শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা ব্যর্থ, পূর্ব রাফায় হামলা করেছে ইসরায়েল বাজারে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের ‍দাম, সাধারণ মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা এবার ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে হিন্দু রোহিঙ্গা’র অনুপ্রবেশ টেকনাফ হয়ে আরো ৫ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশের আশ্রয়ে কক্সবাজার ডি.সি. সাহেবের বলীখেলা শুরু কাল পাশের দেশকে খুশি করতে রাজনীতি করে আ.লীগ : গয়েশ্বর ভারত তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় আজিজ মোহাম্মদসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত হওয়া প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট মারা গেছেন রাতের আঁধারে গরু পাচারকালে ডাকাতের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু

আলেমরা ধীরে ধীরে গণমাধ্যমমুখী হচ্ছেন

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
মৌলভীবাজারের প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বরুণা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ বদরুল আলম হামিদী। দ্বীন টিভি ইউকের চেয়ারম্যান ও লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা আল-খলীল ফাউন্ডেশনেরও চেয়ারম্যান। সম্প্রতি সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গে দেশ রূপান্তরের মুখোমুখি হন। কথা বলেছেন হামমাদ রাগিব

প্রশ্ন : বরুণা মাদ্রাসার ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলুন।

মাওলানা বদরুল আলম হামিদী : বরুণা মাদ্রাসার যাত্রা শুরু ১৯৪১ সালে, আমার দাদা হজরত লুৎফুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহির (শায়খে বরুণী) হাত ধরে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা আরও বহু আগে আমার পরদাদা হজরত হামিদুর রহমান (রহ.)-এর সময়ে শুরু হয়। তৎকালীন বরুণা পরগনায় আমাদের এই অঞ্চলের নাম হামিদনগর, এই নাম আমার পরদাদার নামেই রাখা। তবে মাদ্রাসার উদ্যোক্তা মূলত আমার পরদাদা নন, বরং তার স্ত্রী শায়খে বরুণীর আম্মা।

এক সময় এলাকাটি ছিল অশিক্ষার অন্ধকারে আচ্ছন্ন। মানুষের মধ্যে দ্বীন-ধর্মের সঠিক চর্চা ছিল না। তখন মানুষকে শিক্ষা-দীক্ষা ও ধর্মীয় চর্চার প্রতি উদ্বুদ্ধ করার কাজে মনোনিবেশ করেন। তখন তার স্ত্রী একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির পরামর্শ দেন। পরে তিনি এলাকার নারী ও শিশুদের নিজের বাড়িতে পড়ানো শুরু করেন। কিন্তু এলাকার লোকজন চতুর্মুখী বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। ফলে ব্যাপকভাবে কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে তাদের ছেলে, আমার দাদা শায়খ লুৎফুর রহমান (শায়খে বরুণী) দেওবন্দ থেকে যখন পড়াশোনা শেষ করে ফেরেন, তিনি প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মা-বাবার এ উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন, বাড়ির আঙিনায় প্রতিষ্ঠা করেন আজকের ‘বরুণা মাদ্রাসা।’

ধীরে ধীরে তার আধ্যাত্মিকতা ও সমাজসেবার প্রভাবে এলাকাবাসী মাদ্রাসার হিতাকাক্সক্ষী হয়ে উঠে। বিশেষত মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠালগ্নে এলাকায় একবার কলেরা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর তার বিশেষ দোয়ায় তা বিদূরিত হওয়া এবং পরবর্তী সময়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে ৬ মাসের মতো সময় নিজের বাড়ি ও মাদ্রাসাকে পাকিস্তানিদের হাতে নিপীড়িত হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষ বহু মানুষের আশ্রয়স্থল ও লঙ্গরখানায় রূপ দেওয়ার কারণে এলাকার মানুষের মন জয় করে নেয় এ প্রতিষ্ঠান। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় হাজার হাজার নিপীড়িত মানুষের আশ্রয় ও অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করেছিল বরুণা মাদ্রাসা।

প্রশ্ন : বরুণা মাদ্রাসার বহুমুখী শিক্ষাকোর্স, বিশেষত্ব ও কার্যক্রমগুলো বেশ ব্যতিক্রমী, এ বিষয়ে একটু জানতে চাই।

মাওলানা বদরুল আলম হামিদী : অনেকেই প্রচলিত সাধারণ শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, ‘দেশে প্রচলিত দুই ধারার শিক্ষাব্যবস্থার একটি ধর্মহীন কর্মশিক্ষা অপরটি কর্মহীন ধর্মশিক্ষা।’ কথাটি আমাকে বেশ ভাবায়। তখন থেকেই বরুণা মাদ্রাসার শিক্ষাকাঠামো এমনভাবে সাজানোর চেষ্টা করি, যেন এখানকার ছাত্ররা কর্মহীন ধর্মশিক্ষা নয়, বরং কর্মমুখর ধর্মশিক্ষা লাভ করতে পারে। দেখুন, সবাই তো আর মুফতি-মুহাদ্দিস হতে পারবে না, মাদ্রাসা-মসজিদের খেদমতও সবার কর্মজীবনে জুটবে না, তাই ছাত্রদের যার যেদিকে আগ্রহ, আমরা মৌলিক পড়াশোনার বাইরে বিশেষায়িত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাকে সেভাবেই যোগ্য করে গড়ে তোলার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন : আল-খলীল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এই কাজের অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন?

মাওলানা বদরুল আলম হামিদী : মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইসলামের শিক্ষা ও নবীজির (সা.) আদর্শই তো সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তাছাড়া আর্তমানবতার সেবা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যেরও অংশ। বর্তমানে আল-খলীল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবসেবার এলাকাভিত্তিক এ ধারাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আমাদের ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোতে সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে আমরা মুসলিম-অমুসলিম বাছ-বিচার করি না। যেখানেই দুর্যোগ ও দারিদ্র্যের খবর শুনতে পাই, সুযোগমতো সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করি।

এ ছাড়া আল-খলীল কোরআন শিক্ষাবোর্ড এসব দেশে সুবিধাবঞ্চিত মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের কাজ করছে। আফ্রিকার যেসব দেশে আমাদের সেবামূলক কার্যক্রম বিদ্যমান, সেসব দেশে সবমিলিয়ে আল-খলীল কোরআন শিক্ষাবোর্ডের ১২০০ শিক্ষাকেন্দ্রও চালু রয়েছে। সম্প্রতি তুরস্কেও আমরা একটি কেন্দ্র চালু করেছি। পাশাপাশি বাংলাদেশে প্রতি রমজানে আমরা দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোরআন শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করি। গত রমজানে সারা দেশে ৫ হাজার শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৮ লাখ শিক্ষার্থী আল-খলীলের অধীনে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করেছে।

প্রশ্ন : মানবতার সেবায় আলেমদের অংশগ্রহণ কতটুকু দরকার? এর দ্বারা কি মসজিদ-মাদ্রাসার কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়?

মাওলানা বদরুল আলম হামিদী : মানবসেবা তো ইসলামের অন্যতম একটি নির্দেশনা। সুতরাং আলেমদের জন্য তা আবশ্যকীয় একটি দায়িত্বও বটে। প্রত্যেককেই যার যার অবস্থান থেকে এ কাজে শামিল হওয়া উচিত। পরিকল্পনামাফিক উদ্যোগ নিলে মসজিদ-মাদ্রাসার দায়িত্বে থেকেও মানবসেবা করা যায়। পরিকল্পনা ও লক্ষ্য গোছালো থাকলে মানবসেবায় আলেমদের অংশগ্রহণ মসজিদ-মাদ্রাসার কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত তো করবেই না, বরং এর দ্বারা ধর্মীয় এ প্রতিষ্ঠানগুলো আরও লাভবান ও প্রভাবপূর্ণ হবে বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন : আপনি লন্ডনের টেলিভিশন স্টেশন চ্যানেল এস-এর উপস্থাপক ছিলেন, সেখানকার আরও বিভিন্ন টিভিতে কাজ করেছেন, এছাড়া দ্বীন টিভি ইউকের প্রতিষ্ঠাতা। আলেম হয়ে টেলিভিশনে কাজ করা এমনকি নিজে টিভি স্টেশন প্রতিষ্ঠা করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল? এখন কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

মাওলানা বদরুল আলম হামিদী : টেলিভিশনে কাজ করা এবং প্রদর্শিত হওয়া সংগত কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের কাছে ঢালাওভাবে নেতিবাচক ছিল। সেটা ধর্মীয় প্রচারণার জন্য হলেও। আমি যেহেতু আলেম পরিবারের সন্তান, সে হিসাবে আমার জন্য টিভিতে কাজ করা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। সত্যি বলতে কি, টিভিতে কাজ করব কখনো ভাবিনি। ইংল্যান্ড আসার পর দেখলাম- এখানে ইসলামের নামে পরিচালিত বিভিন্ন টিভি-প্রোগ্রাম বিতর্কিত মতবাদের লোকজন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফলে এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মুসলিমরা ইসলামের ব্যাপারে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তখন মনে হলো, এই সেক্টরে হকপন্থি আলেমদের কাজ করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

এরই মধ্যে প্রোগ্রাম উপস্থাপনার জন্য চ্যানেল এস থেকে প্রস্তাব আসে, কিন্তু আমি সাহস করতে পারছিলাম না। আমি যা-ই করি, আব্বার অনুমতি নিয়ে করতাম। কিন্তু তাকে এ ব্যাপারে বলার সাহস পাচ্ছিলাম না। পরের শুক্রবার লন্ডনের এক মসজিদে জুমা পড়তে গিয়ে আল্লামা তাকি উসমানির সাক্ষাৎ পাই। নামাজ শেষে তাকে পেরেশানির কথা খুলে বলি। তিনি বললেন, ‘টিভি একটি মাধ্যম মাত্র, এর মাধ্যমে খারাপ কাজ করলে খারাপ, ভালো কাজ করলে ভালো। আপনি যে পরিস্থিতির কথা শোনালেন, এখন এখানে আপনার জন্য দ্বীনি কাজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ তার এ মতামত পাওয়ার পর আব্বাজান (রহ.)-এর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললাম, তিনি অনুমতি দিলেন।

এর কিছু দিনের মধ্যে তাকি উসমানির ভাই আল্লামা রফি উসমানির সঙ্গেও সৌভাগ্যক্রমে সাক্ষাৎ হয়ে যায়, তিনিও অনুমতি দেন। এভাবে ৩ বুজুর্গ আলেমের অনুমতিক্রমে ২০০৭ সালে আমি ধর্মীয় প্রোগ্রাম উপস্থাপনার মাধ্যমে টেলিভিশনে কাজ শুরু করি। এরপর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলো, বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছি, বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছি, বর্তমানে কয়েক বছর হলো দ্বীন টিভি প্রতিষ্ঠা করেছি। ২৪ ঘণ্টাজুড়ে ১০০টি দেশে তা সম্প্রচারিত হয়ে দ্বীনের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের আলেমরা গণমাধ্যমমুখী না, বিষয়টিকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?

মাওলানা বদরুল আলম হামিদী : বাংলাদেশের আলেমরা গণমাধ্যমমুখী না কথাটা আমি এভাবে বলতে চাই না। আমি বলব, তারা ধীরে ধীরে গণমাধ্যমমুখী হচ্ছেন। আলেমদের বড় একটি অংশ যার যার জায়গা থেকে গণমাধ্যমের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব লালন করছেন, সাধ্যমাফিক ভূমিকা রাখছেন। আমার প্রত্যাশা থাকবে, এ প্রক্রিয়া আরও ব্যাপক হোক, আরও দ্রুততর হোক।

প্রশ্ন : ইসলামের প্রচার-প্রসারে গণমাধ্যমের কী ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করেন?

মাওলানা বদরুল আলম হামিদী : ইসলামের প্রচার-প্রসারে গণমাধ্যমের ভূমিকা ব্যাপক এবং তা সহজেই অনুমেয়। গণমাধ্যমে যারা ইসলামভিত্তিক কাজ করছেন, তাদের একটা বিষয় খেয়াল রাখা দরকার বলে আমি মনে করি। গণমাধ্যমে ইসলামঘনিষ্ঠ যে বিষয়ই আমরা উপস্থাপন করি, তা যেন ইতিবাচক পন্থায় হয়। ইতিবাচকতার চর্চা থাকলে আপনার অনুষ্ঠান ও আয়োজন দর্শক-পাঠকের হৃদয়ে রেখাপাত করবে সহজে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION