মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ০২:২৫ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন – পিসিএ) ভারতকে নির্দেশ দিয়েছে সিন্ধু নদের পানি বণ্টন চুক্তির ওপর আরোপিত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার। গত ৮ আগস্ট এই রায় ঘোষণা করে আদালত। আদালত জানিয়েছে, চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যবিহীন কোনো স্থাপনা, যেমন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বাঁধ বা অন্য কোনও নির্মাণ, সিন্ধু নদ কিংবা এর অববাহিকায় স্থাপন করা যাবে না।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৫ ভারতীয় ও একজন নেপালি নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট এই হামলার দায় স্বীকার করে।
আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে এনসিপির সেই নেতা বহিষ্কারআর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে এনসিপির সেই নেতা বহিষ্কার
হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। এর ফলে পাকিস্তানের তিনটি নদী—সিন্ধু, চেনাব ও ঝিলাম—এর পানি প্রবাহ কমে যায়, যা দেশটির কৃষিক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি তৈরি করে।
ভারত এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে। ৮ আগস্ট পিসিএ ভারতের বিরুদ্ধে রায় দেয়।
আদালত রায়ে উল্লেখ করেছে, ‘সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তির মূল শর্ত অনুসারে, সিন্ধু অববাহিকার পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদীতে (যেগুলো পাকিস্তানের অংশ) ভারতের কোনো বাধা না দেওয়ার কথা।’ পিসিএ ভারতকে এই শর্ত অনুযায়ী ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
চুক্তি স্থগিতের পর ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীর ভারতীয় অংশে বাঁধ নির্মাণ হবে। তবে আদালত জানিয়েছে, ‘যদি ভারতের পক্ষ থেকে নদীতে বাঁধ নির্মাণ হয়, তা অবশ্যই চুক্তির শর্তানুযায়ী এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।’
আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের রায়ের পর ভারত এখনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে পাকিস্তান স্বাভাবিকভাবেই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। গত সোমবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আদালতের রায় আমাদের পক্ষে এবং এটি সিন্ধু নদে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করে। এছাড়া বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে চুক্তির শর্ত অনুসরণ করার নির্দেশও গুরুত্বপূর্ণ।’
সিন্ধু পানি চুক্তি কী?
ভারতের উজান থেকে পাকিস্তানের সিন্ধু অববাহিকায় প্রবাহিত নদীগুলোর পানি ব্যবহার নিয়ে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর বিরোধ বহু বছর ধরে রয়েছে।
১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর পানি দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া হয়।
সিন্ধু অববাহিকার পূর্বাঞ্চলের তিনটি নদী—ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রু—ভারত ব্যবহার করতে পারে, আর পশ্চিমাঞ্চলের তিন নদী—সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব—এর অধিকাংশ পানি পাকিস্তানের জন্য সংরক্ষিত।
মাইলস্টোন ট্রাজেডি: সুষ্ঠ তদন্তের দাবিতে নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মানববন্ধনমাইলস্টোন ট্রাজেডি: সুষ্ঠ তদন্তের দাবিতে নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মানববন্ধন
চুক্তিতে একতরফাভাবে স্থগিত বা বাতিল করার সুযোগ নেই এবং বিরোধ নিষ্পত্তির স্পষ্ট নিয়ম রয়েছে।
সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীগুলো পাকিস্তানের কৃষি, শহর ও জ্বালানি ব্যবস্থার প্রাণশক্তি। এই নদীগুলোর পানি ছাড়া পাকিস্তানের জন্য বিকল্প নেই। বিশ্বের বৃহত্তম সেচ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোর পানি প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল।
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, আনাদোলু এজেন্সি
ভয়েস/আআ