বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আল্লাহকে যেভাবে সিজদা করে সৃষ্টিকুল

খালিদ হাসান বিন শহীদ:
সব সৃষ্টির একমাত্র স্রষ্টা আল্লাহ। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তার কোনো অংশীদার নেই। ইবাদত ও আনুগত্যের উপযুক্ত একমাত্র তিনিই। আমরা তারই সামনে মস্তক অবনত করি। কাতরকণ্ঠে সিজদাবনত হয়ে প্রার্থনা করি। তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার সামনে সবকিছুই মাথা নত করে, তার খুশিতেই হোক বা বাধ্য হয়েই হোক। প্রত্যেক জিনিসের সিজদা তার স্বভাবের মধ্যেই রয়েছে। এমনকি সৃষ্টির ছায়াও আল্লাহর সামনে সিজদাবনত থাকার কথা কোরআন কারিমে বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘তারা কি দেখেনি, আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তার ছায়া আল্লাহর প্রতি সিজদারত থেকে ডানে-বামে ঢলে পড়ে এবং তারা সকলে থাকে বিনয়াবনত?’ (সুরা নাহল ৪৮)

মানুষ যত বড় অহংকারীই হোক, তার ছায়া যখন মাটিতে পড়ে, তখন সে নিরুপায়। তখন আপনা-আপনিই তার দ্বারা বিনয় প্রকাশ পায়। এভাবে আল্লাহতায়ালা প্রতিটি মাখলুকের সঙ্গে ছায়ারূপে এমন একটা জিনিস সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যা তার ইচ্ছা ছাড়াই সর্বদা আল্লাহতায়ালার সামনে সিজদায় পড়ে থাকে। এমনকি যারা চন্দ্র-সূর্যের পূজা করে, তারা নিজেরা তো এর সামনে সিজদাবনত থাকে, কিন্তু তাদের ছায়া থাকে তাদের বিপরীত দিকে আল্লাহর উদ্দেশে সিজদারত। এ জন্যই তিনি বলেন, ‘তারই নিদর্শনাবলির অন্তর্ভুক্ত হলো রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না এবং চন্দ্রকেও না। বরং সিজদা করো আল্লাহকে, যিনি এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন যদি বাস্তবিকই তোমরা তার ইবাদত করে থাকো।’ (সুরা হামিম সাজদা ৩৭)

সূর্যের সিজদা : হজরত আবু জর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এই সূর্য কোথায় যায় তা জানো কি? উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তিনি বলেন, সে আরশের নিচে গিয়ে আল্লাহকে সিজদা করে। আবার আল্লাহর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে। সত্বরই এমন সময় আসছে যে, তাকে বলা হবে, তুমি যেখান থেকে এসেছিলে সেখানেই ফিরে যাও।’ (সহিহ বুখারি)

সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের সিজদারহস্য : সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর সৃষ্টি বস্তুসমূহের মধ্যে দুটি সৃষ্ট বস্তু। চন্দ্র, সূর্য এবং সমস্ত তারকা অস্তমিত হয়ে সিজদায় পড়ে থাকে এবং আল্লাহতায়ালার নিকট অনুমতি নিয়ে ডান দিক হতে ফিরে এসে আবার নিজের উদয় স্থলে পৌঁছে যায়। আর পাহাড়-পর্বত ও গাছপালার ডানে বামে যে ছায়া পড়ে, ওই ছায়াই সেগুলোর সিজদা। (ইবনে কাসির)

এক সাহাবির স্বপ্ন : এক ব্যক্তি প্রিয়নবী (সা.)-এর নিকট এসে নিজের এক স্বপ্নের কথা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি, যেন একটি গাছের পেছনে নামাজ পড়ছি। আমি যখন সিজদায় গেলাম তখন দেখি, গাছটিও সিজদায় গেল এবং আমি শুনতে পেলাম, গাছটি সিজদায় গিয়ে এই দোয়া পড়ছে, হে আল্লাহ! এই সিজদার কারণে আমার জন্য আপনি আপনার নিকট প্রতিদান ও সওয়াব লিপিবদ্ধ করুন! আর আমার গুনাহ মাফ করে দিন। এটাকে আমার জন্য আখেরাতে সঞ্চিত ধন হিসেবে রেখে দিন! আর এটাকে কবুল করে নিন যেমন কবুল করেছিলেন আপনার বান্দা হজরত দাউদ (আ.)-এর সিজদাকে।’

এই হাদিসের বর্ণনাকারী হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এরপর আমি একদিন দেখি যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সিজদার আয়াত পাঠ করেন, অতঃপর সিজদা করেন এবং সিজদায় উল্লিখিত দোয়াটিই পাঠ করেন।’ (তিরমিজি)

গোটা সৃষ্টিজগৎ আল্লাহকে সিজদা করে : পৃথিবীর সব কিছুই মহান আল্লাহর জন্য সিজদা করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে এবং তাদের ছায়াসমূহও, সকালে ও সন্ধ্যায়, ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায়।’ (সুরা রাদ ১৫)

ফেরেশতারা আল্লাহকে সিজদা করে : শুধু নিম্নজগতে নয়, সিজদার এই নিয়ম রয়েছে ঊর্ধ্বজগতেও। সেখানে ফেরেশতারা মহান আল্লাহর উদ্দেশে সিজদা করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে তারা এবং সমস্ত ফেরেশতা আল্লাহকেই সিজদা করে এবং তারা মোটেই অহংকার করে না।’ (সুরা নাহল ৪৯)

আদম সন্তানের সিজদা ও শয়তানের কান্না : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত তেলাওয়াত করে সিজদা করে তখন শয়তান সরে গিয়ে কাঁদতে শুরু করে এবং বলে, হায় আফসোস! বনি আদমকে সিজদা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে এবং সে সিজদা করেছে, ফলে সে জান্নাতি হয়েছে। পক্ষান্তরে, আমি এতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি, কাজেই আমি জাহান্নামি হয়ে গেছি।’

(সহিহ মুসলিম)

সৃষ্টিকুলের আনুগত্যশীল হওয়ার স্বরূপ : সৃষ্টিকুলের স্রষ্টার আজ্ঞাধীন ও ইচ্ছাধীন। সৃষ্টজগতের এই আজ্ঞানুবর্তিতা দুই প্রকার। এক. সৃষ্টিজগৎ ব্যবস্থাপনার অধীনে বাধ্যতামূলক আনুগত্য। মুমিন, কাফের, জীবিত, মৃত, জড় পদার্থ ইত্যাদি কেউ এই আনুগত্যের আওতা বহির্ভূত নয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সবাই সমভাবে আল্লাহতায়ালার আজ্ঞাধীন ও ইচ্ছাধীন। বিশ্ব চরাচরের কোনো কণা অথবা পাহাড় আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিরেকে এতটুকুও নড়াচড়া করতে পারে না। দুই. সৃষ্টি জগতের ইচ্ছাধীন আনুগত্য। অর্থাৎ স্ব-ইচ্ছায় আল্লাহতায়ালার বিধানাবলি মেনে চলা। এতে মুমিন ও কাফেরের পার্থক্য আছে। যারা আনুগত্যশীল, তারা মুমিন এবং যারা আনুগত্য বর্জন ও অস্বীকার করে, তারা কাফের। সিজদা ও আনুগত্য বলে শুধু সৃষ্টিগত আনুগত্য নয়, বরং ইচ্ছাধীন আনুগত্য বোঝানো হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হয় যে, ইচ্ছাধীন আনুগত্য তো শুধু বিবেকবান মানুষ, জিন ইত্যাদির মধ্যে হতে পারে। জীবজন্তু উদ্ভিদ ও জড় পদার্থের মধ্যে বিবেক ও চেতনাই নেই।

এমতাবস্থায় এগুলোর মধ্যে ইচ্ছাধীন আনুগত্য কীভাবে হবে? এর উত্তর এই যে, কোরআনের বহু আয়াত ও বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, বিবেক, চেতনা ও ইচ্ছা থেকে কোনো সৃষ্ট বস্তুই মুক্ত নয়। সবার মধ্যেই কমবেশি এগুলো বিদ্যমান আছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি কি দেখো না যে আল্লাহকে সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে।’ (সুরা হজ ১৮)

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION