শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

নিয়োগের একদিন পরই ইউএনও নাজিমকে প্রত্যাহার

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে নির্যাতনে অভিযুক্ত কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পদ থেকে সরিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের উপপরিচালক পদে তাকে বদলি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মামুন শিবলী স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। তাকে রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নাজিমকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সাংবাদিক আরিফের করা ফৌজদারি মামলায় এজাহারনামীয় আসামি নাজিম উদ্দিন।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে নাজিম উদ্দিনকে ইউএনও করে পদায়ন করার আদেশ প্রত্যাহার করেছে।’

কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নামে সরকারি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফকে তার শোবার ঘরের দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে যান জেলা প্রশাসনের কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট ও আনসার সদস্য। তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে আরিফকে পেটাতে পেটাতে গাড়িতে তুলে জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা নদীর তীরে ‘ক্রসফায়ারের’ দেওয়ার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ফিরিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। আরিফের ঘরে আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে মধ্যরাতে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে রাতেই কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে একদিনের মাথায় জামিনে মুক্তি পান আরিফ। পরে তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি রাহাতুল ইসলাম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা শুরু করে।

অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সুলতানা পারভীনকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, এনডিসি রাহাতুল ইসলামের তিনটি ইনক্রিমেন্ট কর্তন, আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে নিম্ন ধাপে নামিয়ে দেওয়া এবং রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয় জনপ্রশাসন। তবে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে দাফতরিক দায়মুক্তি নিয়ে চাকরিতে বহাল রয়েছেন।

পদে পদে আইনের ব্যত্যয়

২০২০ সালে সংঘটিত ঘটনার পর নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক আরিফ কুড়িগ্রাম সদর থানায় এজাহার দিলে সে বছর ৩১ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশে ডিসি সুলতানা পারভীন ও আরডিসি নাজিমসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা এবং নির্যাতনের অভিযোগে মামলা রেকর্ড হয়। গত ৪ বছরেও সেই মামলা আলোর মুখ দেখেনি। মামলাটি বর্তমানে রংপুর পিবিআইয়ের কাছে তদন্তাধীন। গত চার বছরে ওই মামলার কোনও আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। বরং আইন-আদালতকে ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে’ তাদের প্রত্যেককেই বিভিন্ন দায়িত্বে পোস্টিং দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

উচ্চ আদালতকেও ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি’ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের

ফৌজদারি মামলা চলমান থাকার পরও আসামিদের পোস্টিংয়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। সে নোটিশের জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট করা হয়। ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক মো. আরিফুল ইসলাম রিগান এই রিট করেন।

আরিফের আইনজীবীরা জানান, ডিসি সুলতানা ও অপর তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান। সে মামলায় তারা এখনও জামিন নেননি। ফলে আইনের দৃষ্টিতে তারা এখনও পলাতক। ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তাদের বরখাস্ত না করে এক আসামিকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল; যা আইনবহির্ভূত। সে কারণেই হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন এনডিসি রাহাতুল ইসলামকে দেওয়া পোস্টিং কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ডিসি সুলতানাসহ একই মামলার অপর তিন আসামিকে সেসময় পোস্টিং না দেওয়ার বিষয়ে বিরত থাকতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতেও রুল জারি করেন আদালত। এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব রুল জারি করেন। কিন্তু বিবাদীরা রুলের জবাব না দিয়ে আদালতকে উপেক্ষা করে একে একে চার আসামিকেই পোস্টিং দেয়।

ভয়েস/আআ/সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION