রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ১০:২৫ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

কোরআনের বর্ণনায় সফল যারা

খালিদ হাসান বিন শহীদ:
কোরআন নির্দেশিত পথ ও পদ্ধতির অনুসরণ যারা করতে পেরেছে তাদের জন্যই রয়েছে ইহকাল ও পরকালে মহাসাফল্য। মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা, বিশ্বাস ও কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক সৎকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমেই মানুষ সফলতার সোপান বেয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে তথা জান্নাতে পৌঁছতে পারে। যারা ইমান আনে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তাদের জন্য আল্লাহতায়ালা রেখেছেন জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত। যেখানে রয়েছে সবুজে ঘেরা উদ্যান, চাকচিক্যময় স্বর্ণখচিত সিংহাসন, বসবাসের সুউচ্চ প্রাসাদ। সেই সঙ্গে মহা পুরস্কার ও মর্যাদায় ভূষিত হবেন তারা। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে ইমানদার বান্দা ও সৎকর্মশীলদের জন্য এমন জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নির্মল ঝর্ণাধারা।

একজন মুমিনের কাছে অঢেল সম্পদের মালিক বা ক্ষমতার মসনদে সমাসীন হওয়ার নাম সফলতা নয়। বরং পরকালীন সফলতাই প্রকৃত সফলতা। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করা হলো এবং জান্নাতে প্রবেশে করা হলো, অবশ্যই সে ব্যি ক্ত সফলকাম হলো।’ (সুরা আলে ইমরান ১৮৫) পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মুমিনদের সফল ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘অবশ্যই মুমিনরা সফল হয়েছে।’ (সুরা মুমিনুন ১) মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সফলকাম মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে বিবরণী উল্লেখ করা হলো।

সৎকর্মপরায়নশীল : আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং সেই অনুযায়ী সৎকর্ম করা সফলতার প্রথম সোপান। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যারা অদৃশ্যের প্রতি ইমান আনে, নামাজ আদায় করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ইমান আনে তাতে, যা আপনার প্রতি নাজিল করা হয়েছে এবং যা আপনার আগে নাজিল করা হয়েছে। আর আখেরাতের প্রতি তারা পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা বাকারা ৩-৫) সৎকাজের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। এটাই মহা সাফল্য। (সুরা বুরুজ ১১-১২)

নামাজ প্রতিষ্ঠা ও আখেরাতে বিশ্বাস : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত, সৎকর্মশীলদের জন্য হেদায়েত ও রহমতস্বরূপ, যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং জাকাত দেয়, আর তারাই আখেরাতে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে, তারাই তাদের রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের ওপর এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা লুকমান ২-৫)

ধৈর্যধারণ করা: ধৈর্যের বিনিময়ে জান্নাতের কথা কোরআন মাজিদের বেশ কয়েকটি আয়াতে এসেছে। মূলত ধৈর্যের বড় একটি প্রকার হলো, ইবাদত-বন্দেগি যথাযথভাবে আদায় করার ক্ষেত্রে ধৈর্য। আরেক প্রকার হলো, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে ধৈর্য। ধৈর্যের তৃতীয় প্রকার হলো, বিপদাপদে ধৈর্য। মোটকথা আল্লাহতায়ালার নির্দেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকার জন্য ধৈর্যের গুণটি অপরিহার্য। ধৈর্য সম্পর্কে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে যা কিছু আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে, আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা স্থায়ী। যারা সবর করে আমি তাদের উৎকৃষ্ট কাজ অনুযায়ী অবশ্যই তাদের প্রতিদান দেব।’ (সুরা নাহল ৯৬) কিয়ামত দিবসের বিবরণ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা যে সবর করেছিল সে কারণে আজ আমি তাদের এমন প্রতিদান দিলাম যে, তারা সফল হয়ে গেল।’ (সুরা মুমিনুন ১১১)

সত্যের পথে অবিচল থাকা : যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণ করা এবং সত্যের পথে অবিচল থাকা সফলতার জন্য অপরিহার্য। কোরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! ধৈর্যধারণ করো, দৃঢ়তা প্রদর্শন করো, নিজেদের প্রতিরক্ষাকল্পে পারস্পরিক বন্ধন মজবুত করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা আলে ইমরান ২০০)

আত্মশুদ্ধি অর্জন : আল্লাহর ওই সমস্ত বান্দাই সফল ও কামিয়াব হবে, যারা নিজের অন্তরকে মন্দ চরিত্র ও শিরক থেকে পবিত্র করে আত্মশুদ্ধি অর্জন করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে।’ (সুরা আলা ১৪)

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ : সমাজের কোথাও অন্যায়-অপকর্ম হতে দেখলে অকারণে চুপ থাকা কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। যথাসাধ্য সৎকাজের আদেশ দেওয়াও একজন মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব। এ ব্যাপারে শরিয়তে যথেষ্ট গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের (কল্যাণের) জন্য তোমাদের বের হয়েছে, তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে, অসৎকাজে বাধা প্রদান করবে এবং আল্লাহর প্রতি ইমান রাখবে। (সুরা আলে ইমরান ১১০) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে বাধা প্রদান করবে। আর তারাই হবে সফলকাম। (সুরা আলে ইমরান ১০৪)

আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য : মহান আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করা, তাদের দেখানো পথে জীবন পরিচালনা করা সফলতার পূর্বশর্ত। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। তারা তাতে থাকবে চিরদিন। আর এটাই মহা সফলতা। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্যতা করবে এবং তার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে প্রবেশ করাবেন জাহান্নামে, যাতে সে সর্বদা থাকবে এবং তার জন্য থাকবে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।’ (সুরা নিসা ১৩-১৪) ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, তারা অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।’ (সুরা আহজাব ৭১)

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION