলে কাউন্সিলর ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের সঙ্গে যৌথভাবে পরামর্শ করেন এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাইকোট্রপিক ওষুধ সরবরাহ করেন। পুরোটাই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়।’

এরপরে কী করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরপর চিকিৎসা নিলেন যিনি, তিনি নিয়মিত এমএসএফে আসেন এবং তাদের সেরে ওঠার ধরনের ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং এবং মানসিক পরামর্শ চালিয়ে যাওয়া হয়। যদি কোনও রোগী তাদের ফলো-আপ অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করেন, তাহলে এমএসএফ-এর কমিউনিটি বেসড স্বেচ্ছাসেবকরা বাসায় যান এবং শুরুতেই তাদের কাছ থেকে এই হস্তক্ষেপের অনুমতি নেওয়া থাকে।’

আন্তর্জাতিক সংস্থাগেুলোর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা দেওয়া হলেও সরকারিভাবে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায় না কেন, প্রশ্নে আরআরআরসি-এর মিজানুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মৌলিক অধিকার দিয়ে রাখা হয়েছে। এখানে একটা ন্যূনতম সেবা দিয়ে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আলাদাভাবে মানসিক চিকিৎসার কথা নিগূঢ়ভাবে ভাবার কোনও সুযোগ নেই। তবে বেসরকারি যেসব সংস্থা কাজ করছে, তারা মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যুটাকে নিয়েও কাজ করছে বলে আমরা জানি। কিন্তু কালচারাল কারণেই এটা খুব সহজ কাজ না। রোহিঙ্গারা অনেক বেশি রক্ষণশীল, ফলে তারা মানসিক এই জায়গায় কাজ করতে দেবে না।’

ভয়েস/আআ/সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION