শনিবার, ২৮ Jun ২০২৫, ১২:০১ পূর্বাহ্ন
আবদুল আজিজ:
আব্দুর রহমান। উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ধরুংখালী আলীপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুরের গর্বিত সন্তান। একজন সৎ, মেধাবী ও কর্মঠ ছেলে সে। সম্পর্কে আমার কেউ না হলেও আব্দুর রহমান ছিল আমার খুব কাছের একজন। বয়সে ছোট হলেও সে আমার ওস্তাদ। আমাকে কম্পিউটারের রাজ্যে প্রবেশ করিয়েছে সে। তবে কোথাও দেখা হলেই উল্টো আমাকে ওস্তাদ বলে ডাক দেয়। আজ আমার সেই ওস্তাদ আর নেই। বাইক এক্সিডেন্ট করে চির বিদায় হয়ে গেছে। দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে পরকালে।
সেই ১৯৯৬ সালের কথা। আমি যখন উখিয়া থেকে সাংবাদিকতা শুরু করি, তখন হাতে লিখে খামে করে ডাক পোস্ট, কক্সবাজার শহরে এসে কুরিয়ার সার্ভিস, পরবর্তীতে ফ্যাক্স বার্তা, কারেন্ট নিউজ হলে টেলিফোন বা স্থানীয় পত্রিকার হকার-ই একমাত্র ভরসা অফিসে নিউজ পাঠানো। সারাদিনের নিউজ সন্ধ্যায় অফিসে পাঠানো রুটিন ওয়ার্ক। এভাবে চলতে চলতে একদিন ২০০০ সালের পরের দিকে উখিয়ার কোটবাজার স্টেশনের রাস্তার পশ্চিম পাশে এই আব্দুর রহমানের CCM কম্পিউটার কম্পোজের দোকানটি আবিস্কার করেন আমার সহকর্মী ও সিনিয়র ভাই সাংবাদিক ফারুক আহমেদ। অবশ্য, এর আগে উখিয়া ও কোটবাজার স্টেশনে আরও কয়েকটি কম্পিউটারের দোকান ছিল, তবে সেসব দোকান সাংবাদিকদের তেমন সার্ভিস দিত না। উখিয়ার দক্ষিণ স্টেশনে নূর ট্রেডার্স আর কোটবাজারে পলাশের দোকান ( সাংবাদিক পলাশ বড়ুয়া)। তবে দিন শেষে বেশিরভাগ এই রহমানের দোকানে বসে নিউজ তার মাধ্যমে টাইপিং করে প্রিন্ট বের করে হ্যান্ড কপি পাঠাইতাম অফিসে। এভাবে করে তখনকার সময়ে সাংবাদিকদের সাথে রহমানের সখ্যতা গড়ে উঠে। একদিন দোকানে গিয়ে দেখি সে ছাড়া কেউ নেই। কম্পিউটার টেবিলও খালি পড়ে আছে। আমি সোজা তার কম্পিউটার টেবিলে গিয়ে বসে পড়ি এবং টাইপিং জানার আপ্রাণ চেষ্টা করি। কিন্তু, আমি কিছুতেই টাইপিং করতে পারছিলাম না। তখন সে মুশকি হাসি দিয়ে একদম সহজ করে আমাকে কম্পিউটার টাইপিং করার কৌশল শেখায়। সে থেকে ফ্রি সময়ে তার কম্পিউটার দোকানে বসে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করা। (ওই সময় কম্পিউটার টাইপিং জানাও অনেক গর্বের কাজ)। এরপর থেকে আমি নিজে নিজে নিউজ লিখে অফিসে পাঠানো অভ্যস্ত হয়ে উঠি। এক সময় আমি কক্সবাজার জেলা শহরে সাংবাদিকতা শুরু করি এবং সে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবার উদ্যোক্তা, পরবর্তী সময়ে নির্বাচন অফিসে কর্মজীবন শুরু করে। এরপর কোন সময় দেখা হলেই চিৎকার করে বলে উঠে “ওস্তাদ”। কোন সময় দেখা হলেই ওস্তাদ আর ওস্তাদ।
সত্যি সে ছিল আমার সত্যিকারের ওস্তাদ। আজ থেকে ২০ বছর আগে সে যদি আমাকে বিনা পয়সায় কম্পিউটার টাইপিং (এমএস ওয়াট) না শেখাইলে আজ আমি আমার জায়গায় পৌছতে পারতাম না। তথ্যপ্রযুক্তি এই যুগে আমার বিচরণ শুধু একজন আবদুর রহমানের মাধ্যমে।
আব্দুর রহমান রবিবার সকাল ৯টার দিকে টেকনাফ যাওয়ার পথে শামলাপুর স্টেশনের পার্শ্বে মেরিন ড্রাইভ রোডে মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না—রাজেউন)।
আমি পেশাগত কারণে নানা ব্যস্ততায় খুব দেরিতে জানলাম আব্দুর রহমানের মৃ’ত্যু’র সংবাদটি। আজ সে বাইক এক্সিডেন্ট করে মা’রা গেছেন। সত্যি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আমার।
আহারে মানুষের মৃ’ত্যু। কেউ আগে, কেউ পরে। আমরা সবাই একদিন পরপারের বাসিন্দা হয়ে যাব। এই পৃথিবীতে কেউ থাকবো না। তবে অস্বাভাবিক মৃ’ত্যু গুলো মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়।
পরপারে ভাল থেকো ভাই আমার। তোমাকে নিয়ে অজস্র স্মৃতি। সে স্মৃতি গুলো আমাকে খুব নাড়া দিচ্ছে। তোমার মৃ’ত্যুতে আমি শোকাহত। মহান আল্লাহ তোমাকে জান্নাতবাসী করুক, আমিন। পরম করুণাময় শোক সন্তপ্ত পরিবারকে শোক সইবার তৌফিক দান করুক। আমিন।
ভয়েস/আআ