বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
কক্সবাজার সদর:নুরুল আবছার বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত কুতুবদিয়া ব্যারিস্টার হানিফ বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত কক্সবাজার সদর উপজেলায় রুমানা আক্তার ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা, একই পরিবারের ৭ জন নিহত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী আজ ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ডর্টমুন্ড কক্সবাজারের ৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহন চলছে: কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম টেকনাফে র‌্যাবের অভিযানে অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক বাংলাদেশে ৩ দিনে পালিয়ে এসেছে মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১২৮ সদস্য পেকুয়ায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের লাশ উদ্ধার

শবে কদর যে কারণে বছরের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাত

মুফতি মামুন আব্দুল্লাহ কাসেমী:
মানবজাতির জন্য আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নেয়ামত পবিত্র কোরআন। যে কোনও জিনিস কোরআনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে তাও বিশেষ মর্যাদা লাভ করে। হজরত মোহাম্মদ (সা.) শ্রেষ্ঠ নবী, কারণ তার ওপর কোরআন নাজিল হয়েছে। আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত, কারণ আমাদের প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। রমজান এবং বিশেষত এ মাসের শবে কদর (কদরের রাত) সারা বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস ও রজনী। কারণ এ মাসের এ দিনটিতে কোরআন নাজিল হয়েছে। পবিত্র কোরআনে অতি গুরুত্বপূর্ণ এ রাতটি নিয়ে পূর্ণ একটি সুরা রয়েছে। সেখানে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি (কোরআন) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত’ —(সুরা কদর)। পবিত্র এ আয়াতটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে পবিত্র কোরআন নাজিলের কারণেই এ রাতটি সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ।

শবে কদরের নাম নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। শবে কদর মূলত ফারসি শব্দযুগল, আরবিতে যা ‘লাইলাতুল কদর’। পবিত্র কোরআনেও রাতটিকে এই নামে অবহিত করা হয়েছে। বাংলায় কদর রজনি অর্থ সম্মানিত রজনি কিংবা ভাগ্যনির্ধারণী রজনি। রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর যেকোনও একটি রাত শবে কদর। তবে এককভাবে সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না যে, এটা আসলে এই রাত। তবে হাদিসে বিভিন্ন ইঙ্গিতে কিছুটা সম্ভাবনা তৈরি হয় যে শবে কদর হলো রমজানের ২৭ তারিখে। মানে ২৬তম রোজার দিন রাতে। কারণ, হিজরিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়।

পবিত্র এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। গোনাহ মাফ করানোর সুবর্ণ সুযোগ এ রাত। হাদিস শরিফে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরে যে ব্যক্তি ইমান ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম (নামাজ পড়বে) করবে, তার পূর্বের সব পাপ মোচন করা হবে।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস: ৭৬০) অন্য একটি হাদিসে হজরত উবাদা থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে কদরের রাতের অন্বেষণে সেই রাতে নামাজ পড়ে এবং তা পেয়ে যায়, তার অতীত ও ভবিষ্যতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (নাসাঈ)

একই সঙ্গে যে এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, তাকে দুর্ভাগা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রমজান মাস এলে রাসুল (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বলতেন, তোমাদের কাছে এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃতপক্ষে সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র (সর্বহারা) দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬৪৪)

এ রাতে কি ভাগ্য লেখা হয়?

অনেকে বিশ্বাস করেন, শবে বরাতে সৃষ্টিকুলের ভাগ্য লেখা হয়। এক্ষেত্রে তারা পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জ্বল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম সতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা দুখান, আয়াত: ১-৫)। আয়াতে উল্লিখিত ‘বরকতময় রাত’কে ইকরিমাসহ (রহ.) কয়েকজন তাফসিরবিদ ‘শবে বরাত’ দাবি করেছেন। তবে পবিত্র কোরআনের অন্য দুটি আয়াতের দিকে নজর দিলে খুব সহজেই স্পষ্ট হয় যে–এখানে ‘বরকতময় রাত’ দ্বারা শবে বরাত নয়; বরং শবে কদরকে বোঝানো হয়েছে।

কারণ, আমরা জানি–পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে রমজান মাসে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারিরূপে ও হেদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি (কোরআন) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে।’ (সুরা আল কদর, আয়াত : ১)

শেষোক্ত দুই আয়াতের প্রথমটিতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে পবিত্র কোরআন রমজান মাসে নাজিল হয়েছে আর দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে লাইলাতুল কদরে। প্রথম আয়াত যে মাসটির (রমজান) কথা উল্লেখ করেছে ওই মাসেরই একটি রাত হলো লাইলাতুল কদর তথা শবে কদর। এই দুই আয়াত স্পষ্ট করছে যে সুরা দুখানে উল্লিখিত ‘বরকতময় রাত’ দ্বারাও শবে কদরকে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। কেননা, কোরআন নাজিল হয়েছে রমজান মাসে, শবে কদরে। এখানে ‘বরকতময় রাত’ দ্বারাও সেটিই বলা হয়েছে। তাই একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, সৃষ্টির ভাগ্য লেখা হয় শবে কদরে; শবে বরাতে নয়। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন ও পবিত্র এ রাতকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর তাওফিক দেন। আমিন

লেখক: মুহতামিম-মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়া, ঢাকা

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION