বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

ধর্মীয় শিক্ষার আবশ্যকতা

মুফতি উবায়দুল হক খান:
ধর্ম মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি মানুষের আচরণ, মূল্যবোধসহ জীবনের সার্বিক বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করে। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের জীবনকে সুশৃঙ্খল ও সুশোভিত করে। সমাজের স্থিতিশীলতা ও ব্যক্তির উন্নতির জন্য ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

ধর্মীয় শিক্ষা বলতে আমরা বুঝি ধর্মের মূল বক্তব্য, বিশ্বাস, নীতিমালা ও আদর্শ সম্পর্কে শিক্ষাগ্রহণ। এটি মানুষের চরিত্র গঠন এবং তার সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায় এবং তাকে প্রভুবিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি ধাবিত করে। ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা হলো

নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ : ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের নৈতিক চরিত্র গঠন করে। এটি মানুষকে সৎ, বিনয়ী, সত্যবাদী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতন করে। ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ শেখে কীভাবে তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ন্যায় ও সততা বজায় রাখতে হয়।

মানবিক গুণাবলির বিকাশ : ধর্ম মানুষকে দয়ালু ও সহিষ্ণু হতে শেখায়। ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সহানুভূতি ও ক্ষমাশীলতা গড়ে তোলে। এর ফলে সমাজে সৌহার্দ্য ও ঐক্য বজায় থাকে।

আধ্যাত্মিক উন্নতি : ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ দেখায়। এটি মানুষের মনকে পরিশুদ্ধ করে, তাকে জীবনের গভীর সত্য উপলব্ধি করার সুযোগ করে দেয়। আধ্যাত্মিকতা মানুষের মনের শান্তি ও তৃপ্তির প্রধান উৎস।

সমাজের স্থিতিশীলতা : ধর্মীয় শিক্ষা সামাজিক নিয়ম-কানুন ও নীতিমালা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি সমাজের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও ঐক্য গড়ে তোলে, যার ফলে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা : ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের মধ্যে ধর্মভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়। এটি একটি বহুজাতিক ও বহুধর্মীয় সমাজে সহাবস্থানের জন্য অপরিহার্য।

ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : বর্তমান যুগে যেখানে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে, সেখানে ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কমেনি, বরং বেড়েই চলেছে। এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো।

নৈতিক সংকট : আধুনিক জীবনের চাপ ও প্রতিযোগিতার ফলে অনেক সময় মানুষ নৈতিক সংকটে পড়ে। ধর্মীয় শিক্ষা এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখায়।

আত্মপরিচয় ও মানসিক শান্তি : আধুনিক জীবনের জটিলতা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।

সামাজিক অশান্তি ও অশৃঙ্খলা রোধ : বিভিন্ন সামাজিক বিভাজন, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও অসহিষ্ণুতার কারণে ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্মান ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

শিশু ও তরুণদের সঠিক পথপ্রদর্শন : বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের কারণে বিপথগামী হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা তাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে, যা তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করে।

ধর্মীয় শিক্ষার বিভিন্ন উপায় : ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার অনেক পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো সমাজ ও পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতায় করা উচিত। তা উল্লেখ করা হলো।

পরিবারিক শিক্ষা : শিশুর প্রথম শিক্ষাগ্রহণ হয় পরিবার থেকে। পিতা-মাতা ও পরিবারকে সচেতন হতে হবে সন্তানদের ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখানোর জন্য।

বিদ্যালয় : বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করলে তা শিশুদের জীবনে ধর্মের গুরুত্ব বৃদ্ধি করবে।

সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা : মক্তব, মসজিদ, মাদ্রাসা বা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় আলোচনা : ধর্মীয় উৎসব, আলোচনা ও কর্মশালা মানুষের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ : ধর্মীয় শিক্ষা আজকের সমাজে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অনেক সময় ধর্মীয় শিক্ষাকে একমাত্র ধর্মের চোখে দেখা হয়, যা সামগ্রিক মানবতার প্রতি অসম্মান সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সমাজে ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে কুসংস্কার ও অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করে। আর আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাবে অনেক তরুণ ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

ধর্মীয় শিক্ষার ভবিষ্যৎ : ধর্মীয় শিক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে সমাজের মানুষের সচেতনতা ও মানসিকতার ওপর। যদি আমরা শিশু ও তরুণদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবিক গুণাবলি উন্নত করতে পারি, তাহলে তারা ভবিষ্যতে একটি শান্তিপূর্ণ ও উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। ধর্মীয় শিক্ষা শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নয়, এটি মানব জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রয়োগযোগ্য।

আমাদের করণীয় : ধর্মীয় শিক্ষা মানুষের জীবনে অপরিহার্য। এটি ব্যক্তি ও সমাজকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে সমৃদ্ধ করে। ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সৎ, দয়ালু ও সহিষ্ণু হয়ে ওঠে, যা একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব আগের চেয়ে বেশি, কারণ এটি মানুষের মধ্যে সাম্যের বোধ ও পারস্পরিক সম্মান বৃদ্ধি করে। তাই আমাদের উচিত ধর্মীয় শিক্ষাকে সমগ্র সমাজে প্রসারিত করা এবং তরুণ প্রজন্মকে ধর্মীয় মূল্যবোধে শিক্ষিত করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে মানবতার কল্যাণে কাজ করতে পারে।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিআতুস সুফফাহ আল ইসলামিয়া গাজীপুর

ভয়েস/আআ/সূত্র: দেশ রূপান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION