বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৩০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

নবীজি (সা.)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

মো. আবদুর রহমান:
নবীজি (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি মানবতার শ্রেষ্ঠ আদর্শ। তার চরিত্র ও আচার-আচরণ সব যুগের মানুষের জন্য অনুকরণীয়। তিনি ছিলেন বিনয়ী, সহনশীল ও ক্ষমাশীল। তায়েফবাসীরা তাকে পাথর ছুড়ে রক্তাক্ত করলেও তিনি তাদের অভিশাপ দেননি, বরং তাদের হেদায়াতের জন্য দোয়া করেছেন। তার আচরণে ছিল পরিপূর্ণ মানবতা ও কোমলতা। তিনি সবসময় দুঃখী, গরিব ও নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। কখনো কাউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন না। নারী, শিশু, ক্রীতদাসসহ সবার সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন স্নেহপূর্ণ ও দয়াশীল।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) মুচকি হাসতেন, অট্টহাসি কখনো দিতেন না। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) অধিকাংশ সময় মৃদু হাসতেন। জাবের (রা.) বলেন, আমি যখন তার দর্শন লাভ করতাম কখনো মনে হতো যেন তিনি চোখে সুরমা লাগিয়ে রেখেছেন। অথচ তিনি চোখে সুরমা লাগাননি। (শামায়েলে তিরমিজি) আবদুল্লাহ ইবনে হারেস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুল (সা.)-এর চেয়ে অধিক মৃদু হাসতে আর কাউকে দেখিনি। (শামায়েলে তিরমিজি) জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কখনো আমাকে তার মজলিসে প্রবেশ করতে বাধা দেননি। আর যখনই আমাকে দেখতেন তখনই হাসতেন। (শামায়েলে তিরমিজি)

আনাস (রা.) বলেন, আমি দীর্ঘ ১০ বছর দিন-রাত মুহাম্মদ (সা.)-এর খেদমত করেছি। এর মধ্যে আমি অনেক অন্যায় করেছি। কিন্তু তিনি কখনো আমাকে প্রহার করেননি, ধমক দেননি, কোনো দিন এ কথা বলেননি, এ কাজ তুমি কেন করেছ, আর এ কাজ তুমি কেন করোনি? (সহিহ বুখারি) আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, একজন মুমিন বান্দা সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রোজাদার ও নামাজি ব্যক্তির সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে।’ (সুনানে আবু দাউদ)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে যাদের চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর তারাই আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং তারাই কেয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে কাছে অবস্থান করবে। আর যারা অনর্থক ও বাজে কথা বলে, অশালীন মন্তব্য করে ও অহংকারে মত্ত থাকে, আমি তাদের সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি এবং কেয়ামতের দিন তারা আমার থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে অবস্থান করবে।’ (সুনানে তিরমিজি)

হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবতার নবী। তিনি ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে প্রবর্তন করেছিলেন মানবতার উজ্জ্বল নমুনা। তিনি ছিলেন সহানুভূতিশীল, ক্ষমাপ্রবণ এবং সুন্দর চরিত্র ও কোমল আচরণের একটি প্রবাহিত নদী। তিনি মন্দকে মন্দ দ্বারা প্রবাহিত করেননি বরং ক্ষমা করে দিতেন। ক্ষমা করা তার মহান চরিত্রের নীরব পরিচায়ক। তিনি প্রতিটি অপরাধ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। শত্রুরা অনেক আঘাত দিত, তবুও তিনি তাদের অপরাধ ক্ষমা করতেন।

মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য নবীজি ছিলেন উদার। জীবনের শুরু থেকে আত্মনিয়োগ করেন জনসেবায়। সবার সঙ্গে তিনি অঙ্গীকার রক্ষা করতেন। আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষায় তিনি খুবই যতœবান ছিলেন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও নমনীয় আচরণ করতেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবসময় এতিম ও বিধবাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ছিলেন। তিনি দরিদ্র ও অসহায়দের সেবা করতেন। এছাড়া তিনি অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবা শুশ্রƒষা করতেন। তার এ কাজ শুধু মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অসুস্থতায় তিনি এগিয়ে যেতেন। তাদের খোঁজখবর রাখতেন। তিনি বড়দের প্রতি পরম শ্রদ্ধাশীল ও ছোটদের প্রতি দয়ালু ছিলেন।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন দয়ার এক অমর প্রতীক। মানবতার এক জাগ্রত সৈনিক। তিনি ছিলেন দয়াপরবশ মহান মানব। নিপীড়িত মানুষের একমাত্র সঙ্গী। অসহায়দের আশ্রয়দাতা। সমাজে কোনো দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ দেখলে তিনি নিজেকে ভুলে তার সাহায্যে এগিয়ে যেতেন। এমনকি নিজ দুশমন বিপদে পড়লেও তিনি তার পাশে দাঁড়াতেন।

তার ধৈর্য ও সহনশীলতা ছিল প্রবাদতুল্য। জীবনে যত যাতনা সামনে আসুক, তিনি ছিলেন সুবিশাল পাহাড়ের মতো সুদৃঢ়। দুঃখ-দুর্দশায় তার চেহারায় ছিল না কোনো উৎকণ্ঠা বা মলিনতা। হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন পাহাড়সম বেদনা। তিনি কাফেরদের অসহনীয় নিপীড়নের পরও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল ধৈর্যের এক অমর কাব্য। তিনি কল্যাণের দিকে আহ্বান করলেও ইমান আনত না অনেকেই। তারপরও ধৈর্যপথে অবিচল

থাকতেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ধৈর্য ও সহনশীলতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি হয়তো এ দুঃখে নিজেকে নিঃশেষ করে দেবেন যে, তারা মুমিন হচ্ছে না।’ (সুরা শুআরা ৩)

তিনি ছিলেন সর্বাধিক দানশীল। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কখনোই এমন হয়নি যে, কেউ তার কাছে কিছু চেয়েছেন অথচ সে বা তারা খালি হাতে ফিরে গিয়েছেন বা রাসুল (সা.) অসম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।’ (সহিহ বুখারি) বস্তুত রাসুল (সা.)-এর কাছে কোনো কিছু চাওয়া হলে তিনি কখনো ‘না’ বলতেন না। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) সব মানুষের চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে যখন জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরও অধিক দান করতেন। রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করতেন এবং তারা একে অপরকে কোরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। জিবরাইল (আ.) যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন মুহাম্মদ (সা.) প্রবলবেগে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেশি দানশীল হয়ে যেতেন।’ (সহিহ বুখারি)

তিনি স্বভাবগতভাবে গম্ভীর প্রকৃতির এবং চুপচাপ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছিলেন। চেহারা কখনো মলিন রাখতেন না, মুখমণ্ডল বিমূঢ় ও খিটখিটে মেজাজের ছিলেন না। অর্থপূর্ণ বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন, যদিও আরবের সব ভাষাই তিনি জানতেন। তার প্রকাশভঙ্গি ছিল সুস্পষ্ট এবং অপ্রয়োজনে কথা বলতেন না। তিনি কখনো কঠোর, রূঢ় ও অশালীন ভাষায় কথা বলতেন না। তিনি এমন কথাই শুধু মুখে আনতেন যে কথায় সওয়াব লাভের আশা থাকত। তিনি সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর অর্থ বহনকারী কথা বলার শক্তি রাখতেন। তিনি যখন কথা বলতেন তখন মনে হতো যেন মুখ থেকে মুক্তা ঝরছে। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন সবাই মনোযোগ সহকারে তা শুনতেন।

তিনি ছিলেন সর্বাধিক কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও নিরহংকারী। তার হৃদয়ে কঠোরতা প্রবেশের কোনো পথ ছিল না। বিনয় ও নম্রতায় তিনি ছিলেন অতুলনীয়। আল্লাহর রাসুলের বিনয় ও নম্রতার কথা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ হয়েছে এভাবে, ‘আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছেন। আপনি যদি রূঢ় ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেত। সুতরাং আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ (সুরা আলে ইমরান ১৫৯) তিনি ছিলেন সর্বাধিক লাজুক

প্রকৃতির। লজ্জাশীলতা ও আত্মসম্মান এত প্রবল ছিল যে, দৃষ্টি সর্বদা নিচু করে রাখতেন। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন পর্দানশীন কুমারী মেয়ের চেয়েও অধিক লজ্জাশীল। কোনো কিছু তার পছন্দ না হলে চেহারা দেখে বোঝা যেত।’

(সহিহ বুখারি)/ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION