বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

একের পর এক মৃত কচ্ছপের দেখা মিলছে সমুদ্রসৈকতে

ভয়েস প্রতিবেদক:

সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন মৌসুমে আবারও একের পর এক মৃত কচ্ছপের দেখা মিলছে সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ উপকূল এলাকায়। গত বছরের তুলনায় এবার মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্যমতে, কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে গত দুদিনে (শনি ও রবি) ভেসে এসেছে ৬৮টি মৃত কচ্ছপ।

এর আগে গত ৪ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ভেসে এসেছে আরও ১৪টি মৃত কচ্ছপ। ফলে গত ২৪ দিনের মোট ৮৪টি মৃত কচ্ছপ ভেসে এসেছে। অথচ গত বছর (২০২৪ সাল) জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্টে ২৯টি মৃত কচ্ছপ পাওয়া গিয়েছিল।

বাংলাদেশ সামুদ্রিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিমুল ভূঁইয়া দুদিনে ৬৮টিসহ ২৪ দিনে ৮৪টি মৃত কচ্ছপ ভেসে আসার তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন এলাকায় কিছু সংখ্যক কচ্ছপের মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর দেয় স্থানীয়রা। এ তথ্যের ভিত্তিতে বোরি’র একটি গবেষক দল শনিবার সকাল থেকে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যান। গবেষক দলটির সদস্যরা টেকনাফ উপজেলার সাবরাং জিরো পয়েন্ট থেকে পরিদর্শন কাজ শুরু করেন। মৃত উদ্ধার সবগুলো কচ্ছপই অলিভ রিডলে প্রজাতির।

স্থানীয়দের তথ্যের বরাতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিমুল ভূঁইয়া বলেন, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন মৌসুম। এসময় বিশেষ করে কচ্ছপ উপকূলে ডিম দিতে আসে। কচ্ছপগুলো জেলেদের জালে আটকে, সমুদ্রে চলাচলকারী বড় নৌযানের ধাক্কায় এবং উপকূলে ডিম পাড়তে এসে কুকুরের আক্রমণে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে তদন্তের পর কচ্ছপগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব হবে।

প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) এর তথ্য মতে, সামুদ্রিক মা কচ্ছপ এখন মহাবিপদে রয়েছে। ১১ বছর আগে ২০০৩ সালে সংস্থাটির এক জরিপে দেখা গেছে, কক্সবাজার উপকূলের ৫২ পয়েন্টে সামুদ্রিক মা কচ্ছপ ডিম দিতে আসতো। ওই সময় এসব পয়েন্ট মা কচ্ছপের কাছে অত্যন্ত নিরাপদ পয়েন্ট ছিল।

উপপ্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান জানান, মা কচ্ছপের ডিম দেওয়ার সময় সাধারণত নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এপ্রিল-মে পর্যন্ত চলে। তারা রাতের বেলায় নির্জন উপকূলে এসে গর্ত তৈরি করে ডিম দেয়। সাধারণত একটি মা কচ্ছপ ৩০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। ডিম দেওয়া শেষ করে তা মাটি, বালি বা অন্য কোনো জৈব পদার্থ দিয়ে ঢেকে দেয়। এরপর মা কচ্ছপ ফিরে যায় সাগরে।

৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম নেয়। এরপর বাচ্চাগুলো গর্ত থেকে বের হয়ে ফিরে যায় সাগরে। ১১ বছর আগে ৫২ পয়েন্টে মা কচ্ছপ ডিম দিতে এলেও বর্তমানে কমে ৩৪ পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। মহেশখালীর সোনাদিয়া থেকে শুরু করে সেন্টমার্টিনদ্বীপ পর্যন্ত সৈকতের নির্জন এলাকায় এসব কচ্ছপ ডিম দিতো। সমুদ্রপাড়ে ডিম দিতে এসে পুনরায় গভীর সাগরে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ এখন আর নেই।

নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপক আবদুল কাইয়ুম বলেন, পর্যটনের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি কক্সবাজার সৈকতে আলোকায়ন, সমুদ্রে পরিত্যক্ত জাল ফেলে দেওয়া, ডিম ছাড়ার মৌসুমে বিচে ড্রাইভিং, খেলাধুলা, সৈকতে হাঁটা ইত্যাদি কচ্ছপের ডিম দেওয়ার পরিবেশ নষ্ট করেছে। ক্রমাগত কচ্ছপের ডিম দেওয়ার স্থান কমছে। মা কচ্ছপগুলো ডিম দিতে সমুদ্র থেকে উপকূলে আসা-যাওয়ার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে সৈকতে পুঁতে রাখা মাছ ধরার অবৈধ কারেন্ট জালের কারণে। ফলে মা কচ্ছপ মহাবিপদে পড়েছে।

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে মৃত কচ্ছপ পাওয়া যাচ্ছে। এসব কচ্ছপের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকে। সাগরে পুঁতে রাখা মাছ ধরার জালে আটকা পড়লে জেলেরা লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে কিংবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে কচ্ছপকে হত্যা করে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে। জোয়ারের পানিতে কচ্ছপগুলো উপকূলে ভেসে এলে কুকুর খেয়ে ফেলেছে। জেলেদের সচেতন করা, ডিম দেওয়ার স্থানটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি এবং সৈকতে কুকুরের বিচরণ রোধ করা জরুরি।

ভয়েস/জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION