মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:১৯ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রয়োজন পড়লে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহিত করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তোলা, ভোটকে উৎসবমুখর করা ও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর চিন্তা করছে ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করে তুলতে একাধিক বিকল্পের একটি হলো নির্বাচনের মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখা।
সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন ও বিদেশিদের চাপের মুখে থাকা আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিকল্প প্রার্থী থাকলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। সে ক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রে ভোটাররাও ভোট দিতে আসবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলায় সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর তালিকা করছে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হলে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে ভোটার টানার মতো সক্ষমতা থাকতে হবে সেই প্রার্থীদের। এই দুই বিবেচনায় উতরে গেলে ওই প্রার্থীর মনোনয়ন পেতে সহজ হবে। জেতার ব্যাপারটিও অনেক সহজ হয়ে যাবে। তবে আওয়ামী লীগের পদধারীদের স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ক্ষেত্রে লাগাম টানা হবে।
একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ পরিবারের কিন্তু সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গুরুত্ব পাবেন।
নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট ও সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই গত বুধবার নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট হবে।
এর আগে সোমবার যুক্তরাষ্ট্র শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ জানিয়ে দিয়েছে সংলাপের পরিবেশ ও সময় কোনোটাই নেই। অন্যদিকে বিএনপিও বলছে, সংলাপের সুযোগ দেখছে না তারা। জাতীয় পার্টি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।
কিন্তু কার্যত, সংলাপ নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। বিএনপি তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ে গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ও পরবর্তী সময়ে কঠোর কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। দলটি ৪৮ ঘণ্টা হরতালের নতুন কর্মসূচি দিয়েছে, যা শুরু হচ্ছে আজ রবিবার থেকে।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ পুরোদমে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে। দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের শরিক ও মিত্র হিসেবে পরিচিত দলগুলোও নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
আওয়ামী লীগ এখনো মনে করছে, শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারে। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগ কী করবে সেটাও ভেবে রাখতে হচ্ছে। কারণ দলটির নেতারা চান না নির্বাচন নিয়ে কোনো রকম বেকায়দায় পড়েন।
জাতীয় পার্টির একটি অংশ ঘোষণা দিয়েছে দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তবে অন্য অংশটি বলছে, তারা নির্বাচনে যাবে কী যাবে না সেটা আজকালের মধ্যে জানাবে।
ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নানা বিকল্প ভেবে রেখেছে।
দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। এর জন্য যা করার প্রয়োজন তার সবই করা হবে। আমরা চাই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসুক।’ তিনি মনে করেন, নির্বাচন বর্জন করে নয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে প্রত্যেক দলকেই নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করা উচিত।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলটির নেতারা মনে করছেন নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলতে প্রথম বিকল্প হলো স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রাখা। যাতে কোনো দল নির্বাচনী মাঠ থেকে শেষ সময়ে সরে পড়লেও অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকে কোনো বাধার মুখে পড়তে না হয়। এ ছাড়া এ নিয়ে যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সরকার। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠলে শরিক দলগুলো দিয়ে আরেকটি জোট দাঁড় করানোর বিকল্পও ভেবে রেখেছে ১৪-দলীয় জোটের নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ।
দলের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, শেষমেশ জাতীয় পার্টি অনাকাক্সিক্ষত কোনো ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে তৃণমূল বিএনপির প্রতি আলাদাভাবে নজর দেওয়া হবে। বিভিন্ন দল থেকে জনপ্রিয় নেতাকে টেনে আনার পরিকল্পনায় আরও জোর দেবে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করে তুলতে, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলের সমালোচনার বাইরে থাকতেই এসব পরিকল্পনা নিয়ে রাখছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু মাঠের বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনমুখী না হয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নানা কারণে আশ্বস্ত হতে পারছে না নির্বাচনে কারা আসবে আর কারা আসবে না। তাই নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে চক্রান্তের শিকার হতে পারে, এমন আশঙ্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন দলের কারোরই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজন প্রার্থীও এবার নির্বাচিত হোক তা চান না প্রধানমন্ত্রী। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা ভোটে প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগ সমালোচিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় এই নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ এবার ২০০ আসন টার্গেট করে নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সেখান থেকে ১৭০/১৮০ আসনে জিতে সরকার গঠন করতে পারলেও মন্দ হবে না মনে করেন তারা। ফলে বাকি আসন নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে তাদের। কিছু স্বতন্ত্র বা অন্য দলের নেতাদের প্রস্তাব করা হবে। তাদের বিশ্বাস যে, আওয়ামী লীগের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা যাবে, উৎসমুখরও হবে। ছেড়ে দেওয়া আসনে নির্বাচন করে যেই জিতে আসুক, তেমন ক্ষতি হবে বলে মনে করেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। এই লক্ষ্যপূরণে একাধিক রাজনৈতিক ভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগের ভেতরে। ধীরে ধীরে তা পরিষ্কার হবে।’
ভয়েস/আআ/সুত্র: দেশ রূপান্তর