বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:২১ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
রমজান সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য কমানো, নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ফেব্রুয়ারিতে কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে শিগগিরই দলটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গত সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য।
তারা জানান, রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মসূচি দেবেন তারা। প্রথমে নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং পরে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে। এই দুই ইস্যুতে রমজানের আগেই ঢাকাসহ দেশব্যাপী সমাবেশ করবে দলটি। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচির সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে চলমান বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। আলোচনার সিদ্ধান্ত দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরবেন।’
জানা গেছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি ধরে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রকে পরিবর্তন, পরিমার্জন করে তা চূড়ান্ত করবে বিএনপি। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ছাত্রদের এই উদ্যোগকে একেবারে অগ্রাহ্য করতে চান না তারা। এজন্য ছাত্ররা তাদের ঘোষণাপত্রের যে খসড়া বিএনপির কাছে পাঠিয়েছে, তা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। সেখানে কী কী ধরনের পরিমার্জন, পরিবর্ধন আনা যায়, সেগুলো নিয়ে দলের ভেতরে কাজ চলছে।
এদিকে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বিএনপির নীতিনির্ধাকরা অভিমত দিয়েছেন, খসড়া ঘোষণাপত্রে ছাত্রদের পক্ষ থেকে বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাতিলের ব্যাপারে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি যুক্তিসংগত নয়। তারা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধই হবে বাংলাদেশের ভিত্তি। এরপর বাংলাদেশের আরও অনেক অর্জন রয়েছে। এগুলো রেখেই ঘোষণাপত্র তৈরি করতে হবে। ইতিমধ্যে খসড়া ঘোষণাপত্র সংশোধন করেছে দলটি। এরপর সংশোধন করা খসড়া নিয়ে যুগপতের শরিকদের সঙ্গেও আলোচনা করবে। পরে এ ইস্যু নিয়ে সরকার আলোচনায় ডাকলে ‘শরিকদের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি করা খসড়া’ সেখানে তুলে ধরবে বিএনপি।
ছাত্রদের খসড়া ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, এটি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বৈঠকে বলেছেন, এটা এভাবে দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করে না। এটা অপ্রয়োজনীয়। এটাকে ডিক্লারেশন (ঘোষণা) আকারে দিতে হবে। আর যখন এটা নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হবে, তখন এটা ঘোষিত হয়েছে বলে গণ্য হবে।
দলটির নেতারা জানান, কয়েক মাস ধরে একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। সরকার চাইলে জুলাই-আগস্টের মধ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান ইতিমধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। এটি অতিরিক্ত সময়। নির্বাচনের জন্য এত সময়ের দরকার নেই। ন্যূনতম সংস্কার করে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব এবং সেটি জুলাই-আগস্টেই সম্ভব। জুলাই-আগস্টে নির্বাচনের দাবিটা মূলত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য। দলটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আশা তাদের।
গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাত ৮টায় ১০ মিনিটে স্থায়ী কমিটির সভা শুরু হয়। সভা শেষ হয় সোয়া ১০টার দিকে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (ভার্চুয়ালি), বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন (ভার্চুয়ালি)।
ভয়েস/আআ