রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
মুহসিনা জামান:
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন একটি দিনের সূচনা হয়। এ সূচনাটি যদি হয় আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে, তবে সেই দিনের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি কাজেই বরকত ও রহমত নেমে আসে। দিনের সূচনা ফজরের নামাজের মাধ্যমে করা আবশ্যক। আর তা শুধু ফরজ আদায়ের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নানা দোয়া, জিকির ও আমল, যা মুমিনের দিনটিকে করে তোলে অধিকতর শান্তিময়। যে বান্দা ফজরের আগে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করে, তার জন্য সেই দিনটি হয়ে ওঠে আরও বেশি ফজিলতপূর্ণ। আল্লাহতায়ালা তার কাজে এমন বরকত দেন, যা পার্থিব ও আখেরাত দুই জীবনেই সুফল বয়ে আনে।
মানুষের দৈনন্দিন জীবন নানা ব্যস্ততায় ভরপুর। কর্মক্ষেত্র, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন মুমিনকে দিনের অধিকাংশ সময়ই ছোটাছুটি করতে হয়। কিন্তু তার আগে যদি সে ফজরের আগে-পরে আল্লাহর দরবারে নিজেকে সোপর্দ করতে পারে, তবে সেই ছোটাছুটি আর নিছক দুনিয়াবি পরিশ্রমে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা হয়ে ওঠে ইবাদতেরই অংশ। কেননা ইসলাম শিখিয়েছে, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে বৈধ উপায়ে উপার্জন করা, দায়িত্বশীলভাবে কাজ করা সবই ইবাদত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) দিনের শুরুতে যেসব দোয়া, জিকির ও আমলগুলো পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো মুমিনকে বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে। সেসব দোয়া একদিকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা স্থাপন করতে শেখায়, অন্যদিকে মুমিনকে দৃঢ় আস্থার সঙ্গে নতুন দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শক্তি জোগায়। ফজরের নামাজ পড়ার পর ধারাবিকভাবে সেসব আমল করা কাম্য। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণী উল্লেখ করা হলো।
আয়াতুল কুরসি : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ইমান)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দোয়া : ‘রাজিতু বিল্লাহি রব্বাও, ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনাও, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা।’ অর্থাৎ আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ (সা.)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার নিম্নের দোয়া পাঠ করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন। (তিরমিজি ৩৩৮৯)
সাইয়্যিদুল ইসতেগফার : যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা সাইয়্যিদুল ইসতেগফার পড়ে এবং ওই দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে। (সহিহ বুখারি ৬৩০৬)
জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া : ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন। যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর সাতবার দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হয়, তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। (আবু দাউদ ৫০৭৯)
পেরেশানি থেকে মুক্তির দোয়া : ‘হাসবি ইয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়াহুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।’ অর্থাৎ আমার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট, যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আমি তার ওপর ভরসা করলাম। আর তিনিই মহান আরশের অধিপতি। যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা দোয়টি সাতবার পাঠ করবে তাকে সব পেরেশানি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। (আবু দাউদ ৫০৮১)
মসিবত থেকে হেফাজতের দোয়া : ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়ুং ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামায়ি ওয়া হুওয়াস সামিউল আলিম।’ অর্থাৎ আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে আসমান-জমিনের কোনো বস্তু ক্ষতিসাধন করতে পারে না। আর তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। নবীজি (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দিন ও রাতের শুরুতে তিনবার দোয়াটি পড়বে, ওই দিন ও রাতে কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করবে না। (মুসনাদে আহমাদ ৪৭৪)
কষ্টদায়ক প্রাণী থেকে হেফাজতের দোয়া : ‘আউজু বিকালিমা তিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমাগুলোর দ্বারা সব সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা দোয়াটি তিনবার পাঠ করবে, সেসব কষ্টদায়ক প্রাণী থেকে হেফাজতে থাকবে। (সহিহ মুসলিম ২৭০৯)
এ ছাড়া অনিষ্ট থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস তিনবার, সুরা ফালাক তিনবার এবং সুরা নাস তিনবার পাঠ করা সুন্নত।
ইশরাকের নামাজ : সূর্যোদয়ের ২৩-২৪ মিনিট অতিবাহিত হলে ইশরাকের নামাজ পড়া সুন্নত। ইশরাকের নামাজ দুই বা চার রাকাত। এর নিয়ম সাধারণ নফল নামাজের মতোই। এ নামাজ পড়ার দ্বারা পূর্ণ একটি হজ ও ওমরাহ পালনের সওয়াব পাওয়া যায়। সব সগিরা গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
ইশরাকের পর জীবন-জীবিকার তাগিদে যার যার কাজে নেমে পড়া। দায়িত্ব পালনে যতœবান হওয়া। কাজে ফাঁকি না দেওয়া। যার যার কাজে ইসলামি বিধান খেয়াল রাখা। হতে পারে তা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি কিংবা অন্য যেকোনো পেশার কাজ। তবেই সবার কাজ ইবাদতে পরিণত হবে।
ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া পড়া : ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।’ অর্থাৎ আল্লাহর নামে, আল্লাহ তার ওপরই নির্ভর করলাম, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই, শক্তিও নেই। যদি কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দোয়াটি পড়ে, তবে সে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে হেফাজতে থাকে, শয়তানের ধোঁকা থেকে দূরে থাকে। (তিরমিজি ৩৪২৬)
লেখক : ধর্মীয় নিবন্ধকার/ভয়েস/আআ