মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২০ অপরাহ্ন
আবদুল আজিজ:
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজারে ৭দিন ব্যাপি পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের আয়োজন করছে জেলা প্রশাসন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ আয়োজন চলবে। ইতিমধ্যে পর্যটন মেলা ও কার্নিভালকে ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে পর্যটন মেলার মঞ্চ ও দুই শতাধিক স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। হোটেল-মোটেল থেকে শুরু করে খাবারের রেস্তোরেন্ট, কিটকট সহ পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত সকল প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ছাড় দেয়া সহ নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। কক্সবাজারে আরো বেশী পর্যটক মুখী করতে এমনটি আয়োজন বলে জানিয়েছেন পর্যটন মেলার আহবায়ক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মো: ইয়ামিন হোসেন।
মো: ইয়ামিন হোসেন কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ এ প্রতিপাদ্যে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসে কক্সবাজার পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালে রয়েছে নানা আয়োজন ও সুযোগ সুবিধা। পর্যটকদের কথা চিন্তা করে কক্সবাজারে হোটেল মোটেল মালিক থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করেছি।’
মো: ইয়ামিন হোসেন কক্সবাজার ভয়েসকে আরও জানান, ‘পর্যটন মৌসুমকে বরণে ২৭ সেপ্টেম্বও থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সব হোটেল-মোটেল ও গেষ্ট হাউস গুলোতে ৬০% ছাড় দেয়া হবে। একই সাথে খাবারের রেস্তোরেন্টে ১৫%, সকল বাস ভাড়া ২০%, হেলিকপ্টার জয় রাইড ১০%, টিউব ভাড়া ৩০%, কিটকট চেয়ার ভাড়া ৩৩%, ফটোগ্রাফারদের মাধ্যমে ছবি তোলা প্রতি কপি ২টাকা, প্যারাসাইলিং রাইড ৩০%, জেটস্কি ও বিচ বাইক রাইড ৩৩%, লকার ভাড়া ৫০%, গাড়ী পার্কি ৫০%, ফান গেমে ৫০% সহ চাঁদের গাড়ী ও বিমান ভাড়া বিশেষ ছাড় ঘোষনা করা হয়েছে। এছাড়াও বিনামুল্যে সার্কাস শোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল উপলক্ষ্যে পর্যটকদের আনন্দ দিতে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় উন্মোচন হবে ‘থিম সং’। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই সকাল ১০টা হতে ঘন্টাব্যাপী চলবে সৈকত এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান। ২৫ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় সৈকতের লাবনী পয়েন্ট হতে শুরু হয়ে সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে পুনরায় লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত থাকছে বর্ণাঢ্য র্যালী। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধন হবে পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল। সকাল পৌনে ১০টায় থাকছে বৃক্ষরোপন ও আলোচনা সভা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট হতে মহেশখালী জেটি পর্যন্ত চলবে নৌ-র্যালী। এছাড়াও প্রতিদিন সার্কাস প্রদর্শনী, বীচ বাইক র্যালী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বীচ ম্যারাথন, বীচ ভলিবল, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং কনসার্ট।
অনুষ্ঠিত লাবনী পয়েন্টের এ মেলায় পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিনোদনে এবারের মেলায় রাখা হচ্ছে বিনামূল্যে সার্কাস প্রদর্শনী। লোকাল শিল্পীর পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিল্পীরা আসবেন। আসছেন কুষ্টিয়া লালন একাডেমি ও সিলেট আঞ্চলিক ভাষার শিল্পীরা। এছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে আগত শিল্পীরা পরিবেশন করবেন হাসন রাজার গানসহ আঞ্চলিক ভাষায় নানা গান। ময়মনসিংহ থেকে মহুয়াপালা, কুড়িগ্রাম থেকে ভাওইয়া গানের শিল্পীরা আসবেন। বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি থেকে আসবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর টিম। চট্টগ্রাম থেকে আঞ্চলিক গানের খ্যাতিমান শিল্পী প্রেম সুন্দর ছাড়াও আসবেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা। একেকদিন মঞ্চে গাইবেন লিজা, ঐশী, আভাসের তুহিন, রবি চৌধুরী, নিশিতা বড়ুয়াসহ আরও অনেক জাতীয় শিল্পী। সাতদিন গানে আড্ডায় স্পোর্টসসহ বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে পর্যটকসহ এলাকার সকল বাসিন্দাদের মাতিয়ে রাখবে পর্যটন মেলা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান কক্সবাজার ভয়েসকে জানিয়েছেন, ‘ ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ হচ্ছে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেয়া। মেলা উপলক্ষ্যে বাড়তি সতর্ক থাকবে পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে থাকবে সাদা পোষাকধারী পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মুহম্মদ শাহীন ইমরান কক্সবাজার ভয়েসকে জানিয়েছেন, ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টে ৭দিনের পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভালে সৈকত বিপুল পর্যটক আগমন হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ কারণে পর্যটকরা যাতে নির্বিগ্নে কক্সবাজার ভ্রমন করতে পারে সে জন্য নেয়া হয়েছে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠে থাকবে নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত।’
এদিকে, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতি এবারে নড়েচড়ে বসেছে। কক্সবাজারে পর্যটকমুখী করতে যা যা করণীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে সবকিছু করবে বলে জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দরা।
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোখিম খান কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে ৬০% ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে, হোটেলের মান রেখে কিছু কিছু হোটেল মোটেল ছাড়ের ক্ষেত্রে কমবেশী হতে পারে।’
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার কক্সবাজার ভয়েসকে জানান, ‘কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য সবসময় দুয়ার খোলা। কারণ, পর্যটকরা সুযোগ সুবিধা পেলে পর্যটনের প্রসার ঘটবে। তাই পর্যটন জোনে সকল হোটেল মোটেলে পর্যটকদের জন্য বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে। এটি মেলা চলাকালিন সময় পর্যন্ত চলবে।’
ভয়েস/আআ