সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

যেমন ছিল সাহাবিদের নবীপ্রেম

মো. আবদুর রহমান:
নবীজি (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা মানেই আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা। নবীজি (সা.) ছিলেন মানবজাতির মুক্তির দিশারি, যিনি অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে সভ্যতার আলো এনে দিয়েছেন। তার আদর্শ, চরিত্র ও আখলাক শুধু তার যুগেই নয়, বরং কেয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি যুগের মানুষের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ। নবীজি (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সর্বোচ্চ নিদর্শন স্থাপন করেছিলেন সাহাবিরা। তারা শুধু মুখে নয়, বরং অন্তর দিয়ে, কর্ম ও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নবীজির প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের অনুপম উদাহরণ রেখে গেছেন।

সাহাবি শব্দটি আরবি ‘সুহবত’ শব্দ থেকে উদ্ভূত। এর একবচন ‘সাহিব’ ও ‘সাহাবি’। বহুবচন ‘আসহাব’ ও ‘সাহাবা’। আভিধানিক অর্থ সঙ্গী, সাথি, সহচর ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় সাহাবি শব্দটি দ্বারা শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গী-সাথিদের বোঝানো হয়। ইমাম ইবনে হাজার আসকালিন (রহ.) বলেন, ‘সাহাবি বলা হয় এমন ব্যক্তিকে, যিনি ইমানের সঙ্গে আল্লাহর রাসুলের সাক্ষাৎ পেয়েছেন এবং ইমানের সঙ্গেই মৃত্যুবরণ করেছেন।’ (আল-ইসাবা, ইবনে হাজার ১/১৫৮)

সাহাবিদের নবীপ্রেম ছিল গভীর, নিখাদ ও নিঃস্বার্থ। তারা নবীজি (সা.)-এর প্রতিটি কথা ও কর্মকে জীবনের শ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। রাসুল (সা.) তাদের যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা সেভাবেই জীবন পরিচালনা করেছেন। তারা মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবেসেছেন নিজের জান-মাল, পরিবার ও ধন-সম্পদের চেয়েও বেশি। সাহাবিদের এই ভালোবাসা ছিল এমন নিখুঁত যে, নবীজির একটি নির্দেশ পালনে তারা জীবন দিতে দ্বিধা করতেন না। তাদের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, ত্যাগ ও আনুগত্যের কারণেই আজ ইসলাম পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।

ইতিহাসের পাতায় সাহাবিদের এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে তারা নবীজির জন্য কতটা ভালোবাসা পোষণ করতেন। তাদের প্রতিটি কাজ ছিল রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের প্রতিচ্ছবি। এই ভালোবাসা কেবল আবেগ নয়, বরং ছিল ইমানের শক্ত ভিত, যে ইমানের বলে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হয়েছেন।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তিনি মানুষের আলোর দিশারী। মানুষের মুক্তি, শান্তি, শিক্ষা ও কল্যাণের জন্য তিনি আজীবন সাধনা করেছেন। তিনি সর্বগুণে গুণান্বিত একজন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। তার সাহাবিরা কাফেরদের প্রতি খুবই কঠোর এবং তাদের নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদায় অবনত দেখবেন। তাদের আলামত হচ্ছে তাদের চেহারায় সেজদার চিহ্ন থাকে।’ (সুরা ফাতহ ২৯)

মুমিন মাত্রই একবাক্যে স্বীকার করেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব। তারপর সাহাবিরা এই উম্মাহর শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাদের অন্তর ছিল পরিশুদ্ধ। ইলম ছিল সুগভীর। তাদের মাঝে কোনো কৃত্রিমতা ছিল না। উম্মাহর মধ্যে সাহাবিদের ইমান ছিল একদম পরিপূর্ণ, আমল ছিল সর্বাধিক সুন্দর। মহান আল্লাহর ইবাদতে তাদের সমকক্ষ কেউ ছিল না। এমনকি তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ক্ষেত্রেও অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। কোরআন-হাদিস বা শরিয়তের কোনো আমল বর্ণনার ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুলের সব সাহাবির মানদণ্ড একই। আল্লাহ ও তার রাসুলের আমানত রক্ষা করা এবং তা পরবর্তী উম্মাহর কাছে পৌঁছে দিতে তারা ছিলেন পূর্ণ সজাগ। মহান আল্লাহ তাদের মনোনীত করেছিলেন তার নবীর সাহচর্য ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য।

সাহাবিরা রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় প্রতিটি মুহূর্তে তার দেখানো পথে চলেছেন। মহান আল্লাহ ও তার রাসুলকে অনুসরণ করেছেন পূর্ণমাত্রায়। মহান আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তারাও মহান আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আমাদের কাছে ইসলামকে সঠিকভাবে তুলে ধরেছেন। তারা ইসলামের দাওয়াত ও সত্যের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছেন পৃথিবীর সবখানে।

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সাহাবিদের সম্পর্কে বলেন, ‘মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত করেছেন, যার তলদেশ দিয়ে বয়ে গেছে স্বচ্ছ পানির ধারা, যেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ হলো মহাসাফল্য।’ (সুরা তওবা ১০০)

এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমার সাহাবিদের গালাগালি করো না। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ ব্যয় করে, তবু তাদের কারোর (দানের) এক মুদ বা আধা মুদের সমানও হবে না।’ (সহিহ বুখারি ৩৬৭৩) মুদ একটি পরিমাপ পদ্ধতি। এক মুদ সমান ৬৭৫ গ্রাম।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রাসুলের সাহাবিদের গালাগালি করো না, তাদের এক মুহূর্তের সৎকাজ তোমাদের সারা জীবনের সৎকাজের চেয়ে উত্তম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ ১৬২) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার সাহাবিদের গালাগালি করে, তার ওপর আল্লাহর লানত।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)

সাহাবিরা পেয়েছেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনন্য সাহচর্য। এর মাধ্যমে তারা বিশ্বমানবতার জন্য অনুসরণযোগ্য হয়েছেন। সাহাবিদের মনে ছিল মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা। তিনি তাদের যখন যে বিষয়ে আদেশ-নিষেধ করেছেন সঙ্গে সঙ্গে তারা সে বিষয়ে আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। তারা অনুসরণ করেছেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতিটি কথা, কাজ ও আদেশ-নিষেধের। তার আনুগত্য প্রকাশে বিন্দুমাত্র কমতি করেননি সাহাবিরা। তারা মুহাম্মদ (সা.)-কে নিজ মা-বাবা, সন্তানসন্ততি এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন এবং মুহাম্মদ (সা.)-ও তাদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন। তাদের পুরো জীবনই ছিল নবীপ্রেমের প্রতিচ্ছবি। ইবাদত-বন্দেগি, লেনদেন, চলাফেরা, আখলাক-চরিত্র থেকে শুরু করে জীবনের সর্বত্রই ছড়িয়েছিল তার সুন্নতের জ্যোতি। নবীপ্রেম তাদের জীবনকে করেছিল জ্যোর্তিময়।

নবীপ্রেমের যে দৃষ্টান্ত সাহাবিরা স্থাপন করে গেছেন, মানব ইতিহাসে সে রকম দৃষ্টান্ত আর নেই। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি সাহাবায়ে কেরামের ভালোবাসার ঘটনাবলি হাদিস, সিরাত ও ইতিহাসের কিতাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সুতরাং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সাহাবায়ে কেরামের মতো ভালোবেসে আমরাও হতে পারি সৌভাগ্যশালী আলোকিত মানুষ। মহান আল্লাহ হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবেসে তার আদর্শকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার তওফিক দান করুন।

ভযেস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION