শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
বিপ্লবের নামে আর কোন প্রাণহানি চাইনা:প্রফেসর মুফিজুল হক জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা আসবে শিগগিরই : আইন উপদেষ্টা পেকুয়ায় মোটরসাইকেল, ৭০০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি আটক আংশিক পরিবর্তন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের সময়সূচি প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে–মেয়ের বিচার শুরু জি এম কাদেরের কার্যক্রম সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালন‍ায় নিষেধাজ্ঞা “কক্সবাজার মাদক ও মানবপাচারের দূর্গ” সদরের লিংকরোডে ভবন থেকে পড়ে ব্যবসায়ীর রহস্যজনক মৃত্যু কোনো ধরনের নিরাপত্তার সমস্যা নেই ৫ আগস্ট : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ডাকসু নির্বাচন: নির্বাচন ঘিরে আন্দোলনপ্রসূত ছাত্রনেতাদের নাম আলোচনায়

ধৈর্যশীলদের জন্য অগণিত সওয়াব

মো. আবদুর রহমান:

ধৈর্যশীলতা অর্জন করা যত কঠিন, এর পুরস্কারও তত বড়। মুমিন যখন নিজের ওপর আপতিত বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহকে ডাকে ও তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হন। এর বিনিময়ে আল্লাহ তাকে অপরিমিত প্রতিদান প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধৈর্যশীলদের অগণিত প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (সুরা জুমার ১০) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় সুলাইমান ইবনুল কাসিম (রহ.) বলেছেন, ‘প্রতিটি আমলের সওয়াব কী পরিমাণ হবে সেটি জানা যায়। তবে ধৈর্যের বিনিময়ে কী পরিমাণ সওয়াব মিলবে সেটি জানা যায় না।’ এরপর সুলাইমান (রহ.) বলেন, ‘মুষলধারে বর্ষিত বৃষ্টির পানি যেমন, ধৈর্যের সওয়াবও তেমনি অগণিত।’ (আস-সবরু ওয়াস সাওয়াবু আলাইহা ২৯)

ধৈর্য আদর্শ মানুষের উত্তম চারিত্রিক গুণ। ধৈর্যের আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘সবর’। এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা, সহিষ্ণুতা, দৃঢ়তা, সহ্য করার ক্ষমতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। জীবনের সব ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে তার আদেশসমূহ পালন, তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকাই হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা।

ধৈর্যের বহুবিধ সংজ্ঞা পরিলক্ষিত হয়। আল-কুশায়রি বর্ণিত কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো। এক. প্রসন্ন বদনে দুঃখ-যন্ত্রণা সহ্য করা। দুই. অবৈধ কার্যাবলি থেকে বিরত থাকা। তিন. অদৃষ্টের আঘাত নীরবে সহ্য করা। চার. দারিদ্র্যের মধ্যে মানসিক স্থিতি বজায় রাখা। পাঁচ. অদৃষ্টের কশাঘাতে জর্জরিত অবস্থায়ও মধুর ব্যবহারে অবিচল থাকা। ছয়. নীরবে নির্দ্বিধায় বিপদ বরণ করে নেওয়া। (ইসলামি বিশ্বকোষ ১/৪৭৪)

কারও কারও মতে, ধৈর্য হচ্ছে মানুষের এমন এক গুণ, যে কারণে সে অসুন্দর ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। এটি মানুষের একটি আত্মিক শক্তি, যা দিয়ে সে নিজেকে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখাতে পারে। ধৈর্যের মাধ্যমে মানুষ কষ্ট-ক্লেশ, ব্যথা-যন্ত্রণা ও আঘাত সহ্য করতে সক্ষম হয়।

ধৈর্যের গুরুত্ব : ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা মানব জাতির মহৎ গুণ। ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করলে তিনি খুশি হন। মনে রাখতে হবে, সৎপথ পাওয়া মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। আর এ সৎপথ পাওয়ার জন্য ধৈর্য দরকার। ধৈর্যশক্তি মানুষের জন্য সৎকাজের সুযোগ ও ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে পাপকাজ থেকে বিরত থাকা যায়। ধৈর্য এমন এক আত্মিক শক্তি যা হৃদয়কে সৎ ও অবিচল রাখে। যারা ধৈর্যশীল হয় তারা পরকালে পুরস্কার তো পায়ই, একই সঙ্গে ইহকালীন জীবনেও সাফল্য পায় এবং তাদের জীবন হয় প্রশান্তিময়। তাই মানবজীবনে ধৈর্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

ইসলামে ধৈর্যের প্রতি সীমাহীন গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় সৃষ্টি মানব জাতিকে ধৈর্যধারণের নির্দেশ দিয়ে কোরআনের বহু আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। তিনি পবিত্র কোরআনের ৯০টিরও বেশি স্থানে ধৈর্যের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্যধারণ করো, ধৈর্যধারণে পরস্পর প্রতিযোগিতা করো এবং নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করো। আর আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা আলে ইমরান ২০০) পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আছে, লোকমান (আ.) তার সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘হে বৎস! নামাজ আদায় করো, সৎকাজের আদেশ দাও এবং অসৎকাজে নিষেধ করো। আর তোমার ওপর যে বিপদ আসে, তাতে ধৈর্যধারণ করো। বিপদে ধৈর্যধারণ করা নিঃসন্দেহে একটি বড় সাহসিকতার কাজ।’ (সুরা লোকমান ১৭)

ইবাদতে আল্লাহর আনুগত্যের ওপর ধৈর্য হলো সর্বোচ্চ ধৈর্যধারণ। এই প্রকারের ধৈর্যের ওপর আমল করার জন্য আল্লাহতায়ালা কোরআনে অসংখ্যবার আদেশ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি তার ইবাদত করুন এবং তাতে ধৈর্যধারণ করুন তথা সুদৃঢ় থাকুন।’ (সুরা মারইয়াম ৬৫) কোরআনের এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা ‘ওয়াসতবির’ শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা ধৈর্যের সর্বোচ্চ স্তরকে বুঝায়। মূলত সব ইবাদতের জন্যই ধৈর্যের দরকার। অধৈর্য ব্যক্তি ইবাদতের কোনো স্তরে উন্নীত হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহর আনুগত্যের ওপর ধৈর্যধারণ করতে আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আপনি আপনার পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায় করতে আদেশ করুন এবং নিজেও তাতে অবিচল থাকুন।’ (সুরা তোহা ১৩২)

ধৈর্যের ফজিলত : মানবজীবনে ধৈর্যশীলতার অপরিসীম ফজিলত রয়েছে। এটি মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে। তাকে সবার কাছে সমাদৃত ও প্রিয় করে তোলে।

মানুষ সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করলে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হয়। কেননা ধৈর্য মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর যদি ধৈর্যধারণ করো, তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।’ (সুরা নিসা ২৫) একজন মুমিনের ওপর আপতিত বিপদসমূহ তার জন্য কল্যাণই বয়ে আনে। এতে করে তার গুনাহসমূহ দূর হয়ে যায়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিমের ওপর কোনো যন্ত্রণা, রোগ-ব্যাধি বা এ ধরনের কোনো বিপদ আপতিত হলে, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে ঝরিয়ে দেন, যেভাবে গাছ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে ফেলে।’ (সহিহ বুখারি)

একজন মুমিন যেকোনো বিপদে আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে ধৈর্যধারণ করে। মুমিনের এ বিষয়টিকে রাসুল (সা.) অত্যন্ত কল্যাণকর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘মুমিনের বিষয়টি কত বিস্ময়কর! তার প্রতিটি কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। যদি সে সুখ-শান্তি লাভ করে তাহলে সে মহান আল্লার শোকর আদায় করে। তখন তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ আপতিত হয়, তাহলে সে আল্লাহর ওপর ধৈর্যধারণ করে। ফলে তাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ (সহিহ মুসলিম)

হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, ‘ধৈর্য হলো কল্যাণের ভান্ডারসমূহের অন্যতম। আল্লাহতায়ালা কেবল তার বান্দাকেই তা প্রদান করে থাকেন।’ মাইমুন (রা.) বলেছেন, ‘সৃষ্টিকুলের মধ্যে নবী কিংবা অন্য কাউকে যে বিশাল কল্যাণ দেওয়া হয়েছে তা কেবল ধৈর্যের কারণেই দেওয়া হয়েছে।’ হাসান (রহ.) বলেন, ‘ধৈর্য প্রভূত কল্যাণের চাবিকাঠি। কেবল মহৎ ও মহানুভব ব্যক্তির হাতেই আল্লাহ এই চাবিগুচ্ছ অর্পণ করেন।’ (আস-সবর ওয়াস সাওয়াব আলাইহি ১৬)

ধৈর্য সাফল্যের চাবিকাঠি : মানুষের ওপর আপতিত বিপদকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে মোকাবিলা করলে আল্লাহতায়ালা তাকে ওই কাজে সফলতা দান করেন। এ কারণে ধৈর্যকে যেকোনো সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করা হয়। পক্ষান্তরে অধৈর্য হয়ে পড়লে ওই কাজে সফল হওয়া যায় না। এজন্য আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতএব তুমি উত্তমরূপে ধৈর্যধারণ করো।’ (সুরা মাআরিজ ৫) তবেই সফলতার পথ খুঁজে পাবে, দুঃখ-যন্ত্রণার পথ থেকে পরিত্রাণ পাবে। তাই বিপদ-আপদে ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করতে চায়, আল্লাহতায়ালা তাকে ধৈর্যধারণ করার মতো শক্তি দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে অধিক প্রশস্ত ও কল্যাণকর সম্পদ আর কাউকে দান করা হয়নি।’ (সহিহ মুসলিম)

পৃথিবীতে যারা সুন্দর জীবন গড়েছে, তারা ধৈর্যের মাধ্যমেই তা করতে পেরেছে। অনেকে ধৈর্যের মাধ্যমে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরেও আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ধরনের ব্যক্তি যেমন দুঃসময়ে ধৈর্যধারণ করে, তেমনি সুসময় এলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। ধৈর্যধারণ করলে সুখ ও প্রশান্তি আসবেই। যেমনিভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ শিগগিরই কষ্টের পর স্বস্তি দেবেন।’ (সুরা তালাক ৭) এ আয়াতেও এটি স্পষ্ট যে, কষ্টের পর সুখ ও স্বস্তি আসবেই। কিন্তু কষ্টের সেই সময়টুকুতেই ধৈর্য ধরতে পারলেই সুখ অর্জন করা সম্ভব হবে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION