বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ০১:২০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
হিমছড়ি সৈকতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর একজনের মরদেহ উদ্ধার শহর গ্রামে বেড়েছে চোরের উপদ্রব মহেশখালীর সব্বির আহমেদ, আব্দুল জলিল ও মৌলানা ইলিয়াসের মৃত্যুতে ডক্টর হামিদুর রহমান আযাদের শোক হোয়াইট হাউসের ধন্যবাদ পেল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ‘ভালো’ বলা পর্যবেক্ষকদের আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে না নেয়ার ইঙ্গিত সিইসির এসএসসির ফল প্রকাশ ১০ জুলাই দুপুর ২টায় প্রধান উপদেষ্টা ও তাসনিম জারাকে নিয়ে কটুক্তিকারী মেকানিক রেজাউল বরখাস্ত হিমছড়ি সৈকতে গোসল করতে নেমে শিক্ষার্থীর মৃত্যু কক্সবাজারে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি পালিত টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারে অর্ধশতাধিক গ্রামে জলাবদ্ধতা: দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ

সাধন চন্দ্র মজুমদার ছিলেন চালের বাজারে অস্থিরতার মূলহোতা

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:

ধান-চালের বৃহত্তর মোকাম হিসেবে সারাদেশেই পরিচিত উত্তরের জেলা নওগাঁ। এ জেলারই সংসদ সদস্য ছিলেন সাড়ে পাঁচ বছর খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা সাধন চন্দ্র মজুমদার। তার আমলেই সবচেয়ে বেশি হেরফের হয়েছে দেশীয় চালের বাজার।

মজুত নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঘনিষ্ঠ চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাবেক এই খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশীয় চালের বাজারে সাধন চন্দ্রের সবচেয়ে বড় প্রভাবক হয়ে ওঠার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।

কৃষি বিভাগ ও খাদ্য বিভাগের তথ্যমতে, নওগাঁয় ৬ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে প্রতিবছর ১৭ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়। এ পরিমাণ চাল উৎপাদনে বর্তমানে জেলায় সচল চালকল রয়েছে ৩৫৬টি। এরমধ্যে ৪৪টি অটোমেটিক রাইস মিল। বাকিগুলো ‘হাসকিং মিল’ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এসব মিলে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ হাজার টন চাল উৎপাদন সম্ভব। প্রতিদিন জেলার ১১টি উপজেলায় স্থানীয় ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা রয়েছে ৮০০ টন চাল। এই চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত চাল থাকে জেলার ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের হাতে। যা দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করার কথা।

খাদ্য বিভাগের ফুড গ্রেইন লাইসেন্স অনুযায়ী দীর্ঘ সময় ধরে মিলে উৎপাদিত চাল সংরক্ষণ করা যাবে না। আবার ধানের অবৈধ মজুতেও আপত্তি রয়েছে খাদ্য বিভাগের। তবে খাদ্য বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীর্ঘদিনের পুরোনো হাজার হাজার টন চাল ও ধান মিলের গোডাউনে সংরক্ষণ করে গেছেন সাধন চন্দ্রের ঘনিষ্ঠজনরা। যার প্রভাবে ধানের বাম্পার ফলন হলেও কোনো বছরই স্বস্তি ফেরেনি চালের বাজারে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাল ব্যবসায় পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশীয় চালের বাজারের পুরো নিয়ন্ত্রণ হাতে নেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদারের সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যেই গড়ে তোলেন ‘ফুড সিন্ডিকেট’। এ সিন্ডিকেটে সাধন চন্দ্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন ছিলেন বেলকোন প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থ্যাপনা পরিচালক বেলাল হোসেন, ঘোষ অটোমেটিক রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ এবং সুফিয়া এগ্রো অ্যারোমেটিক অটোমেটিক রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম নাথু। তাদের গোডাউনে বছরজুড়ে অবৈধভাবে হাজার হাজার টন চাল মজুত রাখতেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপরই নানান কৌশলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হতো দেশীয় চালের বাজারে।

সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা আসা মাত্রই অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে মোকামে চালের দাম বাড়িয়ে দিতেন তার ঘনিষ্ঠ মিলার ও ব্যবসায়ীরা। অবৈধভাবে মজুত করা চাল সারাদেশের মোকামে সরবরাহ করা হতো চড়া দামে। স্থানীয় প্রশাসনসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে সাধন চন্দ্রের ঘনিষ্ঠজনদের গোডাউনে অবৈধ মজুতের তথ্য থাকলেও মজুতবিরোধী অভিযানে নামার পরও রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে অসহায় হয়ে ফিরতে হতো তাদের।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সাধনের ফুড সিন্ডিকেট করোনা পরবর্তী সময়ে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করে পাশের দেশ ভারত থেকে। যেখানে নওগাঁ খাদ্য বিভাগ থেকে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ ও বেলাল হোসেন নানাজনের নামে লাইসেন্স করিয়ে চাল আমদানি করেন। খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নওগাঁ জেলার আমদানিকারকের তালিকায় মেসার্স দিপ্ত এন্টারপ্রাইজ নামে ব্যবহৃত আমদানিকারকের স্বত্বাধিকারী হিসেবে উঠে আসে সাধন চন্দ্রের অতি ঘনিষ্ঠ শহরের মদ ব্যবসায়ী সুমন সাহার নাম। ওই সময়ে সুমন সাহার লাইসেন্সটি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ।

দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ নিজ নামীয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স ঘোষ অটোমেটিক রাইস মিল ছাড়াও তার দুই ছেলের নামে পৃথক আরও দুটি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে চাল আমদানি করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স আকাশ এন্টারপ্রাইজ। একটির স্বত্বাধিকারী সাগর কুমার ঘোষ। আরেকটির স্বত্বাধিকারী আকাশ কুমার ঘোষ। এভাবে চারটি লাইসেন্স ব্যবহার করে সাধন চন্দ্রের নির্দেশনায় বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চাল আমদানি করেছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ।

অন্যদিকে, মেসার্স বেলাল হোসেন নামে নিজ নামীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লাইলী হোসেন, কর্মচারী পৃথিশ কুমার সাহা ও নাহিদ হাসান সিরাজীর নামে আরও তিনটি লাইসেন্স ব্যবহার করে চাল আমদানি করেন বেলকোন প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল হোসেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম মেসার্স লাইলী হোসেন, মেসার্স পৃথিশ কুমার সাহা ও মেসার্স নাহিদ হাসান সিরাজী। সাধন চন্দ্র এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি করা চালের বস্তা পরিবর্তন করে দেশীয় বাজারে চড়া দামে বিক্রি করতেন। এভাবে গত সাড়ে পাঁচ বছরে দেশীয় চালের বাজারে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। সাধনের ফুড সিন্ডিকেটে জড়িত এসব চালকল ৫ আগস্টের পর তাদের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পর বর্তমানে সীমিত পরিসরে চলমান রেখেছে।

শহরের আড়তার পট্টির সাবেক চাল ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নওগাঁর মিলার ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে অবৈধ কমিশন বাণিজ্য ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। তার ইশারাতেই নিয়ন্ত্রণ হতো দেশীয় চালের বাজার। ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়ানোর পর সামান্য কমিয়ে জনগণকে ধোঁকা দেওয়াতে দক্ষ ছিলেন সাধন চন্দ্র। গত সাড়ে পাঁচ বছরে দেশে যতবার চালের বাজার অস্থির হয়েছে, ততবারই মোটা অংকের টাকা তার পকেটে ঢুকেছে। তাই পছন্দের মিলারদের আশপাশে প্রশাসনের যাওয়া নিষেধ ছিল।’

নওগাঁ জেলা অটোমেটিক রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম বাবু জাগো নিউজকে বলেন, ‘চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কখনোই মূল ধারার মিলারদের পরামর্শ নিতেন না সাধন চন্দ্র মজুমদার। ধান-চাল সংশ্লিষ্টদের বাইরের কিছু লোকের পরামর্শে মাঝে মধ্যেই অযৌক্তিক পদক্ষেপ নিতেন তিনি। যার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো ভোক্তাদের।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধন চন্দ্র নিজের আখের গুছিয়ে মিলারদের একের পর এক হয়রানি করে পুরো চালকল শিল্পটাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। ফলে এখন শুধু হাসকিং মিল নয়, অটোমেটিক রাইস মিলের বেশিরভাগ মিলাররাই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।’

সাধনের ফুড সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো ধরনের ঘনিষ্ঠতা কখনোই আমার ছিল না। ব্যবসায়িক সম্পর্কও নেই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। চাল আমদানিতে নিজের একটি লাইসন্সে ছাড়া অন্য কারোর লাইসেন্স কখনোই ব্যবহার করেননি বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে খাদ্য বিভাগের তথ্যে তার চারটি লাইসেন্স ব্যবহারের প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে জানিয়ে আবারও এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, তার দুই ছেলে আলাদা লাইসেন্সে ব্যবসা করেছেন। সেখানে তিনি কোনো প্রকারের সহযোগিতা করেননি। এছাড়া মদ ব্যবসায়ী সুমন সাহার লাইসেন্সটি কে বা কারা ব্যবহার করেছেন, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

তবে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ তাদের লাইসেন্সটি ব্যবহার করেছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন মদ ব্যবসায়ী সুমন সাহার ম্যানেজার গৌতম সাহা।

বেলকোন প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন এ প্রতিবেদক। তবে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও অন্য কর্মচারীরা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বেলকোন প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ওয়াহিদ আলাল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে একাধিকবার নক করলেও সাড়া দেননি। তবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর প্রতিবেদকের এক ফেসবুক পোস্টে সাধন চন্দ্রের পরিবারকে ‘বাটপার ফ্যামিলি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন আলাল।

সাধন চন্দ্রের আমলে সুবিধাভোগী হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কমেন্টে আলাল জানান, এসব মিথ্যা কথা। তাদের ব্যবসা ধ্বংস করে দিয়েছে সাধন চন্দ্রের পরিবার।

সাধন চন্দ্রের ফুড সিন্ডিকেট ভাঙার বিষয়ে খাদ্য বিভাগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পর এ জেলায় যোগদান করেছি। তাই বিগত দিনের সিন্ডিকেটের বিষয়ে আমি খুব বেশি অবগত নই। তবে বর্তমানে যাতে কেউ সিন্ডিকেট করে চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারেন, সে বিষয়ে আমরা সজাগ আছি।’

মদ ব্যবসায়ীর নামে চাল আমদানির লাইসেন্স দেওয়ার যৌক্তিকতা কতটুকু ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের সময়ে কারা কীভাবে চাল আমদানি করেছেন সেটিও আমার জানা নেই। তবে বর্তমানে স্থানীয় আমদানিকারকরা যাতে চাল আমদানির শর্ত ভঙ্গ করতে না পারেন, সে বিষয়টি আমরা নজরে রাখছি। কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সূত্র:জাগো নিউজ।
ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION