সোমবার, ৩০ Jun ২০২৫, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

মানুষকে তিনি বানিয়েছেন সুন্দরতম অবয়বে

মোঃ মিকেইল আহমেদ
প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজকে ভালোবেসে সম্রাট শাহজাহান বানিয়েছিলেন অাগ্রার তাজমহল, নবী ইউসুফ (অা.) এর রূপে মুগ্ধ ছিলেন জোলেখা ও মিশরের নারীগণ। নবী ইউসুফ (অা.) এর রূপমাধুর্য্য এমনই ছিলো যে মিশরের নারীরা নিজেদের হাত কেটে রক্ত ঝরালেও নাকি টের পেতেন না! অামাদের প্রিয়নবী করীম (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও সুন্দর। যাঁহার প্রেমে পাগল ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। রাসূল (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ঘাম মোবারক কে সুগন্ধি অাতর হিসেবে ব্যবহার করতেন তারা।
নারী অার পুরুষ। বিধাতার অপূর্ব সৃষ্টি যুগল। পুরুষের পাপ-তাপ, অবজ্ঞা-অবহেলা, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা  একদিকে যেমন নারীকে পোড়ায় অন্যদিকে নারীর প্রেম, নারীর বিরহ যাতনা পুরুষকে ভাবায়। জোছনা ছাড়া চাঁদের যেমন মূল্য, ঢেউ ছাড়া নদীর যে রূপ, জোয়ারভাটা বিহীন সমুদ্রের যে সৌন্দর্য্য ঠিক তেমনি প্রেম-ভালোবাসা-বিরহ ব্যাতীত জীবন একেঘেঁয়ে। কবি নজরুলের ভাষায় নারী তার হৃদয়ের অর্ধেকও দান করেছে নিষ্ঠুর হৃদয়হীন পুরুষের ভেতরে স্নেহপ্রেম-মায়ামমতা জাগ্রত করার জন্য !
“পুরুষ হৃদয়হীন মানুষ করিতে নারী দিল তারে আধেক হৃদয় ঋণ।“
এই নারীকে পুরষ যতদিন অবহেলা করবে, পীড়ন আর লাঞ্ছনায় অপমানিত করবে, বঞ্চিত করবে ততদিন সমাজের উন্নতি নেই। আত্মমুক্তি নেই পুরুষেরও। তাইতো কবি শোনালেন এক চিরন্তন বাণী
“নর যদি রাখে নারীরে বন্দী তবে এর পর যুগে
আপনারি রচা কারাগারে ঐ পুরুষ মরিবে ভুগে।”
নারী-পুরুষের মধ্যে এই প্রেম-বিরহ-অাবেগ-অনুভূতি যিনি সঞ্চার করেছেন তাঁর সম্পর্কে একটু ভাবার দরকার নেই অামাদের? কত বড় কারিগর তিনি। রহমানের অনুপম সৃষ্টি নারীর সৌন্দর্য্য বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক কবিই অবাক হয়ে যান। নিজের চোখকেও বিশ্বাস হয়না মাঝে মাঝে। নারীর মধ্যেও কবিরা অলৌকিক শক্তির আঁধারের সন্ধান করেন। ঠিক তেমনই ঘটেছিলো কবি অাল মাহমুদের বেলায়ও। কবি অদৃশ্যের ছায়া দেখেন সামান্য দরিদ্র ও সৎ স্বভাবের একজন লায়লার ভেতর। বার বার তার কাছে কেন আসেন লায়লা? তাই কবি তাকে জর্জরিত করেন প্রশ্নবাণে।
লায়লা তুমি কি জিনদের মেয়ে? রহস্যময়ী অশরীরী
অতৃপ্তির ছায়া কি তুমি? না কি জ্যোতির্ময়ী পরমধ্যানে আপ্লুতা
(মিথ্যাবাদী রাখাল : এক লায়লার কাহিনী)
আনন্দ-বেদনার পৃথিবী গড়তে নারী-পুরুষের অবদানকে সমান চোখে দেখেছেন কবি নজরুল। পুরুষ যেন নতুন করে সৃষ্টি হয় নারীর বিরহ দহনে জ্বলে-পুড়ে। আবার পুরুষ লাভ করে নবজন্ম নারীর প্রেম-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে।এটাই জগতের নিয়ম। তাইতো কবির উক্তি :
 ‘নারীর বিরহে নারীর মিলনে নর পেলো কবি প্রাণ/ যত কথা তার হইল কবিতা শব্দ হইল গান।’
নারী-পুরুষের প্রেম ভালোবাসা, বিরহ যাতনা এমনই একজীবন ভালোবেসেও অনেকের স্বাদ মিটে না। কবির ভাষায়: ‘জীবন এত ছোট কেনে’। ভালোবেসে মিটল না আশ কুলাল না এ জীবনে। এ ভুবনে?’ (তারাশঙ্করের ‘কবি’ উপন্যাস)
লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদের প্রেম ভালোবাসার কাহিনী তো সবার জানা। কেউ কেউ প্রিয়জনকে ভালোবেসে, রূপ সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে অাসমানের চাঁদ এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন কখনো কখনো। যদিও অাজ অবধি কেউ অাসমানের চাঁদ এনে দিতে পেরেছেন বলে শোনা যায়নি। মানবী প্রিয়ার এমনই রূপ যার দিকে তাকালে চোখের পলক ফেলার অাগেই কয়েক বসন্ত নাকি চলে যায়। এত এত রহস্যের পেছনের কারিগর যিনি, সেই নিপুণ শিল্পী, যার শিল্পের যাদুতে মুগ্ধ কতশত কবি, ঔপন্যাসিক, রাজা, বাদশাহ, ফকীর, পেরিয়ে গেছে শত সহস্র অারব্য রজনী অথচ মানব রহস্যের কোন শেষ নেই, তাঁর সৃষ্টিরহস্য জানার জন্য কতটি বসন্ত ব্যয় করেছি অামরা?
অাল্লাহ তাঅালা পৃথিবীতে প্রথম মানব আদম (আঃ) মাটি থেকে এবং প্রথম মানবী হাওয়া (আঃ) আদমের পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন। এতদ্ব্যতীত সকল মানব-মানবী অদ্যাবধি সৃষ্টি হয়ে চলেছে এক ফোঁটা অপবিত্র তরল পদার্থ (বীর্য) থেকে । এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ কুরঅানে বলেন, ‘অতঃপর আমরা তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, জমাট বাঁধা রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণ আকৃতি ও অপূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট গোশতপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমরা নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর শিশু অবস্থায় বের করি’ (সূরা হজ্জ্ব ২২/৫)। সেইথেকে এভাবে আজও অব্যাহত আছে মানব বংশবিস্তার  বিবাহ-বন্ধন ও স্বামী-স্ত্রীর মিলন ব্যবস্থার মাধ্যমে। যাতে করে সফল হয় মহান আল্লাহর মহৎ উদ্দেশ্য ।
মহান আল্লাহ কি বস্তু থেকে আদি মানব সৃষ্টি করেছেন তা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, ‘কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা (সাজদাহ ৩২/৭), আমি মানবকে পঁচা কাদা থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি (হিজর ১৫/২৬), এঁটেল মাটি (ছাফ্ফাত ৩৭/১১), পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি’ (আর-রহমান ৫৫/১৪)। আল্লাহ তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫) এবং তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন (ছোয়াদ ৩৮/৭২) আদম একাই শুধুমাত্র মাটি থেকে সৃষ্টি। বাকী সবাই পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্ট’ (সাজদাহ ৩২/৭-৯)।
মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছেন হযরত আদম (আঃ) কে। কিন্তু মা হাওয়া (আঃ) কি দিয়ে সৃষ্টি সে সম্পর্কে মহাগ্রন্থ পবিত্র অাল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর তিনি তার (আদম) থেকে তার যুগল (হাওয়াকে) সৃষ্টি করেছেন’ (যুমার ৩৯/৬)। তিনি আরও বলেন, ‘তিনি তার (আদম) থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত নারী-পুরুষ’ (নিসা ৪/১)। অন্যত্র বলেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীকে, তোমাদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন’ (রূম ৩০/২১)।
হযরত আদম (আঃ)-এর পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে মহান আল্লাহ মা হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন, ‘নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে একেবারে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। যদি তা সোজা করতে যাও, ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তা ছেড়ে দাও, তবে সব সময় বাকাই থাকবে। সুতরাং তোমরা নারীদের সাথে উত্তম ও উপদেশমূলক কথাবার্তা বলবে’। (বুখারী হা/৩০৮৫; ‘কিতাবুল আম্বিয়া’; রিয়াযুছ্ ছলেহীন হা/২৭৩; মুত্তাফাক্ব আলাইহ্, মিশকাত হা/৩২৩৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়)
গর্ভে সন্তান গঠনের গূঢ় রহস্য কি:
গর্ভে সন্তান গঠনের চক্র সাধারণতঃ দীর্ঘ ২৮০ দিন যাবৎ চলতে থাকে। যা ৪০ দিন অন্তর সুনির্দিষ্ট ৭ টি চক্রে বিভক্ত। নারী-পুরুষের যৌন মিলনের সময় নারীর ডিম্বনালীর ফানেলের মত অংশে ডিম্বাণু নেমে আসে এবং ঐ সময় পুরুষের নিক্ষিপ্ত বীর্যের শুক্রাণু জরায়ু বেয়ে উপরে উঠে আসে ও তা ডিম্বনালীতে প্রবেশ করে। প্রথমে একটি শক্তিশালী শুক্রাণু ডিম্বাণুটির দেহে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে অন্য কোন শুক্রাণু প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে নারীর ডিম্বাণুটি নিষিক্ত (Fertilization) হয় এবং নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুতে নেমে প্রোথিত (Embedded) হয়। (গাইনিকলজি শিক্ষা, পৃঃ ২২)
তাছাড়া নারীর ডিম্বাণুর বহিরাবরণে প্রচুর সিয়ালাইল-লুইস-এক্সসিকোয়েন্স্ নামের চিনির অণুর আঠালো শিকল শুক্রাণুকে যুক্ত করে পরস্পর মিলিত হয়। (মাসিক আত-তাহরীক, ১৫তম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, অক্টোবর ২০১১, বিজ্ঞান ও বিস্ময়, পৃঃ ৪৩)
আর এই শুক্রাণু দেখতে ঠিক মাথা মোটা ঝুলে থাকা জোঁকের মত। জোঁক যেমন মানুষের রক্ত চুষে খায়, শুক্রাণু ঠিক তেমনি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করে মায়ের রক্তে থাকা প্রোটিন চুষে বেড়ে উঠে। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি সন্তান জন্মের রূপ নিলে সাধারণতঃ নিম্নে ২১০ দিন ও উর্ধ্বে ২৮০ দিন জরায়ুতে অবস্থান করে এবং ঐ সময়ের মধ্যে ডিম্বাশয়ে নতুন করে আর কোন ডিম্বাণু প্রস্ত্তত হয় না।(গাইনিকলজি শিক্ষা, পৃঃ ১৫)
‘আমরা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে (জরায়ুতে) স্থাপন করেছি। এরপর শুক্র বিন্দুকে জমাট রক্ত রূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে গোশতপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর গোশতপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করেছি’ (মুমিন ২৩/১২-১৪)। তিনি আরো বলেন, ‘এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত, অতঃপর আমরা একে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, আমরা কত সুনিপুন স্রষ্টা’ (মুরসালাত ৭৭/২২-২৩)। ‘অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন এবং তাতে রূহ সঞ্চার করেন’ (সাজদাহ ৩২/৯)।
এখানে মানব সৃষ্টির ৭টি স্তর উল্লেখ করা হয়েছে। স্তরগুলো হ’ল মাটির সারাংশ, বীর্য, জমাট রক্ত, গোশতপিন্ড, অস্থি পিঞ্জর, অস্থিতে গোশত দ্বারা আবৃতকরণ ও সৃষ্টির পূর্ণত্ব অর্থাৎ রূহ সঞ্চারণ। (তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন, পৃঃ ৯১৪)
মাতৃগর্ভে মানব শিশু জন্মের স্তর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) এভাবে বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান আপন মাতৃগর্ভে বীর্যের আকারে ৪০ দিন, জমাট বাধা রক্তে পরিণত হয়ে ৪০ দিন, গোশত আকারে ৪০ দিন। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে পাঠান এবং চারটি বিষয়ে আদেশ দেন যে, তার (শিশুর) আমল, রিযিক্ব, আয়ুষ্কাল ও ভালো না মন্দ সব লিপিবদ্ধ কর। অতঃপর তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়’। (বুখারী হা/২৯৬৮, ৩০৮৬; মুত্তাফাক্ব আলাইহ্, মিশকাত, হা/৮৬)
অন্যত্র এক হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করেন। ফেরেশতা বলেন, হে রব! এখনো তো ভ্রূণ মাত্র। হে রব! এখন জমাট বাঁধা রক্তপিন্ডে পরিণত হয়েছে। হে রব! এবার গোশতের টুকরায় পরিণত হয়েছে। আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান, তখন ফেরেশতাটি বলেন, হে আমার রব! (সন্তানটি) ছেলে না মেয়ে হবে, পাপী না নেক্কার, রিযিক্ব কি পরিমাণ ও আয়ুষ্কাল কত হবে? অতএব এভাবে তার তাক্বদীর মাতৃগর্ভে লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়’। (বুখারী, হা/৩০৮৭ ‘কিতাবুল আম্বিয়া’)
নারী ও পুরুষের বীর্যের সংমিশ্রণ ঘুরতে থাকে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এর চতুর্দিকে একটি আবরণের সৃষ্টি হয়। যাতে করে ভ্রূণটি ধ্বংস হ’তে না পারে। এরপর আস্তে আস্তে এক বিন্দু রক্তকণায় পরিণত হয় এবং সেই রক্তকণা গোশতপিন্ডে ও অস্থিমজ্জায় পরিণত হয়, এভাবেই সৃষ্টি হয় মানব শিশু। (মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, বিজ্ঞান না কুরআন, পৃঃ ১০৯-১১০)
মাতৃগর্ভে শিশুকে সংরক্ষণের জন্য মাতৃজঠরের তিনটি পর্দা বা স্তরের কথা কুরআনে বলা হয়েছে। যথা- পেট বা গর্ভ, রেহেম বা জরায়ু এবং ভ্রূণের আবরণ বা ভ্রূণের ঝিল্লি গর্ভফুল (Placenta)। (বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান, পৃঃ ২৭৭, ১নং টীকা দ্রষ্টব্য)
মহান আল্লাহ তাঅালা এই তিন স্তর সম্পর্কে বলেন, ‘তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে’ (যুমার ৩৯/৬)। পবিত্র কুরআনে যে, ‘ত্রিবিধ অন্ধকারের’ কথা বলা হয়েছে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে এই তিনটি অন্ধকার হ’ল- ১. রেহেম, ২. মাশীমা বা গর্ভফুল এবং ৩. মায়ের পেট। ( তাফসীর ইবনে কাছীর, উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
রেহেমে রক্তপিন্ড ব্যতীত সন্তানের আকার-আকৃতি কিছুই তৈরী হয় না। আর গর্ভফুল (Placenta) ভ্রূণ বৃদ্ধি, সংরক্ষণ, প্রতিরোধ ইত্যাদি কাজে অন্যতম ভূমিকা রাখে। গর্ভফুল মায়ের শরীর থেকে রক্তের মাধ্যমে নানা পুষ্টি ভ্রূণের দেহে বহন করে, খুব ধীর গতিতে রেচন পদার্থ মায়ের দেহের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। গর্ভফুলের সাহায্যে ভ্রূণ অক্সিজেন (O2) গ্রহণ ও কার্বনডাই অক্সাইড (CO2) ত্যাগ করে মায়ের ফুসফুসের মাধ্যমে, জীবাণু (Infection) থেকে ভ্রূণকে রক্ষা করে। এছাড়া ভ্রূণটি ঠিকমত জরায়ুতে আটকে রাখা, পুষ্টি সঞ্চয়, সম্পর্ক রক্ষা, হরমোন সৃষ্টি ইত্যাদি কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখে। (গাইনিকলজি শিক্ষা, পৃঃ ৮)
এভাবে ভ্রূণটি জরায়ুতে বেড়ে উঠতে থাকে ও ১২০ দিন অতিবাহিত হ’লে শিশুর রূহ ফুঁকে দেয়া হয়। আর শিশু নড়েচড়ে উঠে ও আঙ্গুল চুষতে থাকে। (নবীদের কাহিনী, ১/২৫ পৃঃ) এবং পূর্ণ-পরিণত হওয়ার পরে সেখান থেকে বাইরে ঠেলে দেওয়া হয় (আবাসা ৮০/১৮-২০)। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘ঠেলে দেয়া হয়’। অতএব ২১০ দিন পর একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হবার উপযুক্ত হয়।
পুত্র-কন্যা সন্তান সৃষ্টির রহস্য বিষয়ে যা জানা জরুরি:
নারীর গর্ভ সঞ্চার হওয়ার পর ২৮০ দিনের মধ্যে ১২০ দিন অতিবাহিত হ’লে পুত্র না কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে কুরঅানে বলেন-ٌ ‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদের পুত্র-কন্যা উভয় দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল’ (শূরা ৪২/৪৯-৫০)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম) এ বিষয়ে বলেছেন, ‘পুরুষের বীর্য স্ত্রীর বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করলে পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। আবার স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করলে কন্যা সন্তান জন্ম নেয়’। (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩)
সুনিপুন করে সুন্দর আকৃতিতে মনোরম কাঠামোতে মহান আল্লাহ তা‘আলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। নতুন নতুন গবেষণা করে আধুনিক বিজ্ঞানীরা আল্লাহর সৃষ্টির গূঢ় রহস্য উদঘাটন করে চলেছে। মহান আল্লাহ কুরঅানে বলেন, ‘হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা গবেষণা ও শিক্ষা গ্রহণ কর’ (হাশর ৫৯/২)। যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা অতীব বিস্ময়কর মনে করেছেন মানুষ সৃষ্টির চেয়ে মহাকাশ সৃষ্টিকে এবং দিন দিন নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কারে বিস্মিত হয়েছেন। মহান আল্লাহ এ সম্পর্কে বলেন, ‘মানুষ সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা উপলব্ধি করে না’ (মুমিন ৪০/৫৭)
পৃথিবীর জীব কোষের মূল উপাদান পানি। তেমনি এই পানিই মাটির উৎপাদন ক্ষমতা লাভের প্রধান উপাদান। মহান আল্লাহ এই ধরণীতে মাটি থেকে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করেন। তারপর তা থেকে ক্রমশঃ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই মানব জাতি। মহান অাল্লাহ বলেন, ‘হে মানবমন্ডলী! আমরা তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদেরকে বিভিন্ন বংশ ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পরে পরিচিতি লাভ করতে পার’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)।
ভয়েস/ জেইউ।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION