রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
এক সময় বান্দরবানের পাহাড়ে আবাদকৃত কাজু বাদাম গাছেই নষ্ট হয়ে যেত, কাজু বাদামকে স্থানীয় বাসিন্দারা ডাকতেন টাম নামে। এ কাজু বাদাম চাষ করে অনেকে বেশিরভাগ বছরই ক্ষতির মুখে পড়লেও এখন দিন পাল্টে গেছে।সম্প্রতি বান্দরবানে কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা হওয়ায় আশার আলো দেখছেন কাজু বাদাম চাষিরা।
বান্দরবান সদরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম বালাঘাটায় ২০ শতক জমি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে কিষাণ ঘর অ্যাগ্রো নামে একটি কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, যেটি তিন পার্বত্য জেলার প্রথম কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। আর এ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা যাত্রা শুরু করার খবর পেয়ে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলার কাজু বাদাম চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
…জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে বান্দরবানে কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাত করার কোনো কারখানা না থাকায় গাছেই নষ্ট হতো বেশিরভাগ কাজু বাদাম, তবে বান্দরবানে প্রথমবারের মতো কিষাণ ঘর অ্যাগ্রো কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা চালুর ফলে চাষিরা স্থানীয়ভাবে কাজু বাদাম বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন আর এতে নতুন স্বপ্ন বুনছেন চাষি, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা।
কিষাণ ঘর অ্যাগ্রো কারখানার সুপারভাইজার মো. ইসরারুল হক চৌধুরী বলেন, আমি বিগত চার মাস দরে এ কারখানার প্রধান সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছি। এ কারখানায় আমরা বান্দরবানের রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি থেকে সংগ্রহ করা কাজু বাদাম নিয়ে এসে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে শুকিয়ে এবং প্রক্রিয়াজাত করে ভালোমানের বাদামগুলো বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে প্যাকেটজাত করে থাকি।
সুপারভাইজার মো. ইসরারুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে আরও বলেন, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে এবং দেশের হাতেগোনা কয়েকটি কাজু বাদাম প্যাকেটজাত কারখানার মধ্যে বান্দরবানের কিষাণ ঘর অ্যাগ্রো অন্যতম, কেননা এ প্রতিষ্ঠানটি হওয়ায় এখানে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে এবং তার পাশাপাশি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আমাদের এ কাজু বাদাম এখন বহির্বিশ্বে রফতানি হচ্ছে।
…প্রতিষ্ঠানটির সহকারী সুপারভাইজার মো. রকিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এ কারখানায় কাজ করে বেশ ভালো আছি, পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে দিনযাপন করছি। করোনার এ দুঃসময়ে আমাদের কোনো কাজ না থাকায় দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম, তবে এ কারখানায় কাজ করে বেশ ভালো বেতন পাচ্ছি এবং নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করছি।
শ্রমিক ইয়াসনুর বেগম বলেন, আমরা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করি। এখানে আমরা কাজু বাদাম প্যাকেট করার আগে চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করে বাছাই করি। এক কোজি গোটা কাজু বাদাম বাছাই করলে আমরা ১০০ টাকা এবং আধা ভাঙা এক কেজি কাজু বাদাম বাছাই করলে ৬০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকি। প্রতি ১০ দিন অন্তর অন্তর আমাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
বান্দরবানের কাজু বাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা কিষাণ ঘর অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান মো. তরিকুল ইসলাম জানান, বান্দরবানের কাজু বাদাম চাষিদের বাদাম স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে জেলা সদরে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করতে আমরা চারজন উদ্যোক্তা মিলে কারখানাটি করেছি। আমরা মনে করি, এ কারখানার যাত্রার মধ্য দিয়ে বান্দরবানের কাজু বাদাম চাষিরা উপকৃত হবেন।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আমরা কাজু বাদাম প্যাকেটজাত করার কার্যক্রম শুরু করেছি এবং আমরা সফলতাও পেয়েছি। আমার স্বপ্ন ছিল, কৃষি নিয়ে কাজ করার, আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে চাষিদের সঙ্গে কাজ করে কৃষির উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, যোগ করেন তিনি।
কারখানার পরিচালক তোহা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় বর্তমানে অর্ধশতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। এখানে দক্ষ চারজন সুপারভাইজার রয়েছেন, যারা এ কাজে পারদর্শী এবং ভালো মানের কাজু বাদাম প্যাকেট করতে দক্ষ।
…পরিচালক তোহা চৌধুরী বাংলানিউজকে আরো বলেন, আমাদের এ কারখানায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং ১৫টি অত্যাধুনিক মেশিন কেনা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা ভালোমানের কাজু বাদাম প্যাকেট করছি। এরই মধ্যে বান্দরবান জেলা ছাড়াও চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের কাজু বাদামের প্যাকেট বাজারজাত করেছি এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে লন্ডনে ৫০ কেজি কাজু বাদাম রফতানির অর্ডার পেয়েছি। যার মধ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে ১৫ কেজি পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের এ কারখানায় বাছাইকৃত ও প্যাকেটজাত কাজু বাদাম দেশের অন্যান্য কারখানার চেয়ে মানে সেরা।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, বান্দরবানে ২০-২৫ বছর ধরে কাজু বাদাম চাষ হয়ে থাকলেও আগে বান্দরবানে কাজুবাদামের তেমন চাহিদা ছিল না। বিগত কয়েক বছর ধরে বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় চাষিরা কাজু বাদামের বাগান বৃদ্ধি করেছেন এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করেছেন।
তিনি বাংলানিউজকে আরও বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজু বাদাম হয় বান্দরবানে, এটির পুষ্টিগুণও প্রচুর। আগে দেশের উৎপাদিত কাজু বাদাম গোটা অবস্থায় বিদেশে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে আবার বাংলাদেশে এনে বাজারে বিক্রি করতে হতো, কিন্তু এখন বান্দরবানেই এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হচ্ছে। উপরন্তু বিদেশে রফতানিরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বান্দরবানে ১৭৯৭ হেক্টর জমিতে কাজু বাদাম চাষ হচ্ছে আর জেলায় দুই হাজার ৭৭৯ জন কাজু বাদাম চাষি রয়েছেন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জেলায় উৎপাদন হয়েছে ১৩২৩ মেট্রিক টন কাজু বাদাম।সুত্র:বাংলানিউজ।